ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘আছো সত্তায় আছো চেতনায়’ মুজিববর্ষের আয়োজন

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১ মে ২০১৯

‘আছো সত্তায় আছো চেতনায়’ মুজিববর্ষের আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশাল প্রদর্শনালয় জুড়ে ছড়িয়ে আছে জাতির জনকের নানা অভিব্যক্তিময় প্রতিকৃতি। রং আর রেখায় চমৎকার উদ্ভাসিত হয়েছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি। অর্ধশাতিক শিল্পীর শত চিত্রপটে ধরা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক থেকে পারিবারিক জীবন। সেই সুবাদে সাহসী সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি দেখা মেলে মমতায় আচ্ছন্ন শেখ মুজিবের প্রতিচ্ছবি। তেমনই একটি ছবিতে হাসি মুখে কোলের মধ্যে সযতেœ আগলে রেখেছেন নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়কে। আর ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে মেয়ে শেখ হাসিনা। আরেক ছবিতে শেখ রাসেলকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছেন তিনি। এমন চিত্রকর্মের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ কিংবা ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে শিল্পিত আঁচড়ে আবির্ভূত হয়েছেন মুজিব। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবনের নানা সময়কে উপজীব্য করে চিত্রিত এমন একশত চিত্রকর্ম নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো ‘আছো সত্তায় আছো চেতনায়’ শীর্ষক প্রদর্শনী। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে ৫ মে পর্যন্ত চলমান প্রদর্শনীটির আয়োজক তারুণ্য কথা। বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। যৌথভাবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন দুই প্রখ্যাত শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও অধ্যাপক জামাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন তারুণ্য কথার আহ্বায়ক আতিকুর রহমান দিপু। হাছান মাহমুদ বলেন, ছবি আঁকতে গেলে হৃদয়ের গভীরতা লাগে। এটা কোন সহজ কাজ না। লেখনীর চেয়ে চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে ধরা কঠিন। প্রতিটি চিত্রকর্মই অসাধারণ। এ প্রদর্শনী ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলে ঢাকার বাইরের তরুণরাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চমৎকার এ আয়োজনটি দেখতে পারবেন। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার আয়োজন করা গেলে, পুরো আয়োজনটিই হবে অসাধারণ। তিনি বলেন, বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে জাতি উন্নত হয় না। এতে উন্নত দেশ গঠন করা যায়, উন্নত জাতি গঠন করা যায় না। এর পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠন করাটা এখন জরুরী। মানুষের মানবিকতার উন্মেষ ঘটনাতে চিত্রশিল্পীদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। কে এম খালিদ বলেন, আমাদের জাতির পিতাকে নিয়ে অনেকেই বিতর্ক করেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের জাতির পিতাকে নিয়ে বিতর্ক নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও কোন বিতর্ক করতে দেয়া হবে না। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। প্রখ্যাত এবং নবীন ও প্রবীণ শিল্পীর সম্মিলন ঘটেছে প্রদর্শনীতে। ঠাঁই পেয়েছে ৮১ শিল্পীর একশত চিত্রকর্ম। প্রথিতযশা শিল্পীদের মধ্যে রয়েছে সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শেখ আফজাল, শহীদ কাজী, কিরীটি রঞ্জন বিশ^াস, গুপু ত্রিবেদী প্রমুখ। এছাড়া প্রদর্শনীতে রয়েছে অমিত নন্দী, রাজীব শীল, শাহানা মোস্তফা, ওয়াদুদ কফিল, অভিজিৎ চৌধুরী, তানবীর সারওয়ারসহ দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি। আয়োজকরা জানান, ‘আছো সত্তায় আছো চেতনায়’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীটি পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। সে সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে বিশে^র বিভিন্ন দেশেও এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। জাদুঘরের ৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। গানে কথায় মে দিবস উদ্যাপন ॥ বৈশাখী বিকেলে শ্রমজীবী মানুষের জন্য ভেসে বেড়ায় গানের সুর। সঙ্গীতের বাণীর মাঝে উঠে আসে শ্রমিকের অধিকারের কথা। বক্তার আলোচনায় উচ্চারিত হয় শ্রমিকের মর্যাদা ও মানবিকতা রক্ষার প্রত্যয়। এভাবেই গানে সুরে ও বিশিষ্টজনের আলোচনায় উদ্যাপিত হলো মহান মে দিবস। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসিসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মঞ্চে এভাবেই গাওয়া হলো শ্রমিকের জয়গান। নির্ধারিত দিবসটির আগের দিন ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। দুই পর্বে বিভক্ত আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিল শ্রমজীবী মানুষকে নিবেদিত আলোচনা। মে দিবসের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধ ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী ফকির আলমগীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে শ্রমিকের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি। তাই ন্যায্য বেতনের পাশাপাশি শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমে-ঘামে দেশের জন্য নিবেদিত এসব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। শ্রমজীবী নাগরিকের মানবিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। তাহলেই মে দিবসের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হবে। কারণ, মে দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শ্রমিকের রক্তের ঋণ। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে এই দেশ। তবে অপশক্তি সