ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

হাতে লেখা পত্রিকা আন্ধারমানিক ও শ্রমজীবী হাসান

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৪ মে ২০১৯

 হাতে লেখা পত্রিকা আন্ধারমানিক ও শ্রমজীবী হাসান

অজোপাড়াগাঁয়ের যুবক হাসান পারভেজ এবার হাতে লিখে প্রকাশ করলেন কমিউনিটি পত্রিকা ‘আন্ধারমানিক’। সাদামাটা শ্রমজীবী পরিবারের এক হাসান যেন পশ্চিম সোনাতলা গ্রামকে আলোকিত করে তুলেছেন। অবশেষে অসাধ্য সাধন করতে স্ত্রী শাহনাজকে সঙ্গে নিয়ে রাতদিন বিরামহীন শ্রম দিয়েছেন। পড়শীসহ গ্রামের সকল শ্রেণী-পেশার সকলকে এক ছাতার তলে এনেছেন। যে যেভাবে পেরেছেন গ্রামটিকে হাতের লেখা পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তুলে ধরলেন। বাড়ি সংলগ্ন ইলিশের অভয়াশ্রম খ্যাত আন্ধারমানিক নদীর নামানুসারে পত্রিকাটির নামকরণ করেছেন। শুধু কৃষক-শ্রমজীবী হাসান ও তার স্ত্রী নয়। গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবিনা ইয়াসমিন, রবিউল ইসলাম, ছত্তার শেখ, আকলিমা বেগম, রুশিয়া বেগম, শাহনাজ বেগম, সোহেল নাজির, জুয়েল নাজির, রবিউল হাওলাদার, সালমা বেগম, ইয়াসমিন নাজির, শাহীন বেপারী, রবিউল মাঝি সবাই এ পত্রিকার রিপোর্টার। কেউ নিজের ঘরের কথা। কেউ মনের কথা। মনের বাসনা। কেউ গ্রামের সমস্যা। সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। যেন নিজ নিজ যোগ্যতায় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যেন নিজেরাও পারেন এমন মনোবাসনা নিয়ে আজ তাঁরা সবাই সফল হয়েছে। পহেলা মে এর প্রথম সংখ্যার প্রকাশনা উৎসব করেছেন। হাসান তার নিজের খড়ের ঘরের সামনের উঠোনেই করলেন আনুষ্ঠানিকতা। হাসানের ভাষ্য, প্রতিদিন দেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে নেতিবাচক খবর দেখেন, পড়েন আর শোনেন। যা তার কাছে ভাল লাগেনা। তাই ইতিবাচক খবর তুলে ধরার মানসে হাতের লেখা কমিউনিটি পত্রিকা আন্ধারমানিক উপস্থাপন করলেন। হাসান জানায় রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করার সময় তার স্ত্রী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যেতেন। কিন্তু কখনও অসহযোগিতা করেনি। উৎসাহ দিয়েছেন। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবদুল কাদের আকন জানালেন, ও (হাসান) সবাইকে নিয়ে যা শুরু করল, তা সকলের জন্য মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। নিঃসন্তান হাসান ও শাহনাজ দম্পতি জানান, সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যেও এ কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিবাচক খবর তুলে ধরার জন্য তার এই প্রাণপণ প্রচেষ্টা। এই বয়সে এইচএসসি শেষ করেছেন। দৃঢ় ইস্পাত কঠিন সিদ্ধান্ত হাসানের বিএ পাস করবেন। আর আন্ধারমানিক নামের এ কমিউনিটি পত্রিকার মাধ্যমে তার গ্রামকে সবার সামনে তুলে ধরবেন। পিছপা হবেন না। প্রতি মাসে একবার তার প্রকাশনা বের করবেন। নিজেরা রিপোর্ট লেখেন। এরপরে একজনকে দিয়ে কিছু সম্মানির বিনিময় সুন্দর হাতের লেখায় আট পৃষ্ঠার এ প্রকাশনার উপস্থাপন। হাসান জানান, তার এই অনুপ্রেরণার পেছনের একজন মানুষ রয়েছেন যার অবদান না বললেই নয়। তিনি হলেন উপকূল বন্ধু, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু ভাই। তিন বছর আগে তার সঙ্গে দেখার পরে তিনি এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। যা আজ বাস্তবে পূর্ণতা পেল। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×