ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা যেখানে নেতা সেখানে সংসদ প্রাণবন্ত হবেই

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৯ জুন ২০১৯

শেখ হাসিনা যেখানে নেতা সেখানে সংসদ প্রাণবন্ত হবেই

জাতীয় সংসদের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন চলছে। এরই মধ্যে বিগত অর্থবছরের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট হয়েছে। দুই/এক দিনের মধ্যে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটও পাস হবে। একটি প্রাণবন্ত অধিবেশন এটি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেখানে নেতা সেখানে সংসদ প্রাণবন্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাজেট পেশ করতে পারছিলেন না। ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পড়লেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বললেন, আপনি ইচ্ছে করলে পঠিত বলে গণ্য করার আবেদন করতে পারেন। কিন্তু না, প্রধানমন্ত্রী পুরো বক্তৃতা পড়লেন। এমনকি রেওয়াজ অনুযায়ী অর্থমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনও করলেন একজন দক্ষ অর্থমন্ত্রীর মতো যেন এই মন্ত্রণালয়টাও তিনি চালাচ্ছেন। আসলেও তা-ই, সবই তিনি চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতার লেভেলটা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, তাকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক যেখানেই ডাকা হবে তার পারফর্মেন্স হবে সবার সেরা। এমনকি ক্রিকেটের ধারাভাষ্যেও তিনি সবার চেয়ে ভাল করবেন। বাজেট আলোচনার পুরোটা সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে কাটান। কিছু সময় সংসদ কার্যালয়ে বসেন- জরুরী সাক্ষাতকারসহ রাষ্ট্রীয় কাজ সারেন। তারপর বেশিরভাগ সময়ই অধিবেশনে নিজ সংসদ নেতার আসনে বসেন- সামনে থাকে ফাইলের স্তূপ। সংসদে সকলের বক্তৃতা যেমন অবজারভ করেন তেমনি একটার পর একটা ফাইল ডিজপোজ-অফ করেন ভালভাবে পড়ে তারপরই। এই আমাদের সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী। দোয়া করি, আল্লাহ্পাক তাকে সুস্থ, দীর্ঘজীবন দান করুন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা মুহম্মদ নাসিম তার বাজেট বক্তৃতায় ট্রেজারি বেঞ্চের হয়েও যখন বলেন, ‘ঋণখেলাপীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। কঠোর হাতে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদল যখন বলেন, তার এলাকায় একটি পুলের কাজ ৫ বছর আগে শুরু হয়েছে। আজও শেষ হয়নি। এই সুযোগে বরাদ্দ বেড়েই চলেছে। কাজ শেষ হবে কবে জানেন না। এলাকার জনগণকে জবাব দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় পদ ছেড়ে দেয়া ছাড়া তার কি-ই বা করার আছে। প্রধানমন্ত্রী সবই ফলো করেন। এমনকি বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যখন সংসদকে ‘অবৈধ’ বলেন এবং ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা নো নো বলে হৈচৈ করেন কিংবা অপর বিএনপি সদস্য হারুনুর রশীদ নাকে-মুখে মিথ্যা বলতে থাকেন, সংসদ উত্তেজিত হয়, তখন তিনি সকলকে হৈচৈ করা থেকে নিবৃত্ত করেন। এবারের বাজেটের সর্বোচ্চ বিশেষত্ব সর্বজনীনতা। ‘সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার’ বাজেট এটি। এতে যেমন কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, কামার-কুমার, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, পাহাড়-সমতল, পিছিয়ে পড়া এবং এগিয়ে যাওয়া, শিশু-কিশোর-কিশোরী, যুবা-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সকল পেশাজীবী-কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে। এমনকি আদিযুগ থেকে পেছনে পড়ে থাকা সামাজিকভাবে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীকে পর্যন্ত মর্যাদাসহকারে বাজেটে নিয়ে আসা হয়েছে। এমন মানবিক রাষ্ট্রনায়ক আর ক’জন বর্তমান বিশ্বে আছে, জানা নেই। ৫২৩১৯০ কোটি টাকার বাজেট ক’জনেরইবা মাথায় ছিল? কারও কারও কাছে অস্বাভাবিক বড়, পেটমোটা। সার্জারি করতে গেলে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও কোন কোন অর্থনীতিবিদের মতে, দেশে যদি কর ফাঁকি দেয়া বন্ধ হতো এবং করের আওতাধীন প্রতিটি নাগরিক যথাযথভাবে কর প্রদান করত তাহলে বাজেটের আকার সহজেই বর্তমানের দ্বিগুণ করা যেত। আমদানি-রফতানি শুল্কের ক্ষেত্রেও ফাঁকির অবাধ ব্যবস্থা বছরের পর বছর চলে আসছে। বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন বাস্তবায়নের সক্ষমতার এমন স্তরে উঠে এসেছে যেনিজস্ব অর্থায়নেই সব করা সম্ভব; এখন আর গৌরীসেনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, হবে না। সরকার এবার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়কর খাতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আয়করের রেট বৃদ্ধি করে নয়, কারও গলাটিপেও নয়। বরং করদাতার ক্ষেত্রটাকে সম্প্রসারিত করে। অর্থাৎ যারা কর প্রদানের যোগ্য অথচ কর দিচ্ছেন না তাদের করের আওতায় আনাই এবারের বাজেটের কৌশল। যেমন বর্তমানে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা ২০,০০,০০০। এখানে এবারের বাজেটে করদাতার সংখ্যা ১,০০,০০,০০০ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কৃষিজীবীদের করের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ যারা কর প্রদানের যোগ্য। তবে কৃষিজীবীদের করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতার আশ্রয় নিতে হবে। কে না জানে আয়করের খাতায় নাম লেখালেও রক্ষা নেই। ঘুষঘোর আয়কর কর্মচারী-কর্মকর্তা, অসৎ আইনজীবী জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলার ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। ধরুন, আপনি একজন বড় কৃষক। গত বছর আপনার ফসল ভাল হয়েছে, ভাল দামও পাওয়া গেছে। হিসাব করে করও দিয়েছেন। পরের বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল মাইর গেল এবং আয় কম হলো। কাজেই আয়করও কম হওয়ার কথা। আয়কর কর্মকর্তারা বলবেন- আপনি গোপন করেছেন এবং এবারও আগেরবারের মতো একটা অঙ্ক বসিয়ে দেবেন। এবার আপনি যতই ধর্ণা দেন না কেন কাজ হবে না। তবে হবে, মোটা অঙ্কের ঘুষ দিলে। ধরুন স্বাভাবিক নিয়মে আপনি কর দিতে চান, কিন্তু আপনার আইনজীবী বাধা দেবে। তারও যুক্তি আছে, এবারে বেশি দিয়ে পরেরবার (ফসলহানির কারণে) কম দিতে গেলে কর্মকর্তারা মানবে না। অযৌক্তিক বাড়তি কর, ঘুষ, সব মিলিয়ে আপনার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। বাজেটে আরেকটি জায়গায় সরকারের কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। তা হলো ঋণখেলাপীদের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সরকার ছাড় দেবে না। ঋণখেলাপীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পলিটিক্যাল পার্টিকে চাঁদা দেয়। কি করে তাদের গায়ে হাত দেবেন? এসব কথা সংসদে বলার কথা আমাদের বিরোধী দলের। তাও আবার দল দুটি। সাংবিধানিক এবং নয়াপল্টনের। প্রথমটি নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের সহযোগিতা নিয়ে। অপরটি মূলত নয়াপল্টন ও গুলশান কার্যালয়ের বিরোধী দল তথা বিএনপি। তারা অবশ্য দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই নির্বাচন করেছে। জাতীয় পার্টি সংখ্যায় বিএনপির চেয়ে বেশি। অতএব তারা সাংবিধানিক বিরোধী দল। কাজেই এই গ্রুপটি সংসদে এবং সংসদের বাইরে তথাকথিত ‘গঠনমূলক’ বিরোধিতা করছেন। বাকি থাকে দ্বিতীয় গ্রুপ বিএনপি। তারা সংসদে ঢুকে জনগণের কথা, আইন প্রণয়নের কথা না বলে কেবল তাদের দলের পক্ষে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে