ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় ২৮৪ পাইল বসেছে, বাকি মাত্র দশ

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৫ জুন ২০১৯

 পদ্মায় ২৮৪ পাইল  বসেছে, বাকি মাত্র দশ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল মাওয়া থেকে ফিরে ॥ নদী তীরের জনপদগুলো সবুজের ছড়াছড়ি। আর পদ্মার চরের নানা রকমের গাছপালা বাতাসে দুলছে। সেখানে পাখির কলকাকলি। পাখিগুলো দোল খাওয়া গাছগুলোর সঙ্গে খেলা করছে। বিদায়ী গ্রীষ্মের রোদ, সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। কিন্তু পদ্মার পানি টলমলে। দেখেই নদীতে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে হবে। শুক্রবার এমনই ছিল নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এলাকা। মাওয়ার কাছাকাছি ১৪ নম্বর খুঁটির কাছে একটি স্প্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের স্প্যানসহ ভাসমান ক্র্যানবাহী বিশাল জাহাজ। এটি সেতুর ৫ নম্বর মডিউলের ডি নম্বর স্প্যান। অর্থ্যাৎ এটি ‘৫-ডি’ নম্বর স্প্যান। এটি স্প্যানটি বসানোর উপযোগী হয়েছে। তবে এর ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটি দুটি এখনও সম্পন্ন হয়নি। তাই ইয়ার্ডের জায়গা সংস্কুলান না হওয়ার কারণে এটি স্টোর করার জন্য নেয়া হচ্ছে জাজিরার কাছে ২৯ নম্বর খুঁটির কাছে পদ্মার চরে। ‘মাঝের চর’ এই তীরে আরও একটি স্প্যান ঈদের পরদিনই সদ্য তৈরি প্ল্যাট ফর্মে স্টোর করা হয়েছে ‘৫-ই’ নম্বর স্প্যান। পাশে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি আছে। সেখানেই এই ‘৫-ডি’ নম্বর স্প্যানটি আপাতত স্টোর করা হবে। তাই বৃহস্পতিবার মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের জেডি থেকে জাহাজটি এই স্প্যান নিয়ে রওনা হয়। পরে ১৪ নম্বর খুঁটির কাছে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। সামনে ফেরি চ্যানেল রয়েছে। নানা কারণেই এটি এখানে রাখা হয়েছে। শনিবার নাগাদ জাজিরা প্রান্তের চরের প্ল্যাটফর্মে রাখার কথা রয়েছে। পরে এর ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজ সম্পন্ন হলে এটি খুঁটি উঠিয়ে দেয়া হবে। আর ঈদের পরদিন চরের প্ল্যাটফর্মে রাখা ‘৫-ই’ নম্বর স্প্যানটি বসানো হবে ২৯ ও ৩০ নম্বর খুঁটিতে। এই দুই খুঁটি এখনও সম্পন্ন হয়নি, কাজ চলছে। চীন থেকে এ পর্যন্ত আসা ২৪টি স্প্যানের মধ্যে এই নিয়ে ১৫টি সম্পন্ন অবস্থায় ইয়ার্ড থেকে বের করে আনা হলো। যার ১৩টি খুঁটিতে উঠানো হয়েছে। আর এই দুটি স্টোর করা হচ্ছে খুঁটির কাছাকাছি। আর বাকি ৯টি স্প্যান ইয়ার্ডে ফিটিং করা হয়েছে বা হচ্ছে। চলতি জুন মাসেই সেতুর ১৪তম স্প্যান বসতে যাচ্ছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে বসবে ‘৩-সি’ নম্বর স্প্যান। সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলী রাজা জানিয়েছেন, ইয়ার্ডে এই স্প্যানটি বসানোর উপযোগী করা হয়েছে। ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিও স্প্যানটি বহনের উপযোগী। তাই এখন এটি বসানোর চূড়ান্ত কার্যক্রম চলছে। এদিকে সেতুর পাইলিং শেষ হচ্ছে চলতি জুন মাসেই। ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৮৪টি পাইলই বসে গেছে। এখন বাকি রয়েছে মাত্র ১০টি পাইল স্থাপন। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন বাকি ১০টি পাইল চলতি জুন মাসেই স্থাপন করা সম্ভব হবে। পাইলিং শেষ হচ্ছে চলতি মাসে পদ্মা সেতুর পাইলিং শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। দায়িত্বশীল এই প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে জানান, সেতুর মূল ভীতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই পাইল স্থাপন। পদ্মার বৈচিত্র্যপূর্ণ স্রোতধারা আর নদীর তলদেশের হরেক রকম স্তরের কারণে পাইল স্থাপনে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। তবে আধুনিক এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে সুঠিকভাবে পাইলগুলোর নক্সা করা হয়। সেই অনুযায়ী সফলভাবে ২৮৪টি পাইলই বসে গেছে। এই পাইল স্থাপানে সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে মূল চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। উত্তাল পদ্মায় বিশাল বিশাল হ্যামর ব্যবহার করে মূল নদীতে প্রায় ১২৮ মিটার গভীরে এই পাইল স্থাপন করা হয়। যা বিশ্বে বিরল ঘটনা। এত গভীরে পাইল বসিয়ে সেতু তৈরির ঘটনা বিরল। এরপর নদীর তলদেশে কাদা মটির কারণে ট্যাম পাইল (খাঁজ কাটা পাইল) বসানো হয়েছে বা হচ্ছে ৭৭টি। এই প্রযুক্তি বিশ্বে এই প্রথম। তাই নানা কারণেই পদ্মা সেতুর পাইল অবকাঠামোর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মূল সেতুর ৪২ খুঁটির ২৯৪টি পাইল। যার মধ্যে নদীতে ৪০ খুঁটিতে ২৬২টি পাইল। আর দু’তীরের দুটিতে ১৬টি করে ৩২টি পাইল। এখন নদীর এই ১০টি পাইল বসানো বাকি মাত্র। সেতুর ১১, ২৬, ২৭, ২৯ এবং ৩০ নম্বর খুঁটিতে শুধু পাইলিংয়ের কাজ চলছে বা শেষ হয়েছে। বাকি ৩৭টি খুঁটি (পিয়ার) পরের ধাপে চলে গেছে। অর্থাৎ ২৮টি খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। আর ৯টি খুঁটিতে ক্রংক্রিটিংয়ের কাজ চলছে। পদ্মায় স্লাব বসছে সমানে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসে যাওয়া স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসছে সমানে। এ পর্যন্ত ৩২০টি রেলওয়ে স্লাব এবং ২৮টি রোডওয়ে স্লাব বসানো হয়েছে। তবে রেলওয়ে স্লাব তৈরি করা হয়েছে এ পর্যন্ত প্রায় ২৪শ’। আর রোডওয়ে স্লাব তৈরি হয়েছে ৭শ’র বেশি। স্প্যানের ওপরে বসছে রোডওয়ে স্লাব। আর নিচে বসছে রেলওয়ে স্লাব। প্রায় উভয় তলায় প্রায় ৩ হাজার করে স্লাব বসবে। সংযোগ সেতুও এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তেই হচ্ছে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতু (ভয়াডাক্ট)। এই সেতুর কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৯টি পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েগেছে। আর বাকি ১৩টি খুঁটি সম্পন্ন হওয়ার এখন শেষ পর্যায়ে। এদিকে খুঁটির ওপরে রেল চলাচলের জন্য এই প্রান্তে ২৪টি আইগর্ডার স্থাপন হয়েছে। একে প্রান্তে ৪২টি করে আইগার্ডার বসবে। আর সংযোগ সেতু উপরের তলায় অন্যান্য যানবাহনের জন্য ‘সুপার টি’ বসানো হবে। এ পর্যন্ত ১শ’ সুপার টি তৈরি হয়েছে। এই সংযোগ সেতুর জন্য দু’পার মিলে সুপার টি লাগবে ৪৩৮টি। তবে এখনও কোন প্রান্তেই সুপার টি স্থাপন করা হয়নি। কিছু দিনের মধ্যেই জাজিরা প্রান্তে ‘সুপার টি’ বসানো হবে। এদিকে মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর ৩৯টি খুঁটির মধ্যে ৬টি খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৩টি খুঁটি এখন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে হরদম কাজ চলছে। এই প্রান্তে রেল চলাচলের আই গার্ডার এখন স্থাপন শুরু হয়নি।
×