ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্যবান অধিনায়ক মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৯ মে ২০১৯

ভাগ্যবান অধিনায়ক মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ এর আগে ৬ বার চেষ্টা করেও পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জেতা হয়নি কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা। চারটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট, আর দুটি টি২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে জিততে জিততেও হারতে হয়েছে। গত ১০ বছরের চেষ্টায় অবশেষে সেরা সাফল্য এসেছে। ৩ অধিনায়কের চেষ্টার পর চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে অবশেষে বাংলাদেশ দল পেয়েছে শিরোপা। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে অসম্ভব এক লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ দল। এর আগে তিনবার ফাইনালে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এবার তিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব এনে দিতে পেরেছেন। বড় কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা বাংলাদেশের ক্রিকেটে সর্বপ্রথম বয়ে এনেছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। মহিলা এশিয়া কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে সেই গৌরব বয়ে আনে বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু পুরুষ ক্রিকেট দল অনেক আগে থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচরণ করে দেশের নাম তুলে ধরলেও শিরোপা আসেনি। ১৯৯৮ সালে যখন বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছিল তার অনেক বছর পর বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের যাত্রা শুরু হয়। তারা স্বল্প সময়েই শিরোপার গৌরব উপহার দেয়। অথচ বেশ কয়েকবার শিরোপার কাছে গেছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। ৪ অধিনায়কের অধীনে ৬টি ফাইনালে পরাজয় বহু কষ্টের স্মৃতি জমা করেছে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্তরে। সেই ফাইনালগুলোর ঘটনাক্রম অনেকবারই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে- ২০০৯ ত্রিদেশীয় সিরিজ; অধিনায়ক আশরাফুল ॥ জিম্বাবুইয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে দেশের মাটিতে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে প্রথম কোন বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনাল। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৩টি করে উইকেট নিয়েছিলেন নুয়ান কুলাসেকারা ও অজন্তা মেন্ডিস। জবাবে পেসার নাজমুল হোসেনের তোপে পড়ে মাত্র ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে মাহেলা জয়বর্ধনের নেতৃত্বে খেলা শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে দলকে জয়ের দিকে নিতে থাকা কুমার সাঙ্গাকারাও ৫৯ রান করে সাকিব আল হাসানের শিকার হলে জয় হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছিল। কিন্তু রুবেল হোসেনের এক ওভারে ২০ রান তুলে নিয়ে মুত্তিয়া মুরলিধরন মাত্র ১৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস খেলে লঙ্কানদের ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পাইয়ে দেন। শিরোপা জয়ের প্রথম স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ২০১২ এশিয়া কাপ; অধিনায়ক মুশফিক ॥ আরেকটি ফাইনাল খেলার জন্য ৩ বছরের অপেক্ষা। এবারও দেশের মাটিতে, এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে। ভারত-শ্রীলঙ্কার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের হারিয়ে ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ফেবারিট হয়ে ওঠা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের দারুণ বোলিংয়ে ৯ উইকেটে মাত্র ২৩৬ রান তুলতে পেরেছিল পাকরা। কিন্তু পরে ব্যাট করে শেষ ওভারে প্রয়োজনীয় ৯ রান আর তুলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আব্দুর রাজ্জাক-শাহাদাত হোসেন মিলে করতে পেরেছেন ৬ রান। ২ রানে হেরে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের হাতে ওঠেনি শিরোপা। ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপ; অধিনায়ক মাশরাফি ॥ প্রথমবার কোন টি২০ আসরের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ দল। প্রাথমিকপর্বে দুর্দান্ত খেলা দলটি ফাইনালে শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয়। তবে বৃষ্টির দাপটে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ফাইনাল। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলার উইকেট অসাধারণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্দান্ত হওয়ার কারণে খেলা শুরু হলে ১৫ ওভারে নামিয়ে আনা হয় ম্যাচের দৈর্ঘ্য। ৫ উইকেটে ১২০ রান তুলেও ভারতের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। শিখর ধাওয়ানের ৪৪ বলে ৬০ ও বিরাট কোহলির ২৮ বলে অপরাজিত ৪১ রানে আরেকবার শিরোপা হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। মাশরাফির প্রথম আশাভঙ্গ ছিল সেটি। ২০১৮ ত্রিদেশীয় সিরিজ; অধিনায়ক মাশরাফি ॥ প্রাথমিক রাউন্ডে জিম্বাবুইয়েকে দুইবার ও শ্রীলঙ্কাকে একবার বিধ্বস্ত করে মাশরাফির দল। তবে শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে হার দেখে বাংলাদেশ। এরপর ফাইনালেও ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে হতাশায় পুড়তে হয়। মিরপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রথম ব্যাট করে মাত্র ২২১ রানেই থেমেছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস। পেসার রুবেল হোসেন নেন ৪ উইকেট। জবাবে মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা হয়েছেন ব্যর্থ। তিনিও ৯২ বলে ৬ চার, ৩ ছক্কায় ৭৬ রানে সাজঘরে ফিরলে ১৪২ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। সাকিব ইনজুরিতে পড়ায় ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। আরেকটি ব্যর্থতা মাশরাফির। ২০১৮ টি২০ নিদাহাস ট্রফি; অধিনায়ক সাকিব ॥ প্রাথমিক রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ইনজুরি থেকে ফিরে মাহমুদুল্লাহর কাছ থেকে নেতৃত্ব বুঝে নেন সাকিব। দারুণ জয়ে দল ফাইনালেও ওঠে। কিন্তু দীনেশ কার্তিকের হাঁকানো শেষ বলের ছয়ে ৪ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় ভারত। কলম্বোয় বাংলাদেশ করেছিল ৮ উইকেটে ১৬৬ রান। সাব্বির রহমান ৫০ বলে ৭ চার, ৪ ছক্কায় ৭৭ রান করেছিলেন। জবাবে সৌম্য সরকার শেষ বলে ছক্কা হজম করলে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান তুলে ৪ উইকেটের জয় পায় ভারতীয় দল। ২০১৮ এশিয়া কাপ; অধিনায়ক মাশরাফি ॥ গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করলেও আফগানিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরও সুপার ফোরে ওঠে মাশরাফিরা। ৬ দিনে ৪ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ, তবু সুপার ফোরে পরাজিত করে পাকিস্তান ও আফগানদের। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে লিটন দাসের ১১৭ বলে ১২ চার, ২ ছক্কায় করা ১২১ রানের পরও বাকিদের ব্যর্থতায় ৪৮.৩ ওভারে মাত্র ২২২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে বাংলাদেশী বোলারদের দাপটে কোণঠাসা ভারতের শেষ ওভারে ৬ রানের প্রয়োজন পড়ে। মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্ত বোলিং করলেও শেষ বলে লেগ বাই নিয়ে ভারতকে ৩ উইকেটের জয় পাইয়ে দেন কেদার যাদব। স্বপ্ন আরেকবার সত্যি হয়নি বাংলাদেশের ও মাশরাফির। ২০১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজ; অধিনায়ক মাশরাফি ॥ মাশরাফি তিনবার পারেননি। ওয়ানডে আসরে দুইবার। তবে তৃতীয় ওয়ানডে আসরে ঠিকই শিরোপা জিতেছেন। বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা। ডাবলিনের মালাহাইড ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান তোলে। কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ২১০ রানের অসম্ভব এক টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে। সৌম্য ৪১ বলে ৬৬ আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলে ২২.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ২১৩ রান তুলে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
×