কথা বলেন। প্রথমত. মিথ্যা বলেন তাদের দল, দলের নেতা-নেত্রীদের চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য। দ্বিতীয়ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলতে থাকেন, তাও ৯৮%ই মিথ্যার ওপর। যেমন বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সবে ধন নীলমণি (লন্ডনে লেখাপড়া করেছেন) ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রথম দিন শপথ গ্রহণ করে সংসদে ঢুকেই বললেন, এই সংসদ ‘অনির্বাচিত’ ‘অবৈধ’। বিএনপির আরেক সদস্য হারুনুর রশীদ। এই ভদ্রলোক ‘মি. পাপিয়া’ নামে পরিচিত। এক সময় পাপিয়া নামের এক নেত্রী নয়া পল্টনের সামনে পুলিশের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করতে করতে সংরক্ষিত কোটায় সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন এবং সংসদে মিথ্যা-অশ্রাব্য বক্তব্য দিয়ে বিখ্যাত-কুখ্যাত হয়েছিলেন। এবার বিএনপি তার জামাইকে নমিনেশন দিয়েছে, পাসও করেছে। পাপিয়াকে বদলে রুমিন ফারহানাকে সংরক্ষিত আসনে দিয়েছে। অবশ্য প্রচলিত ধারণা হলো রুমিন ফারহানার নমিনেশন পাওয়ার পেছনে যেসব কারণ বিদ্যমান-ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা পঞ্চাশ-ষাটের দশকের ব্যর্থ রাজনীতিক অলি আহাদের কন্যা। এই ভদ্রলোক সাংগঠনিক নেতৃত্বের দৌড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে হেরে গিয়ে সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছেন। নিজের কোন সংগঠন ছিল না। তাতে কি? সাপ্তাহিক ‘ইত্তেহাদ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন এবং তাতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যা খুশি লিখতেন। বঙ্গবন্ধু ঐসব বিরোধিতা কানেও তুলতেন না। পাত্তাও দিতেন না। এমনকি এই অলি আহাদ এত নিচে নেমেছিলেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনী ফারুক-রশীদদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন এই ধারা অব্যাহত থাকে। টিভির টকশোঅলারা রুমিনকে পেলে খুশি হয় এ জন্য যে, তিনি চিৎকার করে মিথ্যা বলতে পারেন। সঞ্চালক তাকে যতই থামাতে চান তিনি মানেন না, বলেই যান। এতে টিভি ম্যানেজমেন্ট খুশিই হয়। রুমিন বেশ কিছুদিন লন্ডনে ছিলেন। শোনা যায়, ঐ সময় তারেক রহমানের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হন। যে কারণে দলীয় নেত্রী সেলিমা রহমান, শ্যামা ওবায়েদ, পাপিয়াদের পেছনে ফেলে নমিনেশন দৌড়ে ফার্স্ট হয়ে যান। আমি দৈনিক জনকণ্ঠে চতুরঙ্গ পাতায় আমার নিয়মিত কলামে (টক শোর মতো সংসদে মিথ্যা বলে পার পাওয়া যায় না) তার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম সংসদ অবৈধ হলে তিনি অবৈধ নন কি? সংসদ সদস্যরা যদি সংসদের সন্তান হয় তাহলে সবাই ‘অবৈধ সন্তান এবং ‘অবৈধ সন্তান’-এর প্রতিশব্দ মোটেই সুশ্রাব্য নয়, তাই ব্যবহার করিনি। তবে রুমিন ফারহানা পরিচয় দিতে গিয়ে তার বাবার পরিচয় তুলে ধরেছিলাম। পরে সংসদে বক্তব্য প্রদানকালে রুমিন বলেছেন, এসব লেখা নাকি সভ্য লেখা নয়। কোন সভ্য মানুষ লিখতে পারে না। আমি সংসদে এর জবাব দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়াভাবে দিতে পারিনি। আমি বাজেট বক্তৃতায় আমার এলাকার কথা বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। কেননা, বাংলাদেশ গত ১০ বছরে যেভাবে অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ এবং স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, যার ছায়া গ্রামেও পড়েছে দৃশ্যমানভাবে, ফরিদগঞ্জে তার ছিটেফোঁটাও পড়েনি। এর কারণ ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর কার্যত বিগত ৪৩ বছরে এই প্রথম আমিই নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে সংসদে এসেছি। আমাকে ৪৩ বছরের পিছিয়ে পড়া ফরিদগঞ্জকে টেনে তুলতে হচ্ছে। কে না জানে, বিএনপির উন্নয়ন আর গণতন্ত্র জিহ্বার আগায়, ৫৪ হাজার বর্গমাইলের কোথাও নেই। নেই ফরিদগঞ্জ। এই রুমিন ফারহানা যখন বলেন, খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক (দুজনই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে একজন দেশের কারাগারে আরেকজন দন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে) সবচেয়ে জনপ্রিয়। তখন তো জবাব দিতেই হয়। এতিমের টাকা মেরে খালেদা কারাগারে। তাকে জনপ্রিয় বলে রুমিন বাংলাদেশের জনগণকে অপমান করেছেন। জনগণ কি হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন নাম ভুলে গেছেন? বিএনপির হারুনুর রশীদ কথায় কথায় পবিত্র কোরানের রেফারেন্স টানেন। সময় পেলে বাজেট বক্তৃতায় তাকে জিজ্ঞেস করতাম, সংসদের বাইরে কোথায় মিথ্যা বলা যাবে? কোরানের কোথায় আছে? বরং আমি জানি কোরান শরীফের সুরা আল ইমরানের ৬১ নং আয়াতের শেষাংশ ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা’নত।’ (লানাতাল্লাহি আ’লাল কাজেবিন)। এই লা’নত শব্দের অর্থ বাংলাভাষী মানুষও জানে। আর ব্যারিস্টার ফারহানা যখন বলেন, তারেক রহমান সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা (?) হাসি পায়। রুমিন ফারহানার বাংলা জ্ঞান সীমিত বলে মনে হয়। বলতে চেয়েছেন জনধিক্কৃত, বলে ফেলেছেন উল্টোটা। বরং এবারের পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দেশের উন্নয়ন ও আর্থিক অনিয়মের ওপর মুখ খুলেছেন। সিনিয়র এমপি ও নেতা মুহম্মদ নাসিম গত মঙ্গলবার সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় ঋণখেলাপীদের একহাত নিলেন। বললেন, ঋণখেলাপীদের কোনভাবেই ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। নৌকা প্রতীকে জাসদ এমপি মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেছেন, তার বাড়ির কাছে (চট্টগ্রাম) একটি ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয় ৪/৫ বছর আগে। অথচ আজ পর্যন্ত কাজ শেষ হচ্ছে না। বছর বছর নির্মাণ ব্যয় বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় আমাকে এই সংসদ ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই। কি হবে এই সংসদে থেকে? এবার ফরিদগঞ্জের দুঃখের কথাগুলো বলতে চাই-আমাদের এবারের বাজেট ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। আগেই বলেছি, এটি বাস্তবায়নে এখন আর গৌরীসেনের দিকে তাকানোর দরকার নেই। নিজস্ব উৎস থেকেই জোগান হয়ে যাবে-আমাদের রেমিটেন্স যেমন বেড়েছে তেমনি দেশজ অর্থনীতির ভিতও মজবুত। আমার ফরিদগঞ্জের আগের এমপিরা ’৭৫-এর পর সবই ছিল বিএনপির। তারা নিজেরা তো কাজ করেইনি, উপরন্তু কেউ সাহায্য করতে চাইলেও গ্রহণ করেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় চক্রান্তে (শামসুল হক গং) আমি সামান্য ভোটে হেরে যাই। পাস করে বিএনপির লায়ন হারুন। আমি নির্বাচন পরবর্তী সমাবেশে তাকে বলেছিলাম- হারুন সাহেব, আপনি জিতেছেন, আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আমি হেরে গেলেও সরকার আমাদের। আপনি ফরিদগঞ্জের উন্নয়নে যে যে প্রকল্প দরকার করুন, আমি আপনার সঙ্গে মন্ত্রণালয়সহ যেখানে যেখানে যাওয়া দরকার যাব। দু’জনে মিলে ফরিদগঞ্জ গড়ে তুলব। কিন্তু এই ভদ্রলোক এলাকাই ছেড়ে দেন। আমার সাহায্য নেননি, কাজও করেননি। ২০১৪-তে ১৪ দলের কোটায় নমিনেশন দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে কিন্তু তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হকের সঙ্গে আঁতাত করে তার প্রার্থিতা বাতিল করান। ভেতরের খবরটা পাঠক অনুমান করে নেবেন আশা করি। অবশ্য এই স্বতন্ত্র প্রার্থী পরে আওয়ামী লীগে মিশে যায় এবং বিগত ৫ বছর এলাকার উন্নয়ন তো করেইনি বরং সমাজ বিরোধীদের ড্রাগ কারবারিদের পেট্রোনাইজ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামায়াতীকরণ, মাস্তানীকরণ ছিল তার কাজ। সম্প্রতি আমার এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি স্বীকার করেছেন, শামসুল হক এখনও ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। এভাবে জামায়াতী শিক্ষক বা পরিচালনা বোর্ড জামাতীদের প্রাধান্য দিয়েছে। আমি বিষয়টি উত্থাপন করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এটাই দুঃখজনক। তাই আমি এবারের সংসদে ফরিদগঞ্জের কিছু দুঃখের কথা তুলে ধরেছি- এক. ফরিদগঞ্জে জরুরীভিত্তিতে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন। অবস্থা এমন হয়েছে যে, আগুন লাগলে চাঁদপুর বা লক্ষ্মীপুর থেকে ফায়ার ফাইটারদের আসতে হয়। অনেক সময় অকুস্থলে পৌঁছার আগেই প্রয়োজনও ফুরিয়ে যায়। ঠিক যেমনটি ছোটবেলায় The Patient had died before the doctor came-এর মতো। দুই. ফরিদগঞ্জে জমি আছে অথচ শিল্পকলা একাডেমী, উন্মুক্ত মঞ্চ তথা শিল্পাঙ্গন নেই, যা অতীব প্রয়োজন। ফরিদগঞ্জ সদরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত তিন একর সম্পত্তি আছে। এই জমিতে শিল্পাঙ্গন হতে পারে। তিন. ফরিদগঞ্জ সদরে একটি স্টেডিয়াম এবং প্রতিটি ইউনিয়নের স্কুল মাঠগুলোকে খেলার মাঠে গড়ে তোলা। চার. বিকেএসপির আদর্শে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। পাঁচ. ফরিদগঞ্জ ডাকবাংলোটি মজবুত সিকিউরিটি বাউন্ডারি ওয়ালসহ নির্মাণ। ছয়. যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠােেন পাকা ঘর নেই সেখানে পাকা বিল্ডিং করা-যেমন, বালিথুবা আবদুল হামিদ হাই স্কুল, গল্লাক আদর্শ কলেজ, বালিথুবা অদুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা। সাত. ডাকাতিয়া নদী পুনঃখনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনা। এককালে এই নদী ছিল গলদা চিংড়িসহ মিষ্টি পানির মাছের ভা-ার। বড় বড় মহাজনী নৌকা, মালবাহী জাহাজ চলত। দুইপারের ভূমি দস্যু আর ইটভাঁটির মালিকদের দখল-অত্যাচারে এখন শীর্ণকায়। নৌকাও চলে না। অবিলম্বে ড্রেজিং করা না হলে ডাকাতিয়া ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে। বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আট. ডাকাতিয়ার ওপর উটতলি ব্রিজ নির্মাণ। এটি ফরিদগঞ্জ, রামগঞ্জ, হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর এই ৪ থানার সরাসরি কানেকটিভিটি এনশিয়র করে। নয়. উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বেড়িবাঁধের) সকদি রামপুর, খাড়খাদিয়া, কৃষ্ণপুর, সরলাল, মূলপাড়া. বাচপাড়, বদরপুর, মনতলা, ঘনিয়া, মানুরী, বাশারা, মুন্সীরহাট, বৈচাতলি, শ্রীকালিয়া, সুরঙ্গচাইল প্রভৃতি গ্রাম বর্ষায় পুরো সময় পানির নিচে থাকে। মূল ভূখ-ের সঙ্গে পাকা রাস্তা নেই। পাকা রাস্তা নির্মাণ জরুরী। কয়েকদিন আগে একটি কাঁচা রাস্তার কাজ পরিদর্শনকালে বদরপুরের এক ভদ্রলোক বললেন, স্যার আমাদের রাস্তাগুলো, পুলগুলো পাকা করে দিন। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। ভাল বিয়েও দিতে পারি না মেয়েদের। সম্বন্ধ আসে, কিন্তু যাতায়াতের করুন অবস্থা দেখে বরপক্ষ চলে যায়। সার্বিক বিবেচনায় বলতে পারি। এবারের সংসদ আইন প্রণয়নের জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রস্তাবাবলী আলোচনায়, প্রশ্নোত্তরে, বিশেষ করে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা সময়ের সবচেয়ে মেধাবী, সাহসী, দক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নোত্তরপর্ব সংসদকে প্রাণবন্ত করে চলেছে। তিনি সর্বক্ষণ সংসদে থেকে একে অর্থবহ করে তুলেছেন। ঢাকা ॥ ২৭ জুন, ২০১৯ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সংসদ সদস্য, সিনেট সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×