ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে আলোচনায় শৈলজারঞ্জনের জন্মদিন উদ্যাপন

প্রকাশিত: ১১:০২, ২১ জুলাই ২০১৯

  গানে আলোচনায় শৈলজারঞ্জনের  জন্মদিন উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছেন শৈলজারঞ্জন মজুমদারের নামটি। বিশ্বকবির গানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত এই আচার্য সঙ্গীতগুরু। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপিকার ও কবিগুরুর একান্ত সহচর। শনিবার ছিল এই সঙ্গীতগুণীর ১১৯তম জন্মদিন। ভিন্নভাবে উদ্্যাপিত হলো সেই জন্মদিনটি। পঠিত হলো তাঁকে নিবেদিত সঙ্গীতজ্ঞ অধ্যাপক সন্্জীদা খাতুনের প্রবন্ধ ‘গীতাম্বুধি শৈলজারঞ্জন’। এস বি বিপ্লব নির্মিত ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের প্রাক মুক্তির অনুষ্ঠানে প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়। শুধু কি তাই? রবীন্দ্রনাথ ও শৈলজারঞ্জনের মধ্যে ছয়টি চিঠির আদান-প্রদান হয়েছিল। সেই চিঠিগুলো পঠিত হয় এ আয়োজনে। পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন চয়নিকা। সন্্জীদা খাতুনের প্রবন্ধের সূত্র ধরে দারুণভাবে জানা যায়, সঙ্গীতগুরু শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে। সুমনা বিশ্বাস পঠিত দীর্ঘ প্রবন্ধের কিছুটা ভাষ্য ছিল এরকমÑ ১৯৫৪ সালের শেষ দিকে লেখাপড়া করবার জন্য শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। শুধু বাংলা পড়া, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনকে কাছ থেকে দেখবার স্বপ্নও ছিল দুর্বার। সেই সঙ্গে ‘তাঁর’ গান শেখা। গান শিখবার আশায় শৈলজারঞ্জন মজুমদারের দ্বারস্থ হলাম। চিড়ে ভিজল না কিন্তু। অধ্যক্ষ মশাই বড়ই কড়া প্রশাসক। এম এ ক্লাসের ছাত্রী বলে বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর অনুমতি আর সুপারিশ নিয়ে যেতে বললেন। তাতেও সঙ্গীতভবনের উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে গান শিখবার হুকুম মিলল না। আদেশ হলো, বুধবারের মন্দিরে গাইবার জন্য সঙ্গীত ভবনের যে ক্লাস হয়, তাতে বসতে পারি শুধু। অগত্যা সেই ক্লাসেই গেলাম। অধ্যক্ষ নিজেই শেখাচ্ছিলেন ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’। জানা গান। কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণের জন্য এ¯্রা জের ছড় দিয়ে মাটিতে আঘাত করে গেয়ে গেয়ে প্রতিটি মাত্রার ঝোঁক এমন করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন যে, গভীরভাবে তার ছাপ পড়ে গেল মনে। গোল গোল করে লেপেপুঁছে উচ্চারণ করে গান আর গাইতে পারব না কোনদিন। ছন্দেও বোধ এমনি করে গেঁথে দিলেন মনে। উপস্থিত সবাইকে রাখি পরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড, বিশ্বজিৎ সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. ইনামুল হক, শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ভবনের অধ্যাপক ড. সুমিত বসু, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফি আহমেদ, নাট্যজন এস এম মহসীন, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের গড়া নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান খানসহ অনেকে। শিল্পিত উচ্চারণে পঠিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শৈলজারঞ্জন মজুমদারের মধ্যে আদান-প্রদানকৃত নির্বাচিত ছয়টি চিঠি। এগুলো পাঠ করেন শংকর সাঁওজাল, আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী, বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী ও ভারতের শিল্পী পুষ্পা বসু। রবীন্দ্র সুরের ছোঁয়ায় আয়োজনটি হয়ে ওঠে আরও বেশি হৃদয়গ্রাহী। এ পর্বে একক কণ্ঠে গান শোনান ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সাজিদ আকবর, বাঁশরী দত্ত, ছায়া কর্মকার, শুক্লা রায়, মেহনাজ করিম হোসেন, নাসরিন আক্তার, রিফাত জামাল মিতু ও ভারতের শিল্পী মানসী ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তামান্না মৌ। নির্মাণের পাশাপাশি ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ প্রামাণ্যচিত্রটির গবেষণা, পা-ুলিপি ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন এস বি বিপ্লব। আগামী নবেম্বরে নির্মাণাধীন তথ্যচিত্রটি মুক্তি পাবে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের দ্বি-ভাষিক এ্যালবাম ॥ বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ ইংরেজীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন। সুরারোপ করেছেন। একই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের গান নিয়ে হাজির হয়েছেন দুই গুণী শিল্পী স্বপন দত্ত ও আনন্দময়ী মজুমদার। প্রথমবারের মতো দ্বি-ভাষিক ভাষায় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হলো তাঁদের অডিও এ্যালবাম। ‘পূর্ব-পশ্চিমে রবি’ শীর্ষক এ এ্যালবামের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শনিবার। বাংলা ও ইংরেজী ভাষাভাষি মানুষের কাছে কবিগুরুর সুর ও বাণীর সৌন্দর্য তুলে ধরতে এ এ্যালবাম প্রকাশ করেছে সতত লিমিটেড। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে দ্বি-ভাষিক এ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী স্বপন দত্ত ও আনন্দময়ী মজুমদারের সঙ্গীত সন্ধ্যা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে পরিবেশনায় অংশ নেন ভারতের শিল্পী সুতপা ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিল্পীদ্বয়ের বিপুল প্রশংসা করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সুরকার সুজেয় শ্যাম। তাঁরা এ প্রকাশনাকে যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ হিসেবে অবহিত করেন। মনমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের শুরু হয় দ্বি-ভাষিক রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে নৃত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। নৃত্যনন্দনের একঝাঁক শিল্পী ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা পর্ব।
×