ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবিশ্বাস্য রোহিতে মুগ্ধ কোহলি

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৪ জুলাই ২০১৯

 অবিশ্বাস্য রোহিতে মুগ্ধ কোহলি

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ উড়ছে ভারত, উড়ছেন রোহিত শর্মা। পরশু বাংলাদেশকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত। তামিম ইকবালের ক্যাচ মিসে জীবন পাওয়া রোহিত তুলে নেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ওই একটিমাত্র ভুল বাদ দিলে তুখোড় ওপেনার ছিলেন দুরন্ত-দুর্বার। ৯২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় উপহার দেন ১০৪ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে চার সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ড গড়েন মহারষ্ট্রে জন্ম নেয়া ৩২ বছর বয়সী উইলোবাজ। পেছনে ফেলেন গ্রেট সৌরভ গাঙ্গুলীকে। ২০০৩ বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সে সময়ে দলের অধিনায়ক সৌরভ। চলতি বিশ্বকাপে রোহিত এর আগে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ১০২, ১৪০ ও অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস। সাকিব আল হাসানকে (৫৪২) পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে এখন সর্বোচ্চ রানের মালিক রোহিত শর্মা (৫৪৪)। স্বভাবতই অধিনায়ক বিরাট কোহলির কাছ থেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেলেন ওয়ানডেতে রেকর্ড তিন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক। কোহলি বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান রোহিত। আমরা সবাই ওকে নিয়ে অভিভূত। বছরের পর বছর আমি রোহিতের এই ব্যাটিং দেখে আসছি। নতুন করে আর কী বলব।’ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত। পরে বাংলাদেশকে ২৮৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ২৮ রানের জয়ে নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল। রোহিত তবু জীবন পেয়ে সেটি কাজে লাগিয়েছেন। ওপেনিংয়ে তার পার্টনার লোকেশ রাহুল খেলেছেন ৭৭ রানের ক্ল্যাসিক্যাল এক ইনিংস। যেটি দলের স্কোর তিন শ’ পেরোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্রিজে এত কাছে থেকে সুপার রোহিতের ব্যাটিং উপভোগ করা রাহুল বলেন, ‘রোহিতকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ব, পাগল নাকি? ও যেদিন নিজের ছন্দে থাকবে বিশ্বের সেরা। কেউ ওকে অনুকরণ করতে পারবে না। ওর মতো কেউ ব্যাট করতে পারবে না। এত কাছে থেকে সেটা দেখা সত্যি দারুণ ব্যাপার।’ বিশ্বকাপে চার সেঞ্চুরিতে পেছনে ফেলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলীকে, ছুঁয়েছেন আরেক গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারাকে (২০১৫ বিশ্বকাপে ৪ সেঞ্চুরি)। যার দৃষ্টিনন্দন সব শটের বর্ণনা দিতে দিয়ে ধারাভাষ্য কক্ষে কিংবদন্তি সব সাবেক ক্রিকেটাররাও গলদঘর্ম। দারুণ কীর্তিগড়ার পরও সেই রোহিত কিন্তু শান্ত-নির্লিপ্ত। রোহিত বলেন, ‘সকালে মাঠে আসার পর থেকেই দারুণ একটা অনুভূতি হচ্ছিল’ বলেন তিনি। বিশেষজ্ঞকরা বলেন, ক্রিকেটে ভাগ্য সাহসীদের সঙ্গে থাকেন। আরও বলেন, ‘আমার খেলাটা অন্যরকম। ফিল্ডিংয়ের মধ্যে ফাঁক খুঁজে রান বের করার চেষ্টা করি। তাই মাঠের আকার বা ছোট বাউন্ডারি ব্যাপারটা অত গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ চারটি সেঞ্চুরি করে কেমন লাগছে? ‘যে ম্যাচটা হয়ে গেছে সেটা অতীত। আমার মন্ত্র হচ্ছে অতীতে পড়ে থেক না। যে ফর্মে থাকবে তাকেই তো বেশি অবদান রাখতে হবে, দলকে এগিয়ে নিতে হবে। আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’ ভাগ্য সাহসীদের সঙ্গে থাকে, কথাটা কিন্তু খুবই সত্য। আবার ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস, এটাও সত্য। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ যতবারই রোহিতের ক্যাচ ফেলেছে ততবারই বিধ্বংসী সাজে স্বরূপে ফিরেছেন তুখোড় এই ওপেনার। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চারবার রোহিতের ক্যাচ ছেড়েছে প্রতিপক্ষ, যেখানে একবার কেবল হাফ সেঞ্চুরিতে খুশি থেকেছেন, বাকি তিনবারই হাঁকিয়েছেন ধুন্ধুমার সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ রানে রোহিতের ক্যাচ ছাড়েন ডেভিড মিলার, ফল অপরাজিত ১২২। অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডার ২ রানে তার ক্যাচ ফেলার পর ৫৭ রান করেন রোহিত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ রানে জো রুট তার ক্যাচ ফেলার পর ১০২ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে মঙ্গলবার ৯ রানে তামিম ইকবাল একই ভুল করলে পেয়েছেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। করেন ১০৪ রান। বিশ্বকাপে যার রান পাঁচ শ’র ওপরে, ক্যারিয়ারে সাড়ে নয় হাজার। সেঞ্চুরি ২৬টি। ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে যার নামের পাশে রেকর্ড ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬৪সহ তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, সেই তার ক্যাচ ছাড়া রীতিমতো অপরাধ। তামিম ইকবাল হয়তো আগামী কিছুদিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারবেন না। যদিও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বরাবরের মতো সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ‘হ্যাঁ ওটা ভাইটাল ছিল। কারণ রোহিত দারুণ ফর্মে আছে। তবে ক্যাচ মিস খেলারই অংশ। এটা হতেই পারে’ বলেছেন তিনি। ১ হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে সেঞ্চুরি ৪টি। ৯০.৬৬ গড়ে রান ৫৪৪। সুপার রোহিত আসলে কোথায় থামেন সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×