ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আলেয়ার আলোয় ৬ মাস পর পরিবার পেল ফেরদৌসি

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৪ জুলাই ২০১৯

 আলেয়ার আলোয় ৬ মাস পর পরিবার পেল ফেরদৌসি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক আয়া আলেয়া। তার আলোয় (সেবায়) অনেক অসহায় রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অজ্ঞাত অনেক রোগীকে সেবা দিয়ে শেষমেশ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন আলেয়া। এ কারণে রামেক হাসপাতালে ‘অসহায়দের সহায়’ হিসেবে আলেয়ার খ্যাতি রয়েছে। সেই আলেয়া এবার আরেক রোগীর সেবা দিয়ে সুস্থ করে পৌঁছে দিয়েছেন পরিবারের কাছে। পরিবার হারা ফেরদৌসি (২২) নামের এ রোগীকে মঙ্গলবার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়। আলেয়া জানান, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অজ্ঞাত হিসেবে ফেরদৌসিকে ভর্তি হয়। তখন তার শরীরে ছিল অসংখ্য জখম। কোমরের কয়েকটি হাঁড়ভাঙ্গা। অজ্ঞাত বলে দেখার কেউ ছিল না। হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় ঠাঁই হয় তার। অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থাকত সারাক্ষণ। অবশেষে তার দায়িত্ব নেয় আয়া আলেয়া বেগম। দীর্ঘ সেবার পরে তাকে সুস্থ করে তুলেন আলেয়া। কিন্তু মেয়েটি কথা বলতে পারত না। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও মেয়েটিকে একা ছাড়তে পারেনি আলেয়া। অবশেষে সেই মেয়েটির পরিবারের খোঁজ মিলেছে। পাওয়া গেছে তার নামও। আলেয়া জানান, মেয়েটির নাম ফেরদৌসি। মানসিক প্রতিবন্ধী। পাবনার ঈশ^রদীর উপজেলার পূর্ব বাঘইল গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে সে। আলেয়া জানান, ফেরদৌসির মামাতো বোন পাপিয়া রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বড় বোন চুন্নুকে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে হাসপাতালের সামনে বসে থাকা ফেরদৌসিকে দেখেই তিনি প্রথমে চিনতে পারেন। পাপিয়া জানান, তার বড় বোন চুন্নু অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার বিকেলে হাসপাতালের সামনে বসে থাকা অবস্থায় তাকে দেখে চিনতে পারেন তিনি। পরে তিনি তার মামার কাছে ফোন দেন। ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা। ফেরদৌসির বড় ভাই জসিম জানান, ১০ জানুয়ারি ফেরদৌসি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এরপরে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে আশপাশের বিভিন্ন থানায় অনেক খোঁজ করা হয়। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে ফেরদৌসিকে সেবা করে সুস্থ করে তোলা আলেয়া বেগম বলেন, আজ অনেক ভাল লাগছে। তাকে সুস্থ করে পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেয়েছি এটাই অনেক আনন্দের। ফেরদৌসি তার পরিবারের কাছে গিয়ে ভাল থাকুক এটা চান আলেয়া। আলেয়া বলেন, শুধু ফেরদৌসি নয়, এর আগে গত কয়েক বছরে তিনি অনেক অসহায় রোগীর সেবা করে নিজ নিজ বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। এটাতে তার আনন্দ। মানসিকভাবেও তৃপ্তি পান। ফেরদৌসির বাড়ি ফিরে পাওয়ার পেছনেও অবদান রাজশাহীর আলেয়ার। আলেয়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অসহায়দের সহায় হিসেবে কাজ করে। হাসপাতালের আয়ার চাকরি করেন তিনি। অজ্ঞাত রোগী ভর্তি হলেই তার কাছে ছুটে যান আলেয়া। শুরু হয় আলেয়ার সেবা। ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে রোগীরা। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা আলেয়ার সেবায় মুগ্ধ। সবাই তাকে এক নামে চেনেন।
×