ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাইজেরিয়ার যমজদের শহর

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৫ জুলাই ২০১৯

নাইজেরিয়ার যমজদের শহর

দক্ষিণ পশ্চিম নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা শহরে গেলে যে কেউ ধন্ধে পড়বেন। কেননা জোড়া চেহারার বহু মানুষের দেখা মিলবে সেখানে। যমজদের রাজধানী নাইজেরিয়ার ওইয়ো রাজ্যের ইগবো ওরা শহরে পর্যটকরা পথে পথে একটি ব্যানারের দেখা পাবেন। তার মূল কথা একটাই, ‘স্বাগত বিশ্বের যমজদের রাজধানীতে।’ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে তার প্রমাণও মিলবে। দেখা মিলবে অনেক যমজ মানুষের সঙ্গে। হাজারে ৫০ যমজ দুই ভাইয়ের নাম কেহিন্দে এবং তাইয়ু কোলাওলে। কার নাম কোনটি সেটি মনে রাখাটা অবশ্য মুশকিল হতে পারে। ১৯৭০ এর দশকে এক ব্রিটিশ গাইনি বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী এই অঞ্চলে প্রতি হাজারের মধ্যে যমজ জন্মের হার ৫০টি, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি। নামের বাহার কেহিন্দে এবং তাইয়ো আদেরগোবা ভাইয়ের মধ্যে মিল ও ভাব দুইই বেশ। শুধু চেহারা নয়, সেখানকার যমজদের নামেও থাকে মিল। ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষেরা যমজদের একটি নামই রাখেন। নামের আগে একজনের ক্ষেত্রে তাইয়ু আরেকজনকে কেহিন্দে বলে ডাকেন, যা দিয়ে বোঝা যায় কে আগে জন্ম নিয়েছে, কে পরে। চেনে কী করে! ইগবো ওরা শহরেই যমজ জন্মের প্রবণতা বেশি, কিন্তু তার মধ্যেও এগিয়ে ইয়োর বা সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এসেম্বলিতে নয় যমজের দেখা পেয়েছেন রয়টার্সের সাংবাদিক। বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকরা তাদের গুলিয়ে ফেলে নাতো! কেন এত জোড়া? নবজাতক যমজ শিশুকে কোলে নিয়ে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা। এই শহরের মানুষদের বেশিরভাগের বিশ্বাস ওকরা পাতা খাওয়ার অভ্যাসের কারণেই এত যমজ শিশুর জন্ম দেন তারা। এই পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়াটা ইগবো ওরার মানুষদের খুবই প্রিয়। কারণ একটাই নয় ওকরা পাতার বিষয়টি ঠিক সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। অনেকের ধারণা আমালা নামের আরেক খাবার এর জন্য দায়ী। লাল আলু আর কাসাভা থেকে তৈরি আটা দিয়ে এই খাবার বানানো হয়। এর পেছনে একটি ব্যাখ্যাও আছে। খাবারটি নাকি বিশেষ হরমোন তৈরি করে, যা ডিম্বাণুর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আসল কারণ কী কারণ খুঁজতে রয়টার্স দ্বারস্থ হয়েছিল নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের একজন গাইনী বিশেষজ্ঞের কাছে। তিনি বলেছেন, লাল আলুর যেই খাবারের কথাটি মানুষ বলছেন সেটি সঠিক নয়, কেননা একই ধরনের খাবার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রচলিত আছে। তার মতে সম্ভবত নিজেদের মধ্যে বিবাহ আর জিনগত ঐতিহ্যের কারণেই এখানকার নারীদের যমজ জন্মদানের প্রবণতা বেশি। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু! কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের মতে ওকরা পাতা খাওয়ার উপরই বিষয়টি নির্ভর করে। এ জন্য সেটি সেদ্ধ করে জমিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গেই খেতে হবে। ওয়েনিক বেমিমোর নামের এক নারী এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে রয়টার্সের সাংবাদিককে জানান। ‘আমি অনেক ওকরা পাতা খাওয়ায় আট জোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছি,’ বলেন তিনি। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×