ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট আলোচনা

স্বাধীনতাসহ সব অর্জন ও সাফল্যই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২৪ জুন ২০১৯

 স্বাধীনতাসহ সব অর্জন ও সাফল্যই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশের যত কিছু অর্জন ও সাফল্য সবই এসেছে জাতির পিতার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে। অন্য যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কারণ তারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল না, ছিল পাকিস্তানের দালাল ও তল্পিবাহক। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। মাত্র ১০ বছরে শেখ হাসিনার ব্যাপক উন্নয়ন সারাবিশ্বকেই আলোড়িত করেছে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ আফছারুল আমীন, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাম উদ্দিন প্রমাণিক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারী দলের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সালাম মোর্শেদী, একেএম রহমতুল্লাহ, আবিদা আনজুম মিতা, নজরুল ইসলাম বাবু, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মোরশেদ আলম, জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ প্রমুখ। আলোচনায় বাজেটের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়ই প্রাধান্য পায়। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমরা সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের জন্মের মধ্যে দিয়েই দেশের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এ দেশের যত কিছু অর্জন ও সাফল্য সবই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে, অন্য কেউ কিছু দিতে পারেনি। কারণ তারা ছিল পাকিস্তানের দালাল ও তল্পিবাহক সরকার। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। সারাবিশ্বের মানুষ আজ জানতে চায়, শেখ হাসিনার হাতে কী জাদুর কাঠি রয়েছে যে এত অল্প সময়ে দেশের এত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। শুধু দেশেরই নয়, সারাবিশ্বের নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার উন্নয়ন সারাবিশ্বকে আলোড়িত করেছে। আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দলের জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পৃথিবীতে অনেক বড় বড় নেতা আসবেন, যাবেন, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা কোনদিন আসবে না। তাঁর হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না। তিনি শুধু এশিয়া নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুটি স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। এক হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা, অন্যটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাঙালী জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাকি কাজ বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আমরা দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। চমৎকার বাজেট হলে কিছু কিছু অসামাঞ্জস্য রয়েছে, তা ঠিক করতে হবে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের জন্মদিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা- এক ও অভিন্ন। পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে আমাদের দুঃখ থাকত না, তাঁকে হত্যা করল এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার বেঈমান মোশতাক- জেনারেল জিয়া গংরা। প্রমাণ আছে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট ছিল। জিয়ার বাবা-মা কোনদিন বাংলাদেশে আসেননি, তাদের কবরও পাকিস্তানে। বগুড়ায় তাঁর পূর্বপুরুষরা কবে এসেছিল কেউ বলতে পারে না। আর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি জেনারেল জানজুয়ার আতিথ্য নিয়ে পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টে আরাম-আয়েশে ছিলেন। সে কারণে জানজুয়া মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া শোক দিয়েছেন ও পাকিস্তানে গিয়ে তার মাজার পর্যন্ত জিয়ারত করেছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন। তাঁর আদর্শ মেনে তাঁর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতেই হবে। স্বাধীনতা বিরোধীরা বিশ্বের কোথাও রাজনীতি করতে পারে না, পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে তারা রাজনীতি করে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিএনপি এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। এরা ক্ষমতায় থাকতে দেশের উন্নয়নে কিছুই করেনি। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা বাজেট নিয়ে নিন্দা করেন, তারা একটু গ্রামে গিয়ে দেখুন প্রতিটি ঘরে কীভাবে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে, রাস্তা-ঘাট পাকা হয়ে গেছে। গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, সংসদে ওইদিন আমি যদি শপথ না নিতাম তাহলে আজ বিএনপির যে কয়জনই হোক না কেন তারা শপথ নিত বলে আমার মনে হয় না। বঙ্গবন্ধুর অনুসারি হিসেবে আমি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার ওদিকেই (সরকারি দল) থাকার কথা ছিল, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমরা এখন এদিকে (বিরোধী দল)। ২০০৮ সালের পর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। আমি কখনও আওয়ামী লীগ ছাড়িনি, আওয়ামী লীগ আমাকে কখনও বহিষ্কার করেনি। তবে রাজনীতির কারাগারে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতেই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ড. কামাল হোসেনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতি হিসেবে আমরা উচ্চাভিলাষী না হতাম তবে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র আমরা পেতাম না। তাই উচ্চাভিলাষী হতেই হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত তিন দশকে সারাবিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তার রিপোর্টে তারেক রহমানকে দুর্ধর্ষ একজন লোক ছাড়াও বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি। ১৬/১৭ ঘণ্টা জাতিকে অন্ধকারে রেখেছে। ছায়া সরকার হাওয়া ভবন এবং খালেদা জিয়া-তারেক-মামুনরা বল্লাহীনভাবে দুর্নীতি করেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ৬০ মন্ত্রিসভার এক তৃতীয়াংশ বিপুল অর্থের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন তারেক রহমান। আন্তর্জাতিক তদন্তে এসব বেরিয়ে এসেছে। এ বছরের মধ্যে দেশের শতভাগ গ্রামে বিদ্যুত সুবিধা যাবে, প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি শুধু ব্যবসাবান্ধব নয়, জনকল্যাণমূলক, বৈষম্যমূলক উন্নয়নমূলক বাজেট। বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ঋণ খেলাপীরা ঋণ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। চীনের মতো ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর বাস্তবায়ন করা না গেলে বড় বাজেট দিয়ে কোন লাভ হয় না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজধানীর লেক ও খালগুলো গণহারে ভরাট করে গণহারে বিএনপির লোকদের প্লট দিয়েছে। বিএনপি পল্লী বানিয়েছে। অথচ সংসদে এসে তারা মিথ্যাচার করে। আওয়ামী লীগ রাজউকের মাধ্যমে প্লট বিক্রির ক্ষেত্রে ন্যূনতম রাজনীতিকরণ করেনি।
×