ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদাল

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১১ জুন ২০১৯

 ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদাল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবিশ্বাস্য। ১৫ বছরের মধ্যে ১২ গ্র্যান্ডস্লাম জিতছে একজন, তাও এ রকম দাপটে! রাফায়েল নাদালকে বলা হয় ‘ওয়াল’। দেয়ালের মতো তো যত জোরে ওর দিকে বল মারবে তত জোরে তোমার দিকে বল ফিরে আসবে। রবিবারের ফাইনালে নাদালের প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রিয়ার দমিনিক থিয়েমকে দেখে সে রকমই মনে হচ্ছিল। চার সেটের লড়াইয়ে নাদাল শেষ পর্যন্ত ৬-৩, ৫-৭, ৬-১, ৬-১ জিতলেও থিয়েম অসাধারণ খেলেছেন। বিশেষ করে প্রথম সেটে সাতটা গেমে এত তীব্রতা, এত নাটক ছিল, ফাইনালের প্রতিটা দর্শক বোধ হয় সিট ছেড়ে উঠে পড়েছিলেন নাদাল-থিয়েমের ওই সময়ের লড়াই দেখতে দেখতে। একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিস দেখাল দুই খেলোয়াড়। দ্বিতীয় সেটে সার্ভিস ভেঙ্গে থিয়েম যেভাবে সেট দখল করে নিলেন সেটা খুব বেশি দেখা যায়নি নাদালের বিরুদ্ধে। অবশ্য থিয়েমের ওই প্রতিরোধের পরেই ম্যাচটা ঘুরে যায়। নাদাল একেবারে অন্য রূপে ফিরে আসে। তার পরে দুটি সেটে একেবারে নিখুঁত টেনিস দেখা গেল সর্বকালের সেরা ক্লে কোর্ট খেলোয়াড়ের। একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ঠিক সময়ে নিজের খেলাকে পাল্টে ফেলতে পারেন। নাদাল যেটা করলেন ওই সময়। থিয়েমের আগ্রাসন দেখে নাদাল বুঝতে অসুবিধা হয়নি বয়সে আট বছরের ছোট প্রতিপক্ষকে হারাতে হলে ওকেও পাল্টা আগ্রাসন দেখাতে হবে। যে জন্য বেস লাইনের অনেক কাছাকাছি খেলছিলেন নাদাল। যাতে থিয়েমের শট অনেক তাড়াতাড়ি র‌্যাকেটে পেতে পারেন। বিশেষ করে ব্যাকহ্যান্ড। ওই সময় ওকে নেটেও বেশ কয়েক বার উঠে আসতে দেখা যায়। যেটা নাদালের আগ্রাসী টেনিসেরই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। গত কয়েক মৌসুমে চোট-আঘাতে সমস্যায় ছিলেন নাদাল। চলতি মৌসুমে তিনটি প্রস্তুতি প্রতিযোগিতার একটাতেও জিততে পারেননি। শুধু রোম ওপেন ছাড়া কোন ট্রফি পাননি। যেটা আগে খুব কমই দেখা গেছে তার ক্যারিয়ারে। তাই অনেকে ভেবেছিলেন নাদালের দাপট হয় তো এবার অতটা থাকবে না তার কাছে ঘর-বাড়ি হয়ে ওঠার মতো ফরাসী ওপেনে। কিন্তু নাদাল প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই দেখিয়ে গেছেন ক্লে কোর্ট মানেই তার সাম্রাজ্য। সেখানে অন্য কারও শাসন চলার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই প্রবল প্রতিরোধে পড়ার পর নাদালের ওই একটা চালে থিয়েম মাত হয়ে গেলেন। প্রথম দুই সেটে নাদালের আনফোর্সড এররের সংখ্যা ছিল ২২। তৃতীয় সেটে সেটা পাঁচও গড়ায়নি। এতেই বোঝা যায় কতটা নিখুঁত খেলেছেন ওই সময় নাদাল। চ্যাম্পিয়নরা তো এভাবেই ফিরে আসেন। পরের দুটো সেট ৬-১, ৬-১ জিতে ম্যাচও দখল করে নিতে নাদালের আর সমস্যা হয়নি। অবশ্য থিয়েমকে কিছুটা ক্লান্তও লাগছিল। বৃষ্টির জন্য ফরাসী ওপেনের ম্যাচগুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ায় টানা চারদিন ধরে খেলতে হয় তাকে। তাও আবার নোভাক জোকোভিচকে পাঁচ সেটে ছিটকে দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই নামতে হয়েছিল ফাইনালে। তাই ক্লান্তি চেপে বসাটা স্বাভাবিক। থিয়েম ক্লে কোর্টে যে রকম খেলছেন তাতে বলা যায়, ফরাসী ওপেন জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটা হয় তো নাদাল অবসর নেয়ার পরে। ১২ নম্বর ফরাসী ওপেন এবং ১৮ নম্বর গ্র্যান্ডস্লাম জেতার পরে নাদাল ফেদেরারের সর্বাধিক ২০ গ্র্যান্ডস্লাম জয় থেকে আর দু’ধাপ দূরে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এই নাদাল কি ফেদেরারের রেকর্ড ভাঙ্গতে পারবেন? টেনিস বোদ্ধাদের মতে পারবেন। যদি তিনি এভাবেই খেলে যেতে পারেন, তা হলে আরও দু’-তিনটা গ্র্যান্ডস্লাম জেতা সম্ভব। তবে নাদালের এই রেকর্ড কোন দিন কেউ ভাঙ্গতে পারবেন বলে মনে হয় না। টেনিসের ইতিহাসে ১২ বার ফরাসী ওপেন কেউ কোন দিন জেতেনি। ২০০৫ থেকে প্যারিসে নাদাল যে দাপট দেখিয়েছেন তার ধারে কাছে আসাটাও বিরাট বিষয়। যদি কেউ পারেও ক্লে কোর্ট সম্রাটের মুকুট একজনের মাথাতেই থাকবে, তিনি রাফায়েল নাদাল।
×