ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ জুন, ১৯৭১

গেরিলা কায়দায় বাংলার জন্মযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ৫ জুন ২০১৯

গেরিলা কায়দায় বাংলার জন্মযুদ্ধ

শাহাব উদ্দনি মাহমুদ ॥ ১৯৭১ সালের ৫ জুন দিনটি ছিল শনিবার। বাংলাদেশের সুপরিকল্পিত গণহত্যায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন সরকারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য না পেলে, পাকিস্তানের সামরিক চক্র বাংলাদেশে একদিনও যুদ্ধ চালাতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় মার্কিন সরকার কি নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন? বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যই মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এ যুদ্ধে তাদের জয়লাভ করতেই হবে। জয় তাদের অবশ্যম্ভাবী। মার্কিন সরকার বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে চিরকালের জন্য বন্ধুত্বে চির ধরালেন। একাত্তরের এই দিনে শ্রীপুরের নিকটবর্তী রাজবাড়ী মহকুমার বালিয়াকান্দি থানার রামদিয়াতে পাকবাহিনীর অন্যতম সহযোগী চাঁদ খাঁর বাড়িতে এই অভিযান ছিল সর্বপ্রথম। শ্রীপুর থেকে এই বাহিনীর বড় একটি যোদ্ধা দল এই অভিযান চালাতে শ্রীপুর থেকে হেঁটে বালিয়াকান্দি থানার রামদিয়াতে আসে। অতঃপর আকবরবাহিনীর সাহসী যোদ্ধারা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিহারী চাঁদ খাঁ ও তার সহযোগীদের খতম করতে সক্ষম হন। একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে পাকহানাদারদের দুর্গ তছনছ করে ফেলে এই বাহিনীর সাহসী যোদ্ধারা। বিশেষ করে শ্রীপুর থানা দখল, শৈলকূপা থানা আক্রমণ, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির রামদিয়াতে পাক সহযোগী চাঁদ খাঁর বাড়ি আক্রমণ, ইছাখাদা ও মাগুরা আনসার ক্যাম্পে হামলা, আলফাপুরের যুদ্ধ এবং বিনোদপুর রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ- এ সবই অধিনায়ক আকবর হোসেনের সুদক্ষ দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। পাকবাহিনীর সামনে শ্রীপুরবাহিনী এক মহা আতঙ্ক হিসেবে পরিগণিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ, বশিরহাট ও বনগাঁর বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে কলেরা মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এবং কয়েকজন প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় সামরিক শাসক ২০ নং সামরিক আদেশ সংশোধন করে ২৩ নং সামরিক আদেশ জারি করেন। এ আদেশে ঘোষণা করা হয়, ‘যদি কোন সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তির চাকরির শর্তে অন্তর্ভুক্ত নাও থাকে তথাপি এ আদেশ বলে সামরিক কর্তৃপক্ষ বা প্রাদেশিক সরকার দেশ কিংবা দেশের বাইরে যে কোন স্থানে তাকে পাঠাতে পারবে। এ আদেশ গত ২৫ মার্চ থেকে সবার জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।’ সুবেদার পাটোয়ারীর দল পাকবাহিনীর লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মধু রোডের স্টেশনের নিকটে জমজমা রেলওয়ে সেতু ধ্বংস করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা মহামায়া বাজারের নিকট একটি সেতু ধ্বংস করে। পাকবাহিনী সড়কপথে চাঁদপুর-কুমিল্লা যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সোহরাওয়ার্দী কন্যা বেগম আখতার সোলায়মান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। বেগম আখতার সোলায়মান বলেন, ‘অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সদস্যই আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনার কথা জানতেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি জনগণ নির্বাচনের সময় অধিকতর শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ পাকিস্তান গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল।’ ছয় দফার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ছয়-দফা হচ্ছে অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবি মাত্র। এ থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এক ও অখ- পাকিস্তানে বিশ্বাসী।’ পশ্চিম পাকিস্তান মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল খাজা মোহাম্মদ সফদর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর ও খুলনা সফর করে শান্তিবাহিনী গঠনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাকিস্তান মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান খান আবদুল কাইয়ূম খান এক বিবৃতিতে বলেন, পুর্ব পাকিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (মুক্তিযোদ্ধা) নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী আবারও প্রমাণ করেছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৈন্যদল। এই দিন স্বাধীন বাংলা বেতারের এক খবরে বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের নিরীহ জনগনের ওপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অমানবিক বর্বরতার খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশ্বের আরও অনেক দেশের জনগণ সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং সমর্থন জানায়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সহায়ক সংস্থা পশ্চিম পাকিস্তানের সৈনিকদের নৃশংস গণহত্যায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস এ্যাসোসিয়েশনের ২৩ম সাধারণ সভায় বাংলাদেশ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। বেলজিয়ামের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে এই সভায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই সভায় আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, ইতালী অস্ট্রেলিয়াসহ ৫২টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। ফেডারেশনের একজন মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনক হাজার হাজার হত্যাকা-ে নিন্দা জানানোর সময় সব প্রতিনিধি সরব ছিলেন। ভেনেজুয়েলার আইন সভার সদস্যরা জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকারের দিকে দৃষ্টি দিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে বলেন। পাকিস্তানী আর্মির যে ভয়াবহ দমনের কারণে বাংলাদেশের উদ্বাস্তুরা দেশ ছেড়েছে, পাকিস্তান যেন তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই চাপ সৃষ্টির অনুরোধও তারা জানায়। যে সীমাহীন অন্যায় অত্যাচার বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে বিশেষ করে গণহত্যার মতো ঘৃণ্য কর্মকা-ের জন্য ভেনেজুয়েলার আইন সভার ২১৪ জন সদস্য একমত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালায় তার প্রতিবাদস্বরূপ থাইল্যান্ড পাকিস্তান বিমানের জ্বালানির যোগান বন্ধ করে দেয়। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে ৭৫ মিলিয়ন নিরীহ লোকের ওপর মিলিটারি অপারেশন চালানোর জন্য কোন বিমানের জ্বালানি তাঁদের কাছে নেই। তাই নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করানোর কথা বলেন। ভ্যাটিকানের দৈনিক ‘অবজারভেটরি রোমানো’ সংবাদ প্রকাশ করে যে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বাংলাদেশকে যে যুদ্ধের ভিতর টেনে এনেছে তা একটি অসম যুদ্ধ। প্রথম পাতার মন্তব্যে পত্রিকাটি বলে, এই সঙ্কট সমাধানের জন্য পাকিস্তানের উচিত এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করা। এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতাকে মেনে নেওয়া। অন্যথায় গেরিলা যুদ্ধের কারণে পূর্ব বাংলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে যেটা পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে। পাকিস্তান সরকার অনেক পরে অবশেষে দাতা দেশগুলোর কাছে স্বীকার করেছে বাংলাদেশের জনগণ বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে যার ফলেই এই যুদ্ধ। লজ্জাহীনভাবে পাকিস্তানী মিলিটারি শাসকরা এর প্রতিনিধিদের ঋণ এবং সহায়তা চাইবার কথা বলে দেয়। বিশ্বস্ত সূত্র মতে পাকিস্তান বর্তমানে প্রতি মাসে ১২০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। প্রত্যেকটা দেশে পাকিস্তানী মিশনে ঋণ এবং ত্রাণ সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়। হিন্দুস্থান টাইমস ’মুক্তিফৌজের গেরিলা কৌশল সফলতার মুখ দেখছে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রমের বিভিন্ন স্থান, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সালদানদী, গঙ্গাসাগর ও আখাউড়া সেক্টরের সালদানদী এলাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানী আর্মির ওপর গেরিলা কৌশল ব্যবহার করে মুক্তিফৗজ কমান্ডোরা হামলা চালায়। নিহত হওয়া পাক সেনাদের মধ্যে মেজর দোউরানি ছিল। যিনি মার্চ-এপ্রিল মাসে কুমিল্লা শহরে গণহত্যা চালিয়েছিল। সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা আরও একটি রিপোর্টে বলা হয় ‘পাকিস্তানী বাহিনী তথাকথিত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গঠিত হওয়া শান্তি কমিটির ওপর ক্রমান্বয়ে আস্থা হারাতে শুরু করে। পাক সেনারা ফেনী এবং লাকসামে শান্তি কমিটির কমপক্ষে পাঁচ সদস্যকে হত্যা করেছে। জুনের ২ তারিখে পাক সেনারা ‘ পিজে চামার্স’ নামের এক বিদেশীকে হত্যা করে, যিনি সিলেটের ‘নুলতা টি স্টেট’ দেখাশোনা করতেন। তারা চা বাগানের ২০জন শ্রমিককেও হত্যা করে। পাক সেনা কর্মকর্তারা মিস্টার চামার্সের কাছ থেকে সৈন্যদের জন্য রেশন, জ্বালানি এবং চা দাবি করে। কিন্তু তিনি তার অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির কথা চিন্তা করে তাদের দাবি মেটানোর অক্ষমতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে মেহেরপুর শহরের লাক্ষাছড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে একজন অফিসারসহ ৪জন পাক সৈন্য নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিসেনারা কালভাট, ব্রিজ এবং পাকা সড়কের কাছে মাইন পুঁতে রাখে। ফরিদপুরে মুক্তিবাহিনী একটা ব্রিজ এবং একটা পাকিস্তানী পোস্ট গুঁড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাঙ্গামাটি এলাকায় সবগুলো গ্রাম পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পতিœতলা থেকে ৬ মাইল উত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি সেনা চৌকি উড়িয়ে দেয়। সিলেট সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ২টি ব্রিজ এবং সরলবাগ, শমশেরনগর সীমান্তের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের ওপর গুলি চালায়। রংপুর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি গানবোট ডুবিয়ে দেয় এবং সিরাজগঞ্জ এলাকার কাছে একটা রেল ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। কুমিল্লা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সেনা অবস্থানের ওপর হামলা চালায় এবং ২৫ পাক সৈন্য হত্যা করে। পাক সৈন্যরা মোগলহাট সীমান্ত থেকে ভারতের গিতালদাহ বর্ডার আউট পোস্টে হামলা চালায়। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে তাদের এক ঘণ্টা গুলিবিনিময় চলে। বাংলাদেশের কান্থালবারতি এলাকায় মুক্তিবাহিনী এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষকালে ভারতীয় সীমান্তের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা এলাকায় কিছু পাকিস্তানী মর্টার শেল এসে পড়ে। লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ‘কলেরা 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, গতকাল রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মিরা হরিলাল সাহা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের কলেরা মহামারী ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে’। আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য জরুরী ভিত্তিতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কলেরাবিরোধী ভ্যাকসিন দরকার, র‌্যাপিড ইনজেকশন মেশিন, এ্যান্টিবায়োটিক, গুঁড়াদুধ-ইত্যাদি প্রয়োজন। এক কথায় যে কোন কিছু যা যা আপনারা দান করতে পারেন। ডাঃ সাহা জানান পূর্ব পাকিস্তানের ৮০০ মাইল সীমান্তে প্রায় দশ বারো হাজার কলেরা রোগী রয়েছেন। ভ্যাক্সিন দেবার পরেও প্রায় ২৫৫০ জন মারা গেছে। ডঃ সাহা কলকাতায় স্বাধীন ত্রাণ সংস্থায় এসে রিপোর্ট করেন যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থীএখন প্রায় পাঁচ মিলিয়ন। ডাঃ সাহা বলেন, কলেরা আক্রান্ত রোগী উত্তরে দিনাজপুর থেকে মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, কলেরা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মৃতের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়ে যাবে। তবুও সবচেয়ে খারাপ এলাকা নদীয়ার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার বলেছেন, প্রায় ৬০০ রোগী আছে যার ফলে এটি মহামারীর আকার ধারণ করেছে কিন্তু পরিস্থিতি ‘নিরাপত্তাহীন হলেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। নিহতদের লাশ রাস্তার পাশে সীমান্তে পরে আছে, এবং কিছু কিছু স্থানীয় জালাঙ্গি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে গুরুতর দূষণের হুমকি দেখা দিয়েছে। মানুষ যাতে দূষিত নদীর পানি ব্যবহার না করে সেজন্য পাহারা বসানো হয়েছে। এই দিন দৈনিক যুগান্তর স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি ভারতের সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণের বাংলাদেশ প্রশ্নে লন্ডনে বিশ্ব সফরের সংবাদ প্রকাশ করেন, গতকাল বিকেলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। প্রথমেই তিনি দেখা করেন কমনওয়েলথ রিলেশনস অফিসের মিঃ এন্থনী কেরশার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, পাক সামরিক বাহিনীর গণহত্যার ফলে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে চলে আসায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেই ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের যথেষ্ট সহানুভূতি রয়েছে। মিঃ কেরশা ভারতের এই সমস্যায় ব্রিটিশ সরকারের অকুণ্ঠ সহানুভুতি প্রকাশ করেছেন। তার মতে পশ্চিম পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার ব্যাপারে পশ্চিমা শক্তিগুলোর অনিচ্ছার কারণ আছে দুটি। একটি হলো পশ্চিমা শক্তিগুলো মনে করছে সাহায্য বন্ধ করলে পাকিস্তানের কাছে আগেকার পাওনা টাকা হয়তো ফেরত পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়তঃ প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য না পেলে পাকিস্তান সাহায্য লাভের জন্য চীনের দ্বারস্থ হবে। শ্রী নারায়ণ এর আগে কায়রো, রোম বেলগ্রেড, মস্কো, হেলসিঙ্কি, বন এবং প্যারিস ঘুরে এসেছেন। রবিবার তিনি লন্ডন ত্যাগ করেছেন। তিনি এরপর ওয়াশিংটন এবং অটোয়া সফরে যাবেন। তার সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সমস্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা এবং সেখানকার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনে সমর্থন আদায় করা। তিনি গত সপ্তাহে হেলসিঙ্কি সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তখন আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র সম্মেলন হচ্ছিল। এই সুযোগে তিনি পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলার উইলি ব্রান্ট, ব্রিটেনের বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসন নরওয়ে ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এবং ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্মেলনের বাইরে দেখা করেছেন এবং কথাবার্তা বলেছেন। এরপর তিনি বনে যান এবং সেখানে পার্লামেন্ট সদস্য এবং ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য পশ্চিম জার্মানির পার্লামেন্টে শীঘ্রই একটি বাড়তি বাজেট পেশ করার কথা জানিয়েছে।
×