ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আমেজ সর্বত্র

সব মুখই হাসিমুখ, আনন্দে মাতোয়ারা

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৮ জুন ২০১৯

সব মুখই হাসিমুখ,   আনন্দে  মাতোয়ারা

মোরসালিন মিজান ॥ এই দেশে কত রকমের বিষাদ! ব্যথা বেদনার গল্প বলে শেষ করা যায় না। চাওয়া পাওয়ার যে সংঘাত, সে তো লেগেই থাকে। এর পরও ঈদ এলে মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায়। কিছুটা নির্ভার বোধ করে। এখন সেই সময়। ঈদ উপলক্ষে হাসি আনন্দে মেতেছে সবাই। সারাদেশের মতো ঢাকায়ও উৎসবের আমেজ। সব মুখই হাসিমুখ। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছেন তারা। চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, থিমপার্ক, উদ্যান, সিনেমা হল, ফুডকোর্ট সর্বত্রই ভরপুর উপস্থিতি। এবার ঈদের দিন বৃষ্টি থাকায় ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে লোকজন ঠিকই বের হয়েছেন। অন্যান্য বছর মানুষের মূল স্রোতটি নামে শিশু পার্কে। কিন্তু ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত শিশু পার্কটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সেখানে নির্মাণ কাজ চলায় জাদুঘরমুখী হন দর্শনার্থীরা। ফলে বড় সমাগম ঘটে জাতীয় জাদুঘরে। ঈদের দিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছিল জাদুঘর। পরের দিন বৃহস্পতিবার ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। শুক্রবার থেকে আগের রুটিনে ফিরে গেছে। এখন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে জাদুঘর। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদ জানান, ঈদের দিন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বহু দর্শনার্থী এসেছেন। জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন তারা। বর্তমানে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। তাদের ঈদ আনন্দের সঙ্গী হচ্ছে জাদুঘর। সেইসঙ্গে শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনা টিকেটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। শ্যামলীর শিশুমেলা শিশু রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটির মালিকানা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের হাতে। ফলে রাইড সংখ্যা বেড়েছে। উন্নত হয়েছে। বর্তমানে ৪০টির বেশি রাইড। যে কোন বয়সীরা চড়তে পারছেন ১২টি তে। বাকিগুলো শুধু শিশুদের। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাসিরাশি আনন্দের ফুয়ারা। শিশুরা কী যে মজা করে এক একটি রাইড চড়ছে! বাবা মায়ের হাত ধরে বসেছে কেউ। কেউ একা একাই চড়ছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল অধিকাংশই শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসেছেন। এখানে কথা হয় সিনথিয়া নামের এক কিশোরীর সঙ্গে। একটি রাইডের সামনে দাঁড়িয়ে তাতে চড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। বলল, ঈদে এখানে বেড়াতে আসার কথা ছিল। আব্বু আর আম্মু তাই নিয়ে এসেছে। অনেক রাইডও আছে। সবই চড়তে চায় বলে জানায় সে। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই শিশু রাজ্য খোলা থাকবে। এদিকে, মূল শহরের বাইরে হলেও ঈদে চিড়িয়াখানায় ভিড় সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক সময়ের মতোই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে চিড়িয়াখানা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ মানুষ জীব জন্তু দেখতে আসছেন বলে জানা যায়। ঈদের দ্বিতীয় দিন স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় নিয়ে এলে আমার ছেলে খুব খুশি হয়। তাই নিয়ে আসা। বানর, জেব্রা জিরাফসহ কয়েকটি প্রাণী দেখে ও উচ্ছ্বসিত। চিড়িয়খানায় ঘুরে তার নিজেরও মন্দ লাগছে না বলে জানান তিনি। থিমপার্কগুলো আরও দূরে। একটি আশুলিয়ায়। অন্যটি সাভারে। তাই বলে দর্শনার্থী পেতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। বরং ঢাকা থেকে বহু মানুষ সেদিকে ছুটছেন। আকর্ষণীয় সব রাইডে চড়ছেন তারা। সাঁতার কাটছেন। আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময়ের মধ্যে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব স্লাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ছেন দর্শনার্থীরা। যত খুশি সাঁতার কাটছেন। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি বলে জানায় থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ। কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত নন্দন পার্ক। জানা যায়, ঈদের দিন সকাল থেকেই এটি খোলা রাখা হয়েছে। এখানে আছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্ক। উভয় অংশেই আকর্ষণীয় সব রাইড। সাঁতার কাটাসহ জলে নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থলভাগে আছে উপভোগ করার মতো দূরদান্ত কিছু রাইড। জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে। সেই প্যাকেজ নিয়ে আস্ত একটি দিন কাটিয়ে দেয়া যাচ্ছে। ঈদে এ-ই তো চাই! এসবের বাইরে গোটা শহরেই এখন উৎসবের আমেজ। নতুন পাঞ্জাবি শাড়ি পরে অনেকেই চলে আসছেন টিএসসি এলাকায়। চলছে ঈদ আড্ডা। হাতিরঝিলেও সেজেছে নতুন করে। উন্মুক্ত এই প্রাঙ্গণে বরাবরের মতোই ভিড় করেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। ঝিলের জলে আলো ফেলে কিছু রঙিন ফোয়ারা চালু করা হয়েছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে চলছে ছবি তোলার কাজ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনের আশপাশসহ খোলামেলা সব জায়গায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পুরনো ঢাকায় আছে লালবাগ কেল্লার মতো বড় পরিসর স্থাপনা। মুঘল স্থাপনা সঙ্গী হয়েছে ঈদ বিনোদনের। খোলা আছে সদরঘাটে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল। সব মিলিয়ে জমজমাট ঈদ। প্রতিটি দিন কেন এমন হয় না!
×