ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিম বাংলাদেশের দারুণ জয় ॥ উইন্ডিজের হার ৮ উইকেটে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৮ মে ২০১৯

 টিম বাংলাদেশের দারুণ জয় ॥ উইন্ডিজের হার ৮ উইকেটে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বেশ ঠা-া পরিবেশ আর প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের কাছে বাজে হার হয়েছিল সফরকারী বাংলাদেশের। আর স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে যেভাবে নাজেহাল করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাতে করে শঙ্কা জমেছিল সফল হওয়া নিয়ে। কিন্তু সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে ক্যারিবীয়দের ৮ উইকেটে বিধ্বস্ত করে শুভ সূচনা করেছে টাইগাররা। মঙ্গলবার ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডাবলিনের ক্যাসল এভিনিউতে টস জিতে আগে ব্যাট করে শাই হোপের টানা দ্বিতীয় শতকে বিশাল সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্যারিবীয়দের নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬১ রানেই আটকে রাখে বাংলাদেশ। জবাবে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারের জোড়া অর্ধশতকে ১৪৪ রানের জুটিতে জয়ের ভিত পায় টাইগাররা। পরে সাকিব আল হাসানের অপরাজিত অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৬৪ রান তুলে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয়। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে এদিন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ছিলেন না। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৭৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি এবং শাই হোপের সঙ্গে ৩৬৫ রানের বিশ^রেকর্ড গড়া উদ্বোধনী জুটি উপহার দিয়েছিলেন। পিঠ ব্যথায় তার বদলে সুনিল এ্যামব্রিস নামেন এবং এবারও ধীরেসুস্থে শুরু করেন শাই হোপ। প্রথম ৪ ওভারে মাশরাফি মাত্র ১১ রান দিলেও পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৮ রান তুলে ফেলা ক্যারিবীয়রা পরে চড়াও হতে শুরু করেন। ৮৯ রানের জুটি গড়ে ওঠে ১৬.১ ওভারে। সেই ওভারেই বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সাফল্য আনেন মেহেদি হাসান মিরাজ, ৫০ বলে ৩৮ রান করা এ্যামব্রিস সাজঘরে ফেরেন। পরবর্তী ওভারে সাকিব শিকার করেন ড্যারেন ব্রাভোকে (১)। এরপর সাকিব-মিরাজের স্পিন জুটি যথেষ্ট ভুগিয়েছে ক্যারিবীয়দের। কিন্তু মাথা ঠা-া রেখে খেলে তৃতীয় উইকেটে হোপ-রোস্টন চেস ১১৫ রানের জুটি গড়েন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ, সিরিজে টানা দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি আদায় করেন হোপ। চেস পান অর্ধশতক। এ দু’জন বাংলাদেশের পেস স্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমানকে তুলোধুনো করেন। মনে হচ্ছিল প্রথম ম্যাচের মতোই আবারও পাহাড়সম সংগ্রহ গড়বে ক্যারিবীয়রা। ওই সময় ফিরতি স্পেলে এসে দু’জনকেই শিকার করেন মাশরাফি। হোপ ১৩২ বলে ১১ চার, ১ ছক্কায় ১০৯ এবং চেস ৬২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৫১ রান করেছিলেন। এ দু’জনের বিদায়ের পর আর কেউ দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশী বোলারদের দাপটের মুখে। এমনকি ফিরতি স্পেলে এসে আবারও ক্রমাগত পিটুনি খেতে থাকা মুস্তাফিজও ফিল্ডারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে দুই উইকেট নেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে শেষ করেন। ১টি করে উইকেট পেলেও ১০ ওভার করে বোলিং করা সাকিব ৩৩ ও মিরাজ ৩৮ রান দেয়াতে ৯ উইকেটে ২৬১ রান করতে সক্ষম হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফলতম বোলার মাশরাফি ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। সবচেয়ে খরুচে মুস্তাফিজ ২ উইকেট নিতে ১০ ওভারে ব্যয় করেছেন ৮৪ রান। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছিল। তাই ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে লিটন দাসকে বাদ রেখে তামিমের সঙ্গী হিসেবে নামেন সৌম্য। চিরাচরিত আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে থাকেন সৌম্য, তবে তামিম ছিলেন ধীরস্থির। প্রথম থেকেই ক্যারিবীয়দের শক্ত পেস বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলেন তারা। উভয়ে অর্ধশতক তুলে নেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানের জুটি গড়েন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি। আর এতেই জয়ের মজবুত ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। দুর্দান্ত খেলতে থাকা সৌম্য ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ব্রাভোর অবিশ^াস্য ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ৬৮ বলে ৯ চার, ১ ছক্কায় ৭৩ রান করেছিলেন তিনি। তবে এতেও বিচলিত না হয়ে এরপর তামিমের সঙ্গে সাকিব দারুণ এক জুটি গড়েন। ৫২ রানের জুটিটি ভাঙ্গে তামিমকে ফিরতি স্পেলে এসে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল শিকার করলে। তামিম ১১৬ বলে ৭ চারে ৮০ রান করেছিলেন। ততোক্ষণে সাকিব স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন নির্বিঘেœ। তিনি মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন থাকেন শেষ পর্যন্ত। তারা মাত্র ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন ৫ ওভার বাকি থাকতেই। সাকিব ৬১ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৬১ এবং মুশফিক মাত্র ২৫ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ৩০ বল হাতে রেখে ৪৫ ওভারে ২ উইকেটে ২৬৪ রান তুলে জয় পায় টাইগাররা। গ্যাব্রিয়েল ও চেস ১টি করে উইকেট নেন। স্কোর ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস- ২৬১/৯; ৫০ ওভার (হোপ ১০৯, চেস ৫১, এ্যামব্রিস ৩৮; মাশরাফি ৩/৪৯, সাইফউদ্দিন ২/৪৭, মুস্তাফিজ ২/৮৪, সাকিব ১/৩৩, মিরাজ ১/৩৮)। বাংলাদেশ ইনিংস- ২৬৪/২; ৪৫ ওভার (তামিম ৮০, সৌম্য ৭৩, সাকিব ৬১*, মুশফিক ৩২*; চেস ১/৫১, গ্যাব্রিয়েল ১/৫৮)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
×