ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে দুর্ঘটনা কম, তবে মৃত্যুর হার বেশি ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১১ জুন ২০১৯

 ঈদে দুর্ঘটনা কম,  তবে মৃত্যুর  হার বেশি ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঈদ উল ফিতর ঘিরে সড়কে দুর্ঘটনা গতবারের চেয়ে কম হলেও মৃত্যুর হার বেশি বলছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বিএনপির সংসদে যোগ দেয়া, সড়ক পরিবহন আইন, সোনাগাজী থানার ওসির গ্রেফতার না হওয়াসহ চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তবে প্রথমেই নিজ মন্ত্রণালয়ের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সড়কমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় এবার মৃত্যু ৬০ থেকে ৬৬, যা গতবারের তুলনায় কম। যতটা দুর্ঘটনার হার সে তুলনায় মৃত্যু বেশি। মৃত্যুর হারটা বেশি এ কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা লেগুনা জাতীয় ইজিবাইক-এসব গাড়ি থেকে হয়েছে। এসব যানে এক্সিডেন্ট হওয়া মানে এ গাড়ির কেউ থাকে না। বারবারই একই কথা বলি, জীবিকার জন্য জীবনের কথা চিন্তা না করে মহাসড়কে নেমে ছোট ছোট গাড়ি চালায়... বড় গাড়ির সঙ্গে ছোট গাড়ির সংঘর্ষ হলে বেশি মৃত্যু হয়। এজন্য দুর্ঘটনার চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। এবার যাত্রাপথ স্বস্তিদায়ক থাকলেও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা সন্তোষজনক পর্যায়ে যায়নি একথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, নসিমন করিমন ইজিবাইক যারা ব্যবহার করে তাদের বিকল্প কিছু নেই। যদিও আমরা ফিডার রোড ব্যবহার করতে বলি। হাইওয়েতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। বিকল্প চিন্তা করছি আমরা, কীভাবে গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে চিন্তা ভাবনা করব বলে জানান তিনি। রাইড শেয়ারিং নিয়ে ইতিবাচক মন্ত্রী ॥ রাইড শেয়ারিংয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে কাদের বলেন, ২০টির মতো রাইড শেয়ারিং আছে তা গণপরিবহনে সাহায্য করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই, কিছুটা আছে তা বিআরটিএ দেখছে। সিএনজি ভাড়া নিয়ে যে অভিযোগ ছিল রাইড শেয়ারিং নিয়ে তেমন অভিযোগ আসেনি, তবে বিআরটিএকে এ বিষয়টিকে কঠোরভাবে দেখতে বলা হয়েছে। এবার ঈদে পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য ৫ লাখ ২২৬ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। বিভিন্ন অপরাধে ২৫৫টি মামলা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে রাইড শেয়ারিংয়ের নীতিমালা করা হবে বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীও টোল দেন ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে একমাত্র রাষ্ট্রপতির গাড়ি টোলবিহীন চলাচল করে। প্রধানমন্ত্রীকেও টোল দিয়ে এই সেতু অতিক্রম করতে হয়। তবে ভবিষ্যতে এই সেতু দিয়ে চলাচল করা এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের গাড়ি টোল ফ্র্রি করা যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আন্দোলনের কারণে ... ॥ সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হচ্ছে না কেন, সরকার কি পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের কাছে সরকার জিম্মি নয়। তাদের আন্দোলনের কারণেই সড়ক পরিবহন আইনটি কার্যকর করা যায়নি। আন্দোলনের সময় তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আলোচনা করে এই আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা করা যায়নি।’ আপনারা তো বিরোধী দলের আন্দোলন দমিয়ে দিয়েছেন, শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে পারলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সবকিছু ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা যায় না। আমরা এই আইনটি সমন্বয় করে পুনরায় সংসদে পাস করার উদ্যোগ নিয়েছি। সড়ক ও পরিবহন আইন মালিক-শ্রমিকের অসন্তোষের কারণেই করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিবাদ বা আন্দোলন বাজে রকমের হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ অনেক অপমাণিত হয়েছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলন রাতারাতি বন্ধ করা যায় না। এ খাতের সঙ্গে অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট রয়েছে। শ্রমিকরা ভিন্নমতের ছিল না। তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল। প্রাথমিকভাবে যুক্তিতর্ক দিয়ে সমাধান করতে দেরি হয়ে গেছে। এটা হয়েছে আমার দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে। এখন এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ আইনের সঙ্গে নতুন কোনকিছু যোগ করা যায় কিনা। আইনের বিধি বিধান নিয়ে আবারও নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হবে। শীঘ্রই ধরা পড়বে মোয়াজ্জেম ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একটা লোক পলাতক হলে তাকে এ্যারেস্ট করা কষ্টকরই হয়। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। শীঘ্রই হয়তো ধরা পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে সরকার খুবই সিরিয়াস। ওসিকে গ্রেফতার করতে না পারায় সরকারের কোন ব্যর্থতা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, দেখুন একটা লোক পলাতক হলে তাকে এ্যারেস্ট করা কষ্টকরই হয়। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টার ত্রুটি নেই। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে খুব সিরিয়াস। এটা রাজনৈতিক কোন বিষয় কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, পার্মানেন্টলি হারিয়ে যাওয়া পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা শেষ পর্যন্ত তো সে রকমভাবে থাকেনি। এটাও রাজনৈতিক কিনা আমার মনে হয় না। এ বিষয়টা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে এবং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে খুব সিরিয়াস। তিনি যেই হোক সোনাগাজী আওয়ামী লীগের সভাপতি এ মামলায় কারাগারে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের গাফিলতি কোন প্রকার দুর্বলতা নেই। তিনি বলেন, ওসিকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে শৈথিল্যের অবকাশ নেই। ওসি এখনও ধরা পড়েননি। হয় তো শুনবেন শীঘ্রই ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান চিঠি পাওয়ার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এর দুইদিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি। মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যা চেষ্টার দিন দশেক আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওইদিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুইদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। মঙ্গলবার আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সংসদ নিয়ে বিএনপির স্ববিরোধিতা পরিষ্কার ॥ সংসদ নিয়ে বিএনপির স্ববিরোধিতা পরিষ্কার বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা কীভাবে আন্দোলন করবেন। পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েও শপথ নিলেন না। তার জায়গায় আবার বিএনপির রজলা সভাপতি উপ নির্বাচন করছেন। এই নীতি নিয়ে যারা চলেন তারা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতে কীভাবে সফল হবে। রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকায় বিএনপির রনতারা ঈদে এলাকায় যেতে পারেনি- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদে তৃণমূলে নেতাকর্মী কম ছিল কেন আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পরিবেশগত কোন সমস্যা হয়নি। বিরোধীদল কি কোন অভিযোগ করেছে? এসব বিষয়ে সবেচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন করেন মওদুদ আহমদ। তিনি এবার এলাকায় ছিলেন। তিনি কি কোন অভিযোগ করেছেন? তিনি বলেন, তারা নাকি আন্দোলন করবে। আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখতে থাকেন। তাহলে কীভাবে সফল হবে। অতীতেও ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি, ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবে। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন এ সংসদ অবৈধ- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংসদ যদি অবৈধ হয়, তিনি অবৈধ সংসদের অবৈধ এমপি। যে সংসদ অবৈধ সে সংসদের সদস্য হওয়ার জন্য তিনি এত সিরিয়াস হলেন কেন? সংসদ অবৈধ হলে তিনি কি বৈধ? কোন বৈধতার সূত্রে তিনি সংসদ গেলেন।
×