ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গল বয়ে আনুক আনন্দ উৎসব

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৪ জুন ২০১৯

 মঙ্গল বয়ে আনুক  আনন্দ উৎসব

পবিত্র রমজানের ইবাদতের সময় অতিক্রান্ত করা এক পরম আধ্যাত্ম চেতনার অনুপম অনুভব। প্রায় এক মাসের সিয়াম সাধনার দিনগুলো আত্মিক নিবেদনের যে অনাবিল আনন্দ ভেতর থেকে উৎসারিত হয়, সেটা শুধু সংযমই নয়, বিশ্বনিয়ন্তার বিধির প্রতিও নিঃশর্ত সমর্পণ। রোজার পরিশুদ্ধতায় হৃদয়নিঃসৃত যে মানসিক মনোসংযোগ, সেখানে নতুনভাবে উৎসবের আমেজ তৈরি হতেও সময় নেয় না। ঈদের মহা আনন্দযজ্ঞ একেবারে শুরু থেকেই আগাম বার্তা নিয়ে মন প্রাণকে উল্লসিত করে। ক্রমে ক্রমে সাড়া জাগাতে থাকে ঈদ উৎসবের খুশীর আমেজ। আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই বারো মাসের তের পার্বণের অবিমিশ্র সহযোগে নিজেরাই শুধু মুখরিত হই না, সারা দেশে তার আবেশ ছড়ানো মনোমুগ্ধকর পরিবেশও আমাদের আলোড়িত করে। সাজ সাজ রবে পুরো দেশ সজ্জিত হয়। শপিংমল, বুটিক হাউস, বাংলার ঐতিহ্যিক তাঁত আর জামদানির বাহারি পণ্যের বহুমাত্রিক সম্ভার সব মিলিয়ে বৃহদাকার যে আয়োজন, তাতে সাধারণ মানুষের অভিগমনও উৎসবের আনুষঙ্গিক পর্যায়। গ্রাম ও শহরের সীমাহীন দূরত্ব অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে। অর্থাৎ কৃষি-শিল্পের সামগ্রিক অগ্রগামিতায় কৃষি অর্থনীতিতে যেমন জোয়ার এসেছে, একই সঙ্গে শিল্পনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক সীমানায় তার স্থান মজবুত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া পাটশিল্পকে নতুন উদ্যোগে তার ঐতিহ্যিক অবস্থানে নেয়ার মহৎ প্রচেষ্টায় এই শিল্পের বাহারি পণ্য আজ দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বসীমায়ও অবদান রেখে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং উদ্যোক্তাদের সফলভাবে এগিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী অবদান আজ বিশ্বসভায় স্বীকৃত ও প্রশংসিত। অর্থনীতির এমন সমৃদ্ধ আয়োজন উৎসব আর আনন্দের অনুষঙ্গ হয়ে উৎসবপ্রিয় জাতিকে নতুন উদ্যমে উজ্জীবনের শক্তিতে বেগবান করছে। ফলে ঈদের মতো এক মহা সাড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে যে অভিনবত্ব আর চমৎকারিত্ব তা বৃহাদাকার শপিংমলগুলোতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বিত্তশালীদের জন্য যেমন নজরকাড়া আর আকর্ষণীয় পণ্যসম্ভার; একইভাবে সাধারণ মানুষের জন্যও সাজানো হয়েছে ক্রয় ক্ষমতার আয়ত্তে থাকা ঈদ আয়োজনের বিভিন্ন সামগ্রী। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বমর্যাদায়। রফতানির বড় অংশ আসে সেখান থেকে। আর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা। ঐতিহ্যবাহী কাপড় আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়ে তার সময়োপযোগী সাড়া জাগিয়েই যাচ্ছে। সুতরাং উৎসবে, আয়োজনে, আনন্দে দেশীয় পণ্যসম্ভার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশকে স্বনির্ভরতার দিকে ক্রমান্বয়ে চালিত করছে। শপিংমলগুলোর জমকালো সাড়ম্বতায় দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে যে বাস্তবচিত্র প্রদর্শিত, সেখান থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না সম্ভাবনাময় এবং আধুনিক বাংলাদেশ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কোন পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঈদের এমন সম্প্রসারিত আয়োজনে দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে সর্বসাধারণের দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে, সেখান থেকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের জায়গায় বিশ্ব দরবারে চলে যেতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না। দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নও সমৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সে যাত্রায়ও বাংলাদেশের অবস্থান দৃষ্টিকাড়া। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কের আধুনিকায়ন, পরিবহন ব্যবস্থার নবসংস্করণ, উড়াল সড়ক, সেতু কিংবা আন্ডারপাস নির্মাণের মতো মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দূরযাত্রার বিরতিহীন ভ্রমণকে স্বস্তি ও আরামদায়ক করে তুলেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেতু, উড়াল সড়ক, আন্ডারপাস উদ্বোধন করে ঈদযাত্রায় তাঁর প্রিয় দেশবাসীকে যে সময়োপযোগী উপহার দিলেন, তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। এছাড়াও ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যাত্রায় চন্দ্রা মোড়েও উড়াল সড়ক, সেতু ও আন্ডারপাস উদ্বোধন করে দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যাকে অনেকটা সহনীয় করে তুলেছে। ঈদের আগেই যার সুফল স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। দীর্ঘযাত্রা পথে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে পোহাতে ঈদ আনন্দের যে কি বেহাল দশা হয়, তা ভুক্তভোগীরাই শুধু জানে। তবে পুরো সমস্যা মেটাতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ চন্দ্রা মোড়ে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণাধীন প্রকল্প এখনও শেষ হতে আরও বছরখানেক সময় লাগবে। সে পর্যন্ত কিছুটা সঙ্কট থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এবার সড়ক-মহাসড়কে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বেশ বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ত্রুটি-বিচ্যুতিপূর্ণ মেয়াদোত্তীর্ণ পরিবহন, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক এবার ঈদযাত্রায় অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। যোগ্য ও দক্ষ চালকদের গাড়ি নির্ধারিত গতি মেনে চলা সড়ক পরিবহন আইনের আওতাভুক্ত। আইন লঙ্ঘিত হলে বেপরোয়া চালককে তার জবাব দিতে হবে। পুরনো রাস্তাঘাট সংস্কার করে চলাচলের উপযুক্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘযাত্রায় মাঝপথে চালকদের বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়, যাতে তারা প্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে পারে। সুতরাং এবারের ঈদ অন্য আগের বারের চাইতেও কম কষ্টদায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। টিকেট ক্রয়-বিক্রয়ে কিছু অনিয়ম থাকলেও যাত্রাপথের বিধি ব্যবস্থাকে কিছুটা শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে অনাকাক্সিক্ষত, দুর্ভোগ এবং পথ দুর্ঘটনা থেকে ঘরমুখী মানুষগুলোর জীবন নিরাপদ আর নির্বিঘ্ন হয়। দেশের মানুষ গ্রামে নাড়ির টানে শহর সময় ছেড়ে পল্লীর নির্মল আবহে ফিরে যেতে চায়। যেখানে তার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি আজও তাকে নিভৃত পল্লীর মুগ্ধকর আবেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আর উৎসব আড়ম্বর মানেই ফেলে আসা জীবনের এক আনন্দঘন স্মৃতিচারণ। ঈদের সাড়ম্বর আয়োজন মানুষের কর্মকোলাহল জীবন থেকে সাময়িক বিরতি যেন। চমৎকার সেই খুশির মুহুর্তগুলো নিরাপদ আর ঝামেলাহীনভাবে কাটানোই থাকে প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে। সেই মহান উদ্দেশ্য যেন কানায় কানায় ভরে ওঠে। সর্বজনীন মিলনসভায় মানুষ মানুষের জন্য- এমন বার্তাই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হোক জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। ঈদ উৎসব শান্তি ও মঙ্গলময় হোক দেশ ও জাতির জন্য। লেখক : সাংবাদিক
×