ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

একযুগেও নতুন নেতৃত্ব আসেনি ঢাকা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৯ মে ২০১৯

একযুগেও নতুন নেতৃত্ব আসেনি ঢাকা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে

ওয়াজেদ হীরা ॥ ১৩ বছর আগের কমিটি দিয়েই চলছে ঢাকা মহানগরে দুই অংশের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে নগরে কমিটি না হওয়ার কারণে উদ্যোমী আগ্রহী নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়ছে। টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করার পর যে কর্মসূচীতে না গেলেই নয় এর বাইরে নেতাকর্মীরা কোন কর্মসূচীতে যেতে চায় না। জাতীয় কর্মসূচীতে নেতাকর্মী মিললেও অন্য কর্মসূচীতে নেই আগ্রহ। এ প্রেক্ষিতে সম্মেলন দিয়ে সংগঠনে প্রাণ ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিকভাবে আরও ত্বরান্বিত করার কথাও বলছেন মহানগরের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন সেপ্টেম্বরের আগেই হবে সম্মেলন। দলীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দুটি ভাগে ভাগ করে কমিটি গঠন হয়। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছরেও আর কোন নতুন সম্মেলন হয়নি। ফলে সেই পুরনো কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলছে এখনও। এতে করে মহানগর পর্যায়ের এই দুই কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আসার সুযোগ তৈরি হয়নি। আর দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার ফলে নেতা হওয়ার আশায় অনেকেই এখন ঝিমিয়ে গেছেন। বর্তমানে অনেকেই যারা দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে নানাভাবে পরিশ্রম করেছেন, রাজপথ কাঁপিয়েছেন সেই পুরনো নেতারা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টায় ঝুঁকছেন সহযোগী সংগঠনের দিকে। এতে করে অন্য সহযোগী সংগঠনে যেমন বাড়ছে কর্মীর সংখ্যা তেমনি দিনে দিনে অনেকটাই কর্মী কমে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগে। যারা এখনও স্বেচ্ছাসেবক লীগে রয়েছে সেসব নেতাকর্মী হয়ে পড়েছেন উদ্যমহীন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা কর্মীরা বলছেন, যারা দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করে পরবর্তীতে সাবেক হওয়ার পর অনেকেই রাজনীতি ধরে রাখতে সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্লাটফর্মকেই বেছে নেন। এতে করে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকাও রাখা যায় আবার নতুন একটি পরিচয় পাওয়া যায়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান নেতারা ছাত্রলীগ থেকেই এসেছেন। কিন্তু গত এক যুগে ছাত্রলীগের সাবেক হওয়া নেতারা তেমন একটা জায়গা পাচ্ছেনা নিজেদের নতুন পরিচয়ে সামনে আসতে। স্বেচ্ছাসেবক লীগে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আশা প্রকাশ করেছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পদ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পদপ্রত্যাশী নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘ ১৩ বছর সম্মেলন না হওয়ায় ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর এবং দক্ষিণে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখন জাতীয় কর্মসূচী ছাড়া খুব একটা প্রোগ্রামে যাই না। নেতার বাসা বা অফিসেও খুব একটা আড্ডা হয় না। আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচী ছাড়া অনেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচীতে যেতে চায় না বলেও জানান। আরেক নেতা বলেন, দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরেই তো নাম পরিচয়হীনভাবে কর্মসূচীগুলো করে আসছি। একটা আশায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে আমাদের জায়গা হবে। কিন্তু সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না আমরাও এখন ক্লান্ত। অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে হতাশার সুর। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের তাগিদ থাকলেও তা বাস্তবায়নে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ না নেয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ১৩ বছর আগে সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোবাশ্বের চৌধুরী। আর ফরিদুর রহমান খান ইরান নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস, আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুর রহমান টিটু। জানা গেছে, ২০০৬ সালে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হওয়ার ছয় বছর পর ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি ১০১ সদস্য বিশিষ্ট করার প্রস্তাব পাস করা হয়। কিন্তু এখনও ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দিয়ে সংগঠনের কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এতে করে ২০১২ সালের প্রস্তাব অনুসারে সংগঠনে আরও ত্রিশ নেতা বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ সময়েও মহানগরের দুই অংশ এখনও কয়েকটি থানায় কমিটি দিতে পারেনি। পুরনো বেশ কয়েকটি থানার পাশাপাশি নতুন থানাগুলোতেও কমিটি নেই। মহানগেরর বিভিন্ন থানা কমিটির মেয়াদও কোনটির ১৭ বছর আগে দেয়া। আর সেসব পুরনো কমিটি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার করার প্রেক্ষিতে নতুনদের আগ্রহ দিন দিন কমে আসছে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় সংগঠনের কাজ একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়ে নীতিনির্ধারণী মহলকে এখনই ভেবে দেখার কথাও বলছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্র জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগরের নেতারা সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা আশ^াস দিয়েছেন দ্রুতই সম্মেলন করার। ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা জানিয়েছেন তারা সম্মেলনের বিষয়ে ইতিবাচক। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ পেলে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া বলেও জানান। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা চাই নেতাকর্মী তৈরি হোক। আমরা আন্তরিকভাবেই সম্মেলন চাই। বিভিন্ন কারণে আমরা এর আগে সম্মেলন করতে পারি নেই। আমাদের ইচ্ছা আছে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মহানগরের সম্মেলন করার। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কবে নাগাদ হতে পারে সেই সম্মেলন এমন প্রশ্নে মোল্লা আবু কাউছার বলেন, আমরা চাই আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই। আশা করছি সবকিছু গুছিয়ে আনতে পারব। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ তথা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে এমন কোন নেতাকর্মী ঝিমিয়ে যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। আবু কাউছার বলেন, আমি মনে করি দিনদিন আমাদের নেতাকর্মীরা আরও বেশি উজ্জীবিত হচ্ছে। আমাদের দল তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে নেতাকর্মীরাও উৎফুল্ল। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আশার বাণী শুনে তৃণমূলের মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতারাও আশায় বুক বাধছেন নতুন নেতৃত্বের।
×