ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিতে এক পা অস্ট্রেলিয়ার

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৬ জুন ২০১৯

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিতে এক পা অস্ট্রেলিয়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক লর্ডসে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৬৪ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ৭ ম্যাচে ৬ জয়ে সর্বাধিক ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা। এ পরাজয়ে হট ফেবারিট ইংল্যান্ডের সেমির পথ কঠিন হয়ে গেল। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট তাদের এবং পরবর্তী দুই ম্যাচে শক্তিশালী ভারত ও গত আসরের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অন্তত একটিতে জিততেই হবে তাদের। আগে ব্যাট করে অধিনায়ক ও ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চের শতকে ভর দিয়ে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান তুলেছিল অসিরা। জবাবে জ্যাসন বেহরেনডর্ফ ও মিচেল স্টার্কের গতির তোড়ে দলীয় ৫৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ডের হয়ে লড়াই করেছেন শুধু বেন স্টোকস। তিনি ৮৯ রানে সাজঘরে ফেরার পর ইংল্যান্ড ৪৪.৪ ওভারে ২২১ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নেমে বাঁহাতি পেসার বেহরেনডর্ফ ৪৪ রানে ৫টি ও স্টার্ক ৪টি উইকেট শিকার করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৩৩ রান তাড়া করতে গিয়ে ২১২ রানেই গুটিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ড হেরেছিল ২০ রানে। অপ্রত্যাশিত সেই হারের পর দুরন্ত অসিদের বিপক্ষে ২৮৬ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা তাদের জন্য বেশ কঠিনই হয়ে যায়। কারণ লর্ডসের উইকেট পেসারদের জন্য কতটা সহায়ক সেটা শুরুতেই গতিতারকা মিচেল স্টার্ক ও বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা জ্যাসন বেহরেনডর্ফ বুঝিয়ে দেন ইংলিশ ওপেনারদের। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই জেমস ভিন্সকে (০) বোল্ড করে অসিদের আরও আত্মবিশ্বাস উপহার দেন এ বাঁহাতি। চতুর্থ ওভারে জো রুটকে (৮) ও ষষ্ঠ ওভারে অধিনায়ক ইয়ন মরগানকে (৪) শিকার করে ত্রাসের সৃষ্টি করেন স্টার্ক। বিপর্যয়ের মুখে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ভালই খেলছিলেন স্টোকস। কিন্তু ১৪তম ওভারে ২৭ রান করা বেয়ারস্টোকে সাজঘরের পথ দেখান বেহরেনডর্ফ। শুরুর এই বিপর্যয় অনেকখানি পিছিয়ে দেয় ইংলিশদের। লড়াই শুরু করেন স্টোকস-জস বাটলার। পঞ্চম উইকেটে তারা ৮১ বলে ৭১ রান যোগ করে কিছুটা স্বস্তি আনেন স্বাগতিকদের তাঁবুতে। কিন্তু মার্কাস স্টয়নিস ব্রেক থ্রু এনে দেন আবার অসিদের, ফিরিয়ে দেন ২৭ বলে ২৫ রান করা বাটলারকে। এরপরই মূলত ইংলিশদের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। তবে ক্রিস ওকসকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান স্টোকস। তিনি অর্ধশতক পেয়ে যান ৭৫ বলে। ৫৩ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ভেঙ্গে যায় ফিরতি স্পেলে ফিরে স্টোকসকে বেহরেনডর্ফ নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করলে। একাই লড়াই চালানো স্টোকস ১১৫ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ৮৯ রান করেন। এরপরই মূলত অসিদের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ওকসও ২৬ রান করে বেহরেনডর্ফের শিকার হন। শেষ পর্যন্ত ৩২ বল আগেই ২২১ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে বেহরেনডর্ফ ৪৪ রানে ৫টি ও স্টার্ক ৪টি উইকেট তুলে নেন। ৭ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে আবার চলতি আসরের সর্বাধিক উইকেট শিকারি হয়েছেন স্টার্ক। এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংলিশরা। শুরুটা দারুণভাবে করেন দুই অসি ওপেনার ফিঞ্চ-ওয়ার্নার। ফর্মের তুঙ্গে থাকা এ দুই ব্যাটসম্যান বেশ সতর্কভাবেই শুরু করেছিলেন। ব্যাটিংয়ের জন্য সুবিধাজনক প্রথম পাওয়ার প্লে’র সুযোগটা না নিয়ে সেই ১০ ওভারে মাত্র ৪৪ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু উইকেট না হারানোয় সেটিই তাদের বড় জুটির ভিত গড়ে দিয়েছিল। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে পরবর্তীতে স্বচ্ছন্দে ব্যাট চালিয়েছেন ফিঞ্চ-ওয়ার্নার। উভয়ে অর্ধশতক হাঁকান। মাত্র ১৭.৫ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ১০০ পেরিয়ে যায় অসিরা। তবে দলীয় ১২৩ রানের মাথায় ৬১ বলে ৬ চারে ৫৩ রান করা ওয়ার্নার সাজঘরে ফেরেন মঈন আলীর অফস্পিনে। এরপর ফিঞ্চের সঙ্গে উসমান খাজার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান আসে। শতরান করেন ফিঞ্চ। তবে তিন ওভারের মধ্যেই প্রথমে খাজা (২৩) বেন স্টোকসের বলে বোল্ড ও ফিঞ্চ ১১৬ বলে ১১ চার, ২ ছক্কায় ১০০ রান করে জোফরা আর্চারের শিকার হন। ফিঞ্চ-খাজার দ্রুত বিদায়ের পর উজ্জীবিত ইংলিশ বোলাররা চেপে ধরেন অসি ব্যাটসম্যানদের। স্টিভেন স্মিথ একপ্রান্তে ধরে রাখলেও দ্রুতই বিদায় নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১২) ও মার্কাস স্টয়নিস (৮, রান আউট) হলে বিপদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। তবে ততক্ষণে দুশো পেরিয়ে যাওয়ায় খুব একটা বিচলিত হয়নি অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ ৩৪ বলে ৫ চারে ৩৮ রান করে আউট হওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার দলীয় রান হয়ে গেছে ২৫০। শেষদিকে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এ্যালেক্স ক্যারে ২৭ বলে ৫ চারে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তবে অন্যদের ব্যর্থতায় শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩৭ রান করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান তোলে তারা। ওকস ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ২টি এবং আর্চার, উড, স্টোকস ও মঈন ১টি করে উইকেট নেন। কোন উইকেট নিতে না পারলেও মিতব্যয়ী বোলিংয়ে লেগস্পিনার আদিল রশিদ ১০ ওভারে মাত্র ৪৯ রান দেন। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস- ২৮৫/৭; ৫০ ওভার (ফিঞ্চ ১০০, ওয়ার্নার ৫৩, ক্যারে ৩৮*, স্মিথ ৩৮; ওকস ২/৪৬)। ইংল্যান্ড ইনিংস- ২২১/১০; ৪৪.৪ ওভার (স্টোকস ৮৯, বেয়ারস্টো ২৭, ওকস ২৬, বাটলার ২৫, রশিদ ২৫; বেহরেনডর্ফ ৫/৪৪, স্টার্ক ৪/৪৩)। ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ এ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া)।
×