ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ভার্সিটি থেকে বোমা উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৮ জুন ২০১৯

 বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ভার্সিটি থেকে বোমা উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে একটি পেট্রোলবোমা উদ্ধারের ঘটনা পুঁজি করে নানাভাবে ইস্যু তৈরির চেষ্টা চলছে। বোমা উদ্ধারের ঘটনায় শাহবাগ মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ আটক বা চিহ্নিত হয়নি। ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানতে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে। পর্যালোচনায় তেমন কোন সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ নিয়ে চলমান ঝামেলার সূত্র ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে। আবার নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা থাকার সুযোগে বিএনপি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি এখনও গুরুতর অসুস্থ। তার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা চলছে। কাজেই সেখান থেকে বোমা উদ্ধারের এ ঘটনা পুরো জাতিকে বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশবাসী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের ভেতর থেকে বোমা উদ্ধার এক বড় ধরনের মাস্টার প্লানের অংশ কি না, তা নিয়ে তাদের মনে গভীর সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। বিএসএমএমইউর নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ এড়িয়ে কলাপসিবল গেটের ভেতরে রেজিস্ট্রারের কক্ষের সামনে কীভাবে দুষ্কৃতকারী বোমা রেখে যেতে পারে? যে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার মতো একজন জনপ্রিয় নেত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেখানকার নিরাপত্তা বেষ্টনী এত ঠুনকো থাকার কথা নয়। সেখানে তো নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার কথা। তাহলে কি উদ্দেশ্যে বিএসএমএমইউতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল রাখা হয়েছে? রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে’। তাই স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীদের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য তিনি বলেছেন। রিজভী অভিযোগ করেন গণতন্ত্রের শাশ্বত বাণী মত, পথ ও আদর্শের ভিন্নতার মধ্যে ঐক্যের মিলিত সুরকে হিংসা-প্রতিহিংসার ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত করে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার দেশকে চিরস্থায়ী বিভেদ-বিভাজন ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গত বছর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন, কিংবা ’১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ১৫৩ আসনে ক্ষমতাসীনরা যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন তখন কি বিশ্বের চোখে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়? এ ধরনের অপকর্ম কীভাবে প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশের মানুষের চোখ থেকে আড়াল করতে পারবেন? দেশ-বিদেশের সবাই জানে ক্ষমতার মোহাবিষ্ট হয়ে কীভাবে দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনকে নিরুদ্দেশ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন এবং দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বলেন, গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেয়ার একটি ভয়ংকর উদাহরণ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে। তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে দেশব্যাপী গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মতো মনুষ্যত্বহীন প্রাণবিনাশী কর্মকা-ের সংস্কৃতি চালু করে মানবতার খোলা বাতাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেশ কিছু অঘটন ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিডিআর বিদ্রোহ, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা, ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু ও চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী গুম, জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন, খালেদা জিয়ার বাড়ি উচ্ছেদ, শেয়ারবাজার লুট, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভসহ সরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট, সীমান্তে ফেলানী হত্যা, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, রানাপ্লাাজায় রেশমা উদ্ধারের নাটক, ব্লাগার হত্যাকা-, সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন, নাটোরের বিএনপি দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান খুন, নরসিংদীর আওয়ামী লীগ দলীয় পৌর মেয়র খুন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন গুম, দৈনিক আমার দেশ ও চ্যানেল-ওয়ানসহ ক’টি সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া, তনু, মিতু, নুসরাত জাহান রাফি, নার্স, ছাত্রী ও প্রতিবন্ধীসহ অসংখ্য নারী-শিশু হত্যা, কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎ হত্যা, নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহোৎসব, রামপালে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র, গোয়েন্দাদের দিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা ইত্যাদি। উল্লেখিত ঘটনাগুলো সরকারের ব্যর্থতায় ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনটিও দেশ-বিদেশের মানুষের অজানা নেই। তারপরও সরকারী দলের লোকেরা বড় বড় কথা বলছে। আমরা এসব ঘটনার নিন্দা জানাই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, মশিউর রহমান প্রমুখ।
×