ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় এক পরিবারের তিনজনসহ বজ্রপাতে সারাদেশে মৃত্যু ১৪

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৪ জুলাই ২০১৯

 পাবনায় এক পরিবারের তিনজনসহ বজ্রপাতে সারাদেশে মৃত্যু ১৪

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বজ্রপাতে সারাদেশে শনিবার ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার বেড়ায় চারজন, চুয়াডাঙ্গায় তিনজন, ময়মনসিংহে দু’জন, সুনামগগঞ্জে দু’জন, কুমিল্লায় একজন, মাগুরায় একজন ও নেত্রকোনায় একজন নিহত হয়েছেন। খবর নিজস্ব সংবাদদাতার। জানা গেছে, পাবনার বেড়ায় বজ্রপাতে বাবা, ছেলেসহ চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া গ্রামে বেলা সোয়া ২টার সময় এ ঘটনা ঘটে। বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাঁচুরিয়ার মোতালেব সরদার (৫৫), তার ছেলে মোঃ ফরিদ সরদার (২২), মোঃ শরিফ সরদার (১৮) ও একই গ্রামের মৃত ছকির উদ্দিনের ছেলে রহম আলী (৫৫) পাঁচুরিয়া ফুটবল খেলার মাঠের পাশের একটি ডোবাতে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছিলেন ও ধোয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টি শুরু হয় ও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। পরে আশপাশের শ্রমিকরা তাদের পানির মধ্য থেকে উদ্ধার করে। চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খড়ত গ্রামে কলা কেটে ট্রাকে বোঝাই করার সময় বজ্রপাতের ঘটনায় মেহেরপুরের তিন কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে হুদা মিয়া (৩২), বরকত আলীর ছেলে হামিদুল হক (৩৫) ও মকবুল হোসেনের ছেলে আলামিন হোসেন (৩৫)। ঘটনার সময় হুদা, হামিদুল ও আলামিন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খড়ত গ্রামে কলা কেটে ট্রাকে বোঝাই করছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনায় তিনজন আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহের ফুলপুরে বজ্রপাতে দু’জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের কৃষক জামাল উদ্দিন (৪০) ও বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের খামার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া। আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার দুপুরে উপজেলা পয়ারী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বাড়ির পাশে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যাওয়ার পথে আকস্মিক তার ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফুলপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেছে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত জামাল উদ্দিন ৪ সন্তানের জনক। এদিকে পৃথক ঘটনায় শনিবার দুপুরে উপজেলার বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে খামার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া তার পালিত হাঁসগুলোকে বিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। বজ্রপাতের সময় সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান ওসি। সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জে আবারও বজ্রপাতে একই সঙ্গে বাবা ও ছেলে প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাহিরপুর উপজেলার কানামইয়া হাওরে মাছ ধরার সময় নৌকায় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই বাবা হারিদুল মিয়া (৪২) ও পুত্র তারা মিয়া (১২) মারা যান। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এর আগে গত ১০ জুলাই জামালগঞ্জ উপজেলায় স্কুল থেকে প্রিয় সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হেলিপ্যাড মাঠে বজ্রাঘাতে মারা যান বাবা সাবিতুল ও পুত্র অন্তর। সকালে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকটিলা গ্রামের মৎস্যজীবী হারিদুল তার পুত্র তারা মিয়াকে নিয়ে বাড়ির সামনের কানামইয়া হাওরে চাঁই (বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ ধরার বিশেষ ডুবন্ত যন্ত্র) দিয়ে মাছ ধরতে যান। সাড়ে ১০টার সময় বজ্রাঘাতে নৌকা থেকে পড়ে যান বাবা ও ছেলে। দু’জনই ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাড়ি থেকে নিহতের স্ত্রী ও মা নৌকার ওপরে স্বামী ও পুত্রকে না দেখে চিৎকার শুরু করেন। প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খুঁজে পিতা ও পুত্রের লাশ উদ্ধার করেছেন। পিতা ও পুত্র বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি নিহতদের পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকা সরকারী অনুদান প্রদান করেন। কুমিল্লা ॥ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি চলাকালে ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত রিক্সা) চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন চালক আবু কাউসার (৩০)। শুক্রবার রাতে উপজেলার নাগাইশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউসার ওই গ্রামের মৃত আবদু মিয়ার পুত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকবছর প্রবাসে চাকরি শেষে ৩-৪ মাস পূর্বে দেশে ফেরেন কাউসার। এরপর সে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কিনে নাগাইশ-বড়দুশিয়া-শশীদল সড়কে যাত্রী পরিবহন করতেন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই দিনভর ইজিবাইক চালিয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন তিনি। পরে বৃষ্টির মধ্যে ভেজা শরীর নিয়ে পার্শ্ববর্তী ঘরে ইজিবাইকটি চার্জ দিতে গেলে বিদ্যুতের তারে শরীর জড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাউসার। কিছুক্ষণ পর বাড়ির লোকজন দেখতে পেয়ে দ্রুত গিয়ে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কাউসার। কাউসারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু শাহজাহান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নেত্রকোনা ॥ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গ্রামের পাশে পতিত জায়গায় গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এনামুল হক (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এনামুল হক সন্যাসীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। শনিবার দুপুরে রংছাতি ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক বজ্রপাতে ওই যুবক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হন এনামুল। তবে বজ্রপাতে এনামুলের সঙ্গে থাকা গরুটির কোন ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনামুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
×