ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সখীপুরে পরিত্যক্ত স্কুল ভবন ॥ দোকান ভাড়ায় চলছে পাঠদান

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২১ মে ২০১৯

 সখীপুরে পরিত্যক্ত স্কুল  ভবন ॥ দোকান ভাড়ায়  চলছে পাঠদান

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২০ মে ॥ সখীপুর উপজেলার কৈয়ামধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র জরাজীর্ণ ভবন, আসবাবপত্র, সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বিদ্যালয়টির এখন বেহাল দশা। পাঠদানের জন্য একমাত্র ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প কোন ভবন না থাকায় ওই জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবনেই এখন অফিস কক্ষ। পিলার ফেঁটে গেছে, বাঁশের খুঁটির ওপর ছাদের অবস্থাও বেহাল, বর্ষায় ছাদ চুয়ে পানিতে ভিজে যায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এমন পরিস্থিতিতে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আবার শ্রেণীকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। এতে করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে টিনের দোকান ভাড়া করে ক্লাস চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। জানা যায়, বিগত ১৯৭২ সালে কৈয়ামধু প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ১৯৯৩-৯৪ সালের অর্থবছরে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, পুরনো এই বিদ্যালয়ে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এতে অফিস, লাইব্রেরি, শ্রেণীকক্ষসহ ৮টি কক্ষের প্রয়োজন হলেও পুরাতন ভবনে মাত্র ৪টি কক্ষ রয়েছে। অনেক স্থানে ছাদের ঢালাই ভেঙ্গে রড বের হয়ে গেছে। ভবনটি একেবারেই ক্লাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনটিতে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। বর্তমানে ভবনেই প্রতিটি জয়েন্টে জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি হলেই ক্লাসে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেণী সঙ্কট হওয়ায় স্লিপের টাকা ও স্থানীয় সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে একটি কাঁচা টিনশেড ঘর দেয়া হয়েছে। এতে দুটি কক্ষ করে কোনভাবে চলছে বিদ্যালয়টি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থার জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দেয়াল ফেঁটে গেছে পিলার ও বিম ফেঁটে গেছে, আশঙ্কা এড়াতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিম ঠিকা দিয়ে রেখেছি। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বেঞ্চ এবং মেঝেতে পানি জমে থাকে আবার কখনও ছাদের ফাঁটা অংশ ভেঙ্গে পড়ে। ভবনের বেহাল অবস্থা হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না। আমার বেতন থেকে কিছু টাকা দিয়ে বাজারে দোকান ভাড়া করে বিদ্যালয়ের ক্লাস চালাচ্ছি। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ কুদ্দুছ বলেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই টেন্ডার করে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। আশঙ্কা এড়াতে কিছু দিনের মধ্যে মেরামত করা হবে। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাশ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবন চিহ্নিত ও তালিকা তৈরি করে জরুরীভাবে মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন পাকা ভবন বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সাময়িক ক্লাস চালানোর জন্য বরাদ্দকৃত তিন লাখ টাকা দিয়ে দ্রুতই নতুন একটি টিনের ঘর তৈরি করা হবে।
×