ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে জানালেন তার পরিকল্পনা

দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে টিভিতে রিয়েলিটি শো করবেন সোহেল তাজ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৯ জুলাই ২০১৯

দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে টিভিতে রিয়েলিটি শো করবেন সোহেল তাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৈনন্দিন জীবনের নানান সমস্যা সমাধানে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে রিয়েলিটি শো করবেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল (সোহেল তাজ)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যগত, ধর্ষণ, সড়কে অনিরাপত্তা, উদ্বাস্তু জীবনযাপনসহ শত শত সমস্যায় এখন জর্জরিত এ দেশ। এসব সমস্যার সরাসরি সমাধান দিতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কড়া নাড়তে চাই আমি। এ কাজটি করতে চাই একটি রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে। লাইফস্টাইল বিষয়ক এ রিয়েলিটি শোর নাম ‘হটলাইন কমান্ডো’। এটি প্রচারিত হবে বেসরকারী টিভি চ্যানেল আরটিভিতে। বেশকিছু দিন ধরে ফেসবুকে এ নিয়ে আলোচনা করছিলেন সোহেল তাজ। কীভাবে ওই কাজগুলো করবেন এ নিয়ে কৌতূহল ছিল মানুষেরও। সংবাদ সম্মেলন এই কৌতূহল দূর করেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহেল তাজ। এ সময় অনুষ্ঠানের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আরটিভির সিইও উপস্থিত ছিলেন। মানুষের এসব সমস্যার কীভাবে সমাধান করবেন সে বর্ণনা দিয়ে সোহেল তাজ বলেন, ‘দর্শকরাই আমাদের শোতে কল করবে। আমরা সেই কল গ্রহণ করলে আপনার কী সমস্যাÑ তা সরেজমিনে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে আপনার কাছ থেকে জেনে নেব। জেনে সমাধানের জন্য আপনাকে সাহায্য করব। এটাই হচ্ছে শোর থিম। আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম করার চেষ্টা করব, যেখানে থাকলে সাধারণ মানুষ সমস্যার সত্যিকারের সমাধান পাবে। তিনি বলেন, এটা বিরক্তিকর হবে না। দুপক্ষের অংশগ্রহণ থাকবে। এই শো সবসময় মানুষকে সমাধান দেবে। সমাজকে সচেতন করবে। শেষে আমি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তুলে ধরব। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো গাজীপুর-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সোহেল তাজ। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও দেয়। কিন্তু ’১২ সালের এপ্রিলে হঠাৎ করেই তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ ও রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর থেকে দেশের মানুষ ও রাজনীতির সঙ্গে তার সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি তার এই পরিকল্পনার পেছনের কাহিনী তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম খুব উৎসাহের সঙ্গে। আমাদের একটি চমৎকার নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। এটাকে আমরা বলেছিলাম ‘দিন বদলের সনদ’। এতে বলা হয়েছিল, আমরা ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব লক্ষ্যে কাজ করব। সেই সনদকে মনেপ্রাণে ধারণ করে আমি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে যে কারণেই হোক, আমি রাজনীতি থেকে বিরতি নিই। আমার সময় কাটে মোটামুটি দুই মেয়ের সঙ্গে। এ পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সোহেল তাজ। বলেন, ‘আমি বাবাকে কাছে পাইনি। চেষ্টা করেছি, আমার বাচ্চাদের সময় দিতে যাতে ওরা সেই ভালবাসা পায়টুকু পায়। আমি যেখানেই গেছি মানুষের আমার প্রতি ভালোবাসা, স্নেহ এবং আমাকে নিয়ে তাদের চিন্তা আমাকে অভিভূত করেছে। এই ভালবাসার প্রতিদান কীভাবে দেয়া যায়, সেটা দিনরাত চিন্তা করেছি। আমার কোন পোস্ট-পজিশন নাই, ধন-দৌলত নেই তাহলে আমি কী দিতে পারি? মা সবসময় আমাকে বলতেন, তোমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন। তুমি যা-ই করো না কেন, সেটা যেন মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য হয় এবং এই নিয়ত থাকে। সোহেল তাজ বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম, আমি চিন্তা করছি কী করা যায়। চিন্তা করতে থাকি, আমার কী গুণ আছে, যা মানুষের জন্য কাজে লাগাতে পারি। প্রথমে আমাকে রাজনীতি করতে হয়েছে একেবারে তৃণমূল থেকে। আমাকে কেউ কিছু দিয়ে দেয়নি। মাঠে-ঘাটে, গ্রামগঞ্জে, মানুষের বাড়ি বাড়ি গেছি। এক মুহূর্তে হাসি, এক মুহূর্তে কান্না দেখেছি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট কাছে থেকে দেখেছি। সে অভিজ্ঞতা আমার চিন্তায় একটা ক্ষেত্র তৈরি করে। যেখানে আমি আমার মেধা ও চিন্তা দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষকে হয়তো বা সহযোগিতা করতে পারব। ঋণ শোধ হয়তো বা কিছুটা হলেও করতে পারব। রিয়েলিটি শোর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রোগ্রামটা হবে ইন্টারেক্টিভ। যেটা একজন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত বুঝতে পারবেন এবং দেখায় আগ্রহ পাবেন। এটা বিনোদনমূলকও হবে। তথ্য থাকবে শতভাগ সত্যি। সেরকমই একটা ধারণা নিয়ে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তার পাশে ছোট বাচ্চা বসে আছে, তাদের থাকার জায়গা নেই। এটার সমাধান কী হতে পারে? আমরা আমাদের টিম নিয়ে বাস্তবতা দিয়ে এর সমাধানটাও তুলে ধরব। যাতে সামাজিকভাবে আমরা এর সমাধান করতে পারি। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা কীভাবে করা যায় সেটাও তুলে ধরব। আমাদের আগেও অনেকে এ চেষ্টা করেছেন। তাদের চেষ্টা শতভাগ সফল হয়নি, কারণ তারা পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। একজন যেভাবে বোঝে, তাকে সেভাবেই বোঝাতে হবে। এছাড়া সম্ভব নয়। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য এসময় একটা ডেমো দেখান তিনি। এতে দেখা যায়, সমস্যায় ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে হটলাইন কমান্ডো টিম নিয়ে সোহেল তাজ সরাসরি হাজির হচ্ছেন। সমস্যা শোনার পর তিনি সেটার সমাধান দিচ্ছেন।
×