স্টাফ রিপোর্টার ॥ নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৪৬ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুত বিল নিয়ে বিপাকে রয়েছে। বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির অনেক চেষ্টার পরও এই বিল আদায় করতে না পেরে শেষে পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। নেসকো বলছে স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টার পরও উত্তরাঞ্চলের স্থানীয় সরকার বিভাগের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বিদ্যুত বিল পরিশোধ করছে না। এতে তারা আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে।
উত্তরের জেলাগুলোতে বিদ্যুত সরবরাহে নতুন এই কোম্পানি গঠন করে সরকার। এর আগে এসব এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ করত বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নেসকো বলছে, সরকার বিদ্যুত বিতরণের পর বিল আদয়ে একটি লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হলে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস আটকে যায়। নেসকোর এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেশিরভাগ বিল আদায়ে তারা কঠোর হতে পারে না। তারা যেহেতু সরকারী সেবা দিয়ে থাকে তাই এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে মানুষই ভোগান্তিতে পড়বে। তাই আমরা বিদ্যুত বিল আদায়ে অন্য গ্রাহকদের মতো কঠোর হতে পারি না। তিনি বলেন, সাধারণত গ্রাহক বিদ্যুত বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এতে গ্রাহক বিদ্যুত বিল সময় মতো পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে কাউকে কোন তোয়াক্কাই করে না।
বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে চলবে, কিভাবে তাদের আর্থিক সংস্থান হবে সে বিষয়ে প্রতি বছর খাত হিসেব করে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পরও কিছু প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত বিলের অর্থ অন্য খাতে খরচ করে ফেলে। প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক নিরীক্ষা করা হলে যা সম্ভব হতো না। তিনি জানান, সব থেকে বেশি বকেয়া থাকে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বছরের পর বছর এই অনিয়ম বহাল রয়েছে। এতে বিদ্যুত খাতের আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র মতে, নেসকো চেষ্টা করে না পেরে বিদ্যুত বিভাগের দ্বারস্থ হয়। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যুত বিভাগ থেকে বিষয়টি অবহিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে দেয়া চিঠিতে বিদ্যুত বিভাগ কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কত বকেয়া রয়েছে তা তুলে ধরেছে।
যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিদ্যুত বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন সরকারী, আধাসরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৪৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া বিদ্যুত বিল পাওনা রয়েছে। এই হিসেব গত এপ্রিলের উল্লেখ করে বলা হয়, এত বিপুল পরিমাণ বিল অনাদায়ী থাকায় নেসকো আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। সঙ্গতকারণে এসব বকেয়া বিল পরিশোধে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবির কাছ থেকে কিনে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করে। আবার পিডিবি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুত কেনে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর যেভাবে বিতরণ কোম্পানিকে পিডিবির কাছ থেকে নেয়া বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হয় একইভাবে পিডিবিকেও বিদ্যুত উৎপাদনকারীর বিল পরিশোধ করতে হয়। একই সঙ্গে গ্যাস ও কয়লার জন্য পেট্রোবাংলাকে এবং তরল জ্বালানির জন্য বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) অর্থ পরিশোধ করতে হয়। দেশে তরলীকৃত এলএনজি আমদানি হচ্ছে এখন চাইলেও পেট্রোবাংলা পিডিবির কাছে অর্থ বকেয়া রাখতে পারে না। এলএনজি কেনার সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোবাংলাকে বিল পরিশোধ করতে হয়। ফলে কোথাও বিপুল অর্থ আটকে থাকলে তার বিকল্প সংস্থান করা সবার জন্যই কষ্টকর। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখছে। এতে বিদ্যুত-জ্বালানির আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।