ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে উচ্ছেদ হলো সদরঘাট টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২২ মে ২০১৯

অবশেষে উচ্ছেদ হলো সদরঘাট টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান

জবি সংবাদদাতা ॥ অবশেষে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ হলো রাজধানীর সদরঘাট মূল টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীনের সার্বিক নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এসময় দোকানের সাঁটার, ইট ও অবশিষ্ট মালামাল দুই লাখ টাকায় নিলামে দেয়া হয়। তবে নিলামের সময় এবার একটি অতিরিক্ত সমাজসেবামূলক শর্ত জুড়ে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে বলা হয়, চূড়ান্ত নিলামগ্রহীতাকে ওই দোকানগুলো থেকে যে বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট নদী বন্দরের এক নং টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে বিষফোঁড়ার মতো গড়ে উঠেছিল ২৭টি দোকান। এই দোকানগুলো বহু বছর আগে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদনে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওই দোকানগুলো সদরঘাটে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী চলাচলে ব্যাপক বিঘœ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দোকান থেকে উচ্ছিষ্ট বর্জ্য সরাসরি ফেলা হতো নদীতে। দোকান মালিকদের পোষা হকার বন্দরের পল্টুন, গ্যাংওয়ে ও যাত্রী ছাউনীতে অবস্থান করায় প্রায় সময়ই সৃষ্টি হতো কৃত্রিম মনুষ্যজট। এতে ওই এলাকায় চুরি-ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি এমনকি জাল টাকা চালানকারী চক্রের উপদ্রব লেগেই থাকত। এছাড়া মূল পয়েন্টে দোকানগুলোর অবস্থান হওয়ায় যাত্রীদের বন্দর ছেড়ে পল্টুনে অবস্থান করতে হতো। এতে প্রায় সময় ছোট বড় দুর্ঘটনাও ঘটত ওই এলাকায়। সম্প্রতি নদী বন্দরের সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ওই দোকানগুলো। যার প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে দোকানগুলো সরিয়ে নিতে একটি নোটিস প্রদান করে বিআইডব্লিউটিএ। দোকানের জায়গা বরাদ্দের সময় উল্লেখ থাকে বিআইডব্লিউটিএ চাইলে নোটিস প্রদানপূর্বক ওই জায়গা ফেরত নিতে পারবে। কিন্তু দোকান মালিকরা তা না মেনে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলায় গত ১৯ তারিখে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষে রায় প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, সদরঘাট নদী বন্দর থেকে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। এক সময় এই নদী বন্দরে এত যাত্রী চাপ ছিল না। বর্তমানে এই বিরাটসংখ্যক যাত্রী যখন বন্দরে অবস্থান করে তখন ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। তারা এই ২৭টি দোকানের কারণে ছাউনী থেকে সরাসরি নদী দেখতে পায় না। তাদের জাহাজ কখন ভিড়ছে কখন ছেড়ে যাচ্ছে তা দেখার জন্য তাদের পল্টুনে যেতে হয়। এতে পল্টুনে কৃত্রিম মনুষ্যজটের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন ধরনের যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটে। এছাড়া সদরঘাটের সমস্ত ভ্রাম্যমাণ হকারের মূল উৎস এই ২৭টি দোকান। বর্তমান সদরঘাট নদী বন্দরকে অত্যাধুনিকায়নের আওতায় এই দোকান ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আমরা প্রায় ৭ বছর আইনী লড়াই করে গত ১৯ তারিখে আপীল বিভাগ থেকে রায় পেয়ে দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছি। এখন আমরা ওই জায়গায় স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে বেড়া তৈরি করব। যাতে যাত্রীরা বন্দরের ছাউনিতে বসেই তাদের গন্তব্যের জাহাজের আসা যাওয়া দেখতে পারে এবং যাত্রী হয়রানি না হয়। তিনি আরও বলেন, সদরঘাটের বন্দর, গ্যাংওয়ে, পল্টুন থেকে হকার মুক্ত করা সম্ভব হলেও জাহাজের মধ্যে হকার উপদ্রব এখনও রয়েছে। এক ধরনের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তারা নৌকাযোগে হকারদের জাহাজে তুলে দেয়। এতে প্রধানত দুই ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। এক জাহাজের ডেকে হকাররা দোকানের পসরা বসায়। এতে যাত্রীদের অবস্থানের জায়গা কমে যায়। দুই এই হকার সৃষ্ট বর্জ্য এই এলাকার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দুই জাহাজের মাঝে ভাসমান নৌকা থেকে কেনাকাটা করার সময় প্রায় সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য আমরা ঈদ উপলক্ষে জাহাজের মালিকদের নোটিস দিয়েছি আগামী ২৯ তারিখের পর কোন জাহাজেও হকার থাকতে পারবে না। ঈদ উপলক্ষে নির্বিঘেœ যাত্রী চলাচলের কেমন প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদরঘাটে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। জাহাজে কোন ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে যাত্রীরা যাতে সহজে সরাসরি অভিযোগ করতে পারে এজন্য প্রতিটি জাহাজের অভ্যন্তরে আমাদের হেল্প লাইন মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকবে। জাহাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা মানার জন্য প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ সদস্য নিয়োগ করা থাকবে।
×