ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষায় অংশ নিলেন ৫ লাখ

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৯ জুন ২০১৯

 প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষায় অংশ নিলেন ৫ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হলো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ ও শেষ ধাপের লিখিত পরীক্ষা। শুক্রবার শেষ ধাপে দেশের ২৪ জেলায় প্রায় ৫ লাখ প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রেক্ষাপটে নানা পদক্ষেপের মধ্যে শুক্রবারের পরীক্ষা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে নেত্রকোনায় পরীক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের সময় একটি চক্রের ৩৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবারও শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে মোট ৪ ধাপে। গত ২৪ মে প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা মোটামুুটি শান্তিপূর্ণ হলেও সাতক্ষীরা ও লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশ্নফাঁসের চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৪০ অপরাধীকে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এসআইয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের আটক করেছিল র‌্যাব। ৩১ মে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপেও বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নফাঁস, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার আগেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কঠোর মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা। শেষ ধাপের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ করতে মনিটরিংয়ের জন্য কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে জেলায় জেলায় পরীক্ষার আগের দিন পাঠানো হয়। কর্মকর্তারা পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করতে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। আগেই বলা হয়, পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীরা কোন ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিতে পারবেন না। নারী পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রেখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। নির্দেশনার পরও যদি পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ কান খোলা না রাখেন তবে তাকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়া হয়। কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ২৪ জেলায় ২৪ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রশ্নের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুষ্ঠু ও নকলমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রণালয়ে বুয়েট ও ডিপিইর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন বৈঠক করেছেন। শুক্রবার ঢাকা জেলার একাংশ গাজীপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে নেত্রকোনা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা সঞ্জয় সরকার জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের সময় একটি চক্রের ৩৪ সদস্যকে আটক করেছে জেলার কেন্দুয়া থানা পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষা চলাকালে কেন্দুয়া পৌরসভার ছয়আনী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ৮ শিক্ষকসহ বিশ^বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে নেত্রকোনা সরকারী কলেজ কেন্দ্রে জাহেদুল ইসলাম (২৭) নামে এক পরীক্ষার্থীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও আটপাড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে ওই চক্রের সদস্যরা কেন্দুয়া সদরের ছয়আনী এলাকার শিল্পপতি মনিরুজ্জামান শামীমের বাড়িতে বসে কম্পিউটার, মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহ করছিল। এ সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানে মোট ৩৪ জনকে আটক করা হয়। কেন্দুয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ওই জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হচ্ছেন আব্দুল মান্নান টোটন নামের এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে শিল্পপতি শামীমের ভাই মিন্টুও জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা দু’জনই আটক হয়েছেন। ওসি জানান, আটকদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, এ ঘটনাটিকে প্রশ্নফাঁস বলা যাবে না। কারণ পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এ চক্রটি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে তাদের কাছে উত্তর সরবরাহ করছিল। এদিকে নেত্রকোনা সরকারী কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে জাহেদুল ইসলাম নামে এক পরীক্ষার্থী স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে কেন্দ্রর বাইরে থেকে প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নির্বাহী হাকিম মঈনউদ্দিন তাকে হাতেনাতে আটক করেন।
×