ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় বাজেট পাস

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৩ জুলাই ২০১৯

জাতীয় বাজেট পাস

রবিবার জাতীয় সংসদে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। সোমবার থেকে সেটি কার্যকরও হচ্ছে। যেমন গ্যাসের দাম ৩২.৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। বাজেট পাসের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা সংযুক্ত তহবিল থেকে ব্যয় করার অনুমতি প্রদান করেছে। জুনের মাঝামাঝি সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটের বড় কোন সংশোধন আসেনি। সংসদীয় সংস্কৃতির সৌন্দর্য হলো প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা এবং মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব উপস্থাপন। বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন, যা কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারী চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া পেনশনধারী, বহু নারী এবং অন্যান্য পেশাজীবী ও স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের সংসার চলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকায়। ফলে তাদের জন্য এই কর বাড়তি বোঝা হবে, অর্থাৎ তাদের আয় কমে যাবে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, হয়তো সব দিক বিবেচনা করে সরকার এই কর বাড়াবে না। সেটি হয়নি। তাছাড়া বিদ্যুত সংযোগ থাকলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেয়ার প্রস্তাবটিও বহাল রইল। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এটি কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। একইভাবে মানুষ আশা করেছিল স্মার্ট ফোনের দাম বাড়বে না। এখন স্মার্ট ফোনেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ ও অন্যান্য দরকারি কাজ করে থাকে। ডিজিটাল যুগে সেটিই স্বাভাবিক। ফলে এই খাতে করারোপ হবে না, মানুষের প্রত্যাশা ছিল এমনটাই। উল্লেখ্য, অন্যবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত বাজেটসমূহের ধারাবাহিকতারই অংশ। ইতোপূর্বে প্রতিটি বাজেটেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আকার বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। বাজেট হচ্ছে কোন সরকারের উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের ভিত্তি। এই বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে এটি যে কল্যাণকামী ও সমৃদ্ধির সোপানে অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে প্রণীত বাজেটÑ তাতেও কোন সংশয় নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। শিক্ষা উন্নয়ন খাতে এবার স্মরণকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে না দেখার কোন কারণ নেই। বিগত বছরের মতোই আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি লক্ষ্যযোগ্য দিক হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৪টি বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি। একই সঙ্গে বাড়ছে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও। দারিদ্র্য হ্রাসকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সর্বাধিক। এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নিঃসন্দেেেহ ইতিবাচক। লক্ষণীয়, বর্তমান সরকারের শাসনামলে প্রতিটি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। কর্মহীন তথা বেকারদের জন্য সুখবর আছে বাজেটে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকারত্বের অবসান ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখাও একটি চমক। আবারও বলা দরকার, প্রতি অর্থবছরের শেষে দেখা যায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অন্তত ৩০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয় না। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে চাই।
×