ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাপ্পাদিত্য বসু

বিএনপি বেসিক্যালি নো পার্টি

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ২৮ মে ২০১৯

 বিএনপি বেসিক্যালি নো পার্টি

(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর) ‘বিএনপি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি’ (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) না হয়ে বরং ‘বিএনপি বেসিক্যালি নো পার্টি’ (মূলত কোন দলই নয়) হওয়াটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। এ রকম একটি শিকড়বিহীন, আদর্শবিহীন, লক্ষ্যহীন উদ্ভট রাজনৈতিক সংগঠনের এই দীর্ঘ চার দশকের বেশি টিকে থাকাটাই তো বিস্ময়! সম্প্রতি দলটি প্রচণ্ড রকমের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। ক্রমাগত ভুল ও মিথ্যার উপর উঠে দাঁড়ানো একটি রাজনৈতিক দল যে আকস্মিক মুখ থুবড়ে পড়বে, সেটাই তো স্বাভাবিক। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি ক্রমাগত অপরাধ করে গেছে দলটি। সংবিধানকে অস্বীকার করেছে বারবার এবং যখনই সুযোগ পেয়েছে, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতির উপর আঘাত করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বরং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ওই নির্বাচনকে পণ্ড করার লক্ষ্যে মানুষ খুন, এমনকি জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটনের মধ্য দিয়ে বিএনপির চূড়ান্ত পতনের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকেই তাদের চূড়ান্ত জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার শুরু। নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের রাজনীতির ট্র্যাকে ফেরার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু আগের সব অপরাধের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তারা এ নির্বাচনে মাত্র ৬টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে তারা আরও একবার সুযোগ হাতছাড়া করল। তারা সংসদে যাবে না বলে গো-ধরে তিন মাস বসে থেকে শেষ পর্যন্ত সুযোগের শেষ দিনে এসে চারজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে শপথ নিয়ে সংসদে যাবার অনুমতি দিল। কিন্তু দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘দলীয় কৌশল’ এর দোহাই দিয়ে শপথ নিলেন না। তাতে করে তিনি বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানের কাছে কতখানি বিশ্বস্ত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেন জানি না, তবে মানুষের কাছে হাস্যকর হলেন। এ নিয়ে দলের অন্য নেতারাও ক্ষোভ ঝেড়েছেন প্রকাশ্যেই। এর আগে অবশ্য বিএনপির আরও একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য নিজ সিদ্ধান্তে শপথ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। তো এক যাত্রায় দলের সংসদ সদস্যদের মিলল দুই ফল। ৫ জন সংসদ সদস্য শপথ নেয়ায় তারা নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যও পাবেন। সেটাও তারা নিচ্ছেন। দলের তরফ থেকে মনোনীত এক নারীনেত্রী ইতোমধ্যেই এ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। আবার মির্জা ফখরুল শপথ না নেয়ায় বগুড়ার যে আসনটি শূন্য হয়ে গেল, সেখানে ঘোষিত উপনির্বাচনেও কিন্তু আবার বিএনপি অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চারজন দলীয় নেতাকে প্রাথমিক মনোনয়নও দেয়া হয়েছে। তাহলে নির্বাচিত আসনটি ছেড়ে দিয়ে সেখানে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার কী মানে থাকতে পারে? একেকটি আসনে নির্বাচন আয়োজনে যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় হয়, সে ব্যয় তো জনগণের ট্যাক্সের পয়সা থেকেই আয়োজন করা হয়। তাহলে এই উপনির্বাচনের ব্যয় বাবদ যে টাকা খসানো হচ্ছে জনগণের পকেট থেকে তার দায় কি বিএনপি নেবে? নেবে না। নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ক্রমাগত ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো বাজিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। রাষ্ট্রপতি সব দলের মতামত নিয়ে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সেখানে বিএনপির মনোনীত কমিশনারও আছেন। তা সত্ত্বেও বিএনপি লাগাতার বলে এসেছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার সরকার আর নুরুল হুদা কমিশনের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে গিয়েছে। হেরে যাবার পর বলেছে শপথ নেবে না, নিয়েছে। আবারও উপনির্বাচনে যাচ্ছে। তাহলে এই যে দ্বিচারী রাজনীতি, মানুষ কি তা বোঝে না? এভাবেই দিনে দিনে জনবিরোধী কাজ দিয়ে রাষ্ট্রের, জনগণের ক্ষতি করে চলেছে এই বিএনপি। অবশ্য যে দলটির জন্মই একটা মিথ্যা আর ভুলের ওপরে, তাদের প্রতিদিনের পথচলাও তো হবে মিথ্যা আর ভুলেই ভরা। দিনে দিনে সেই মিথ্যাশ্রিত রাজনৈতিক প্লাটফরমটি বিলুপ্তির পথে যাবে। আজকের বিএনপি নিঃসন্দেহে প্রচণ্ড রকম অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগে। সরকার ও সরকারী দলের অনেক ভাল কাজের মধ্যেও মন্দ কাজের সংখ্যা নেহায়েত কম না। কিন্তু সরকারের মন্দ কাজের বিপরীতে প্রতিবাদ-বিরুদ্ধতার চাবুক চালানোর কাজ যাদের, সেই বিরোধী দলের অভাব আজ দেশে। সরকার আর সরকারী দল ছাড়া দেশের মানুষের আর দাঁড়ানোর মতো কোন আশ্রয় নেই। দেশে কোন জনকল্যাণকামী কার্যকর বিরোধী দল নেই। এ দায় বিএনপিরও কি কোন অংশে কম? (সমাপ্ত) লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ইয়ুথ ফর ডেমোক্র্যাসি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
×