ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৬ জুলাই ২০১৯

 এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত এক সপ্তাহে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ২৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। গত আট ঘণ্টায় দেয়া হয়েছে ৮ ব্যাগ, পেট থেকে ২০০ মিলিলিটার পানি বের করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ও বিকেলে ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। তার অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলোর কৃত্রিম চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আরও রক্তের প্রয়োজন। আগের চেয়ে তিনি ভাল আছেন তবে শঙ্কামুক্ত নয়। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা ১০ মিনিটের পর থেকে এরশাদকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে এরশাদের সুস্থতা কামনায় দোয়া শেষে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় দেশের সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকালের পর থেকে এরশাদের আরও বেশি রক্তের প্রয়োজন বলে ডাক্তাররা জানান। তখন দলের পক্ষ থেকে রক্ত দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রক্ত চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা স্ট্যাটাস দেন। এ খবর বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমেও প্রচার হয়। দুপুরের আগেই প্রায় চার শতাধিক মানুষ এরশাদকে রক্ত দিতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভিড় করেন। হাসপাতালের উল্টো পাশে এ এফ আই পি ব্ল্যাড ব্যাংকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করান তিন শতাধিক রক্তদাতা। জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, এরশাদকে বি-পজেটিভ রক্ত দিতে সবচেয়ে বেশি ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। এরসঙ্গে দলের লোকজনও ছিল। বিকেলে দলের যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল ইসলাম মিলন জানিয়েছেন, বিকেল পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যানকে ১০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও কিছু রক্ত সংগ্রহে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেয়া হবে। তাছাড়া প্রায় ৪০০ মানুষ স্যারকে রক্ত দিতে আসেন। অনেকের মোবাইল নম্বর রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের টেলিফোনে রক্ত দেয়ার জন্য ডাকা হবে বলে জানান তিনি। জিএম কাদের বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ফুসফুসের সংক্রমণ কিছুটা কমলেও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আবার কিডনি কিছুটা কাজ করলেও তার শরীর থেকে বর্জ্য বের হচ্ছিল না। তাই সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) লাইফ সাপোর্ট দেন। এসময় দলের চেয়ারম্যান এরশাদের জন্য দোয়া চান জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অন্যরা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ভাইয়ের মেডিক্যাল প্রতিবেদন মেল করেছেন সিএমএইচের চিকিৎসকরা। তবে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এমন শারীরিক অবস্থায় তাকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়াকে সমর্থন করেননি। জিএম কাদের আরও বলেন, শুক্রবার সকাল ১১টায় আমাদের চেয়ারম্যানকে দেখতে যেয়ে দেখি তাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, সুস্থ দেখাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার পেটে জমে থাকা পানি (২০০ মিলি) বের করা হয়েছে। তাছাড়া ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। এখন কিছুটা সুস্থ দেখাচ্ছে তবে এটাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না, আশঙ্কাজনকভাবে আছেন। তবে এখন যেভাবে তার শরীর রয়েছে এমনটা থাকলে হয়ত তার কৃত্রিম চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না, দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও ফিরবেন। এর আগে মসজিদে আগত মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান জিএম কাদের। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে তার অনেক অবদান আছে, তিনি অসুস্থ, তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। জুমার নামাজ শেষে এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের পেশ ইমাম মিজানুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা, সাবেক মহাসচিব এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। মাইডোলিস প্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ৯০ বছর বয়সী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গত ২২ জুন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফলে তার অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছে না। তারপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ফুসফুস ও কিডনিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেই শুক্রবার ভোরে এরশাদের ডায়ালাইসিস শুরু হয়। তখন তার জন্য ‘বি পজেটিভ’ রক্ত প্রয়োজন জানিয়ে সকালে নেতাকর্মীদের রক্ত দেয়ার আহ্বান জানায় জাতীয় পার্টি। বয়সজনিত নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ২২ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসায় আছেন এরশাদ। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতির খবর মেলেনি। গত রবিবার সবচেয়ে বেশি অবস্থার অবনতি হয়। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানানো হলে গুজবের ডালপালা ছড়ায়। দেশজুড়ে এরশাদের মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। দলের জেলা উপজেলার নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এরশাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে অনেকেই এরশাদের মৃত্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এর প্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে মৃত্যুর গুজব না ছড়াতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরশাদের সুস্থতা কামনায় সারাদেশে দোয়া ॥ সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্থতা এবং রোগমুক্তি কামনায় সারাদেশের সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ জুমা মসজিদগুলোতে বিশেষ প্রার্থনায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্থতার জন্য ফরিয়াদ করেছেন সবাই। এছাড়া সকাল থেকেই মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ অন্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা হয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোগমুক্তির জন্য। প্রার্থনায় সবাই সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দীর্ঘ জীবন কামনা করেছেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসী বিশেষ প্রার্থনা করায়, গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি ও পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। এরশাদের জন্য আর রক্তের প্রয়োজন নেই ॥ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসার জন্য বি-পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন, এ সংবাদে শত শত মানুষ তাকে রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছেন। তারা নিজেরাই তালিকা করেছেন রক্তদাতাদের। ভিড় করেছেন সিএমএইচ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিস এবং কাকরাইল অফিসে। অপরদিকে এখনও অসংখ্য মানুষ এরশাদকে বাঁচিয়ে রাখতে রক্ত দিতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রক্তের ব্যবস্থা চিকিৎসকদের কাছে রয়েছে। তাই এরশাদের চিকিৎসার জন্য আর রক্তের প্রয়োজন নেই। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরশাদের চিকিৎসায় রক্ত প্রয়োজন এমন সংবাদে দেশবাসীর অভূতপূর্ব সাড়ায় অসীম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এরশাদের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় বিশেষ প্রার্থনা হয়েছে রাজধানী শ্যামপুরের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী গ্রিধারী বিগ্রহ আখড়ায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রার্থনায় হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×