ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুরে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৩০ মে ২০১৯

 শরীয়তপুরে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক  অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২৯ মে ॥ শরীয়তপুরে সরকারী ধান, চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে খাবার অযোগ্য নিম্নমানের পচা ও পোকাযুক্ত চাল সংগ্রহ করে গুদামজাত করা, নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য জেলা থেকে চাল সংগ্রহ করা এবং যে সকল মিলে বয়লার ও চিমনি নেই, সেসব হাস্কিং মিল মালিকদের কাছ থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করা, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে কালোবাজারি চক্রের কাছ থেকে ধান ক্রয় করাসহ নানা অভিযোগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২৫ এপ্রিল থেকে সরকারী পর্যায়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান ও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এতে শরীয়তপুর জেলায় ১ হাজার ৬শ’ ১৩ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৭শ’ ৪০ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মসূচীর আওতায় সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদামে সংগ্রহ করা হবে ৩শ’ ৫৫ টন চাল এবং ১শ’ ৬৭ টন ধান। চাল সংগ্রহের জন্য আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ স্থানীয় আঙ্গারিয়া বাজারে অবস্থিত মতিউর রহমান খানের মালিকানাধীন খান রাইচ মিল ও আবুল কালাম তালুকদারের সোনালি রাইচ মিলের নামে ৩শ’ ৫৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়ে তা সংগ্রহ করছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উল্লেখিত দু’টি চালকলে কোন বয়লার ও চিমনি নেই। নেই প্রধান বয়লার পরিদর্শকের প্রদত্ত কোন সনদপত্র। মিলগুলোতে শর্তানুয়ায়ী গুদাম নেই। খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহকৃত খাদ্য অধিদফতরের সীলমোহরযুক্ত বস্তাও পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট চালকলে। অথচ আভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭ এবং চাল সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ-২০০৮ এর নীতিমালায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারী চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মিলিং লাইসেন্স ও ফুড গ্রেইন লাইসেন্সধারী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন সচল মিল চুক্তিযোগ্য হবে। সেখানে উল্লেখ আছে, যেসকল মিলে বয়লার ও চিমনি নেই, সেসব হাস্কিং মিলের সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করা যাবে না এবং মিল মালিকদের প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সনদ থাকতে হবে। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে, আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ আলম ও উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক ইকবাল মোল্লা পরস্পর যোগসাজশে এ চাল সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারী ধান, চাল সংগ্রহের একই চিত্র ডামুড্যাসহ অন্য উপজেলাতেও। এদিকে আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম থেকে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ, এনএসআই ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সরবরাহকৃত রেশনের চাল পচা ও পোকাযুক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ লাইন্সে পচা ও পোকাযুক্ত এই চাল সরবরাহ করেছে আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম। প্রতি মাসে জেলা পুলিশ, এনএসআই ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সহ¯্রাধিক রেশন কার্ডধারী এই চাল গ্রহণ করছে। বুধবার পুলিশ লাইন্সে গিয়ে দেখা গেছে, রেশনের এ পচা ও পোকাযুক্ত চাল গ্রহণে অনীহা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে রেশন কার্ডধারীরা। অভিযোগে জানা গেছে, বার বার আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম পচা ও পোকাযুক্ত চাল সরবরাহ করে এলেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। জেলা পুলিশ রেশন স্টোরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আঙ্গারিয়া খাদ্যগুদাম থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহের বিষয় নিয়ে আমরা বার বার প্রতিবাদ করেছি কিন্তু খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্ণপাত করছেন না। নিরুপায় হয়ে এ নিম্নমানের চাল গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরে আলম সিদ্দিকি বলেন, আমার নিকট এ ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।
×