ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি হবে

মশার ওষুধ ছিটানো নিয়ে অভিযোগ বন্ধের উদ্যোগ ডিএনসিসির

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২২ জুন ২০১৯

 মশার ওষুধ ছিটানো নিয়ে  অভিযোগ বন্ধের  উদ্যোগ ডিএনসিসির

মশিউর রহমান খান ॥ শহরের কোন স্থানেই মশার ওষুধ ছিটানো হয় না এমন পুরনো অভিযোগ পুরোপুরি বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। কোন এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি এমন অভিযোগ অতিগুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করবে সংস্থাটি। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি কর্তৃক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে ও কোন প্রকার বেতন-ভাতা পাবেন না কোন কর্মী। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে অতিদ্রুতই প্রতিটি ওয়ার্ডে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জনকণ্ঠকে জাননিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। কমিটি প্রতিটি এলাকার মশক নিধনে নানা সুপারিশ করবে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষভাবে জোর দিতে এসব সুপারিশ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা বিশেষ বিবেচনাপূর্বক বাস্তবায়ন করবে। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করায় শাস্তির মুখোমুখিও হতে হবে মশক নিধন কর্মীদের। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ীই কেবল মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হবে ও মশাকে সম্পূর্ণ নির্মূলে কাজ করবে। ডিএনসিসি সূত্র জনকণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না এমন অভিযোগ স্থায়ীভাবে সমাধান করতেই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ চলতি বর্ষায়ই কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। এই প্রথমবারের মতো এবার কার্যকরভাবে মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশা কমাতে চায় সংস্থাটি। বর্তমানে প্রতিবছর শত চেষ্টা সত্ত্বেও মশার কামড়ে ডেঙ্গু, এডিস ও ম্যালেরিয়াসহ নানা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু মশার কামড়েই শত শত লোকের মৃত্যু হয়। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি স্থানীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, মাদ্রাসা প্রধান বা মসজিদের ইমাম বা খতিব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী, সরকারী প্রতিনিধি ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠন করা হবে। কমিটি নিয়মিতই মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। কমিটি নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়া হয় না এমন অভিযোগ যাচাই করে সরেজমিনে যাচাই করবে ও মশার ওষুধ ছিটানোর পরও সমস্যা হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে। একই সঙ্গে কোন এলাকায় মশক নিধনের কোন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না এমন অভিযোগ এলে তা তদন্ত করবে কমিটি। এর পর দায়িত্বে অবহেলা করলে বা কোন অপরাধ করলে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করবে কমিটি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, মশক নিধন কর্মীর বেতন প্রদানের জন্য প্রতিমাসের নির্দিষ্ট সময়ে কমিটির ৭ সদেস্যের মধ্যে কমপক্ষে ৪ সদস্য মশক নিধন কার্যক্রম সন্তোষজনক এমন লিখিত সুপারিশ করলেই কেবল মশক নিধন কর্মীর বেতন প্রদান করবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশের মতামত ওই কর্মীর বিরুদ্ধে গেলে দায়িত্ব পালন করেননি মর্মে মশক নিধন কর্মীর বেতন-ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে ডিএনসিসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা উত্তর এলাকার মশা নিধনে আমরা সব সময়ই কাজ করছি। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে বর্তমানে আমরা মশা উৎপাদনের স্থান চিহ্নিত করে সেসব স্থানে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিতই কাজ করছি। এর পরও দীর্ঘবছর ধরে মশক নিধন কর্মীরা মশার ওষুধ নিয়মিত ছিটায় না এমন অভিযোগ রয়েছে। এবার এই অভিযোগ পুরোপুরি বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে আমরা এই প্রথমবারের মতো জনসম্পৃক্ততা সংযোজন করেছি। আমরা চাই ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ড হোক মশকমুক্ত- পরিচ্ছন্ন। মেয়র বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রধান করে বিশিষ্ট সমাজসেবক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মসজিদ, মাদ্রাসার প্রধান ইমাম বা খতিব, এলাকায় বসবাসকারী সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করব। ওই কমিটি নিজের এলাকা তথা পুরো ওয়ার্ডের মশক নিধনের লক্ষ্যে কাজ করবে ও মশক নিধনে নানা সুপারিশ করবে। এসব সুপারিশ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা বিশেষ বিবেচনাপূর্বক বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া কোন মশক নিধনকর্মী যদি দায়িত্ব পালন না করেন বা কোন এলাকায় মশা মারতে যান না এমন অভিযোগ এলে তাও তদন্ত করবে ওই কমিটি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, মশক নিধন কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। মেয়র বলেন, পুরোপুরি মশকমুক্ত করতে কমিটির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের লিখিত মতামতের পরই কেবল মশক নিধন কর্মীর বেতন প্রদান করা হবে। অন্যথায় কোন কর্মীকেই বেতন প্রদান করা হবে না। মূলত জনগণই যেহেতু মশার কামড়ে কষ্ট ভোগ করেন তাই তাদের সহায়তা ও পরামর্শ নিয়েই আমরা মশক নিধনে একযোগে কাজ করতে চাই।
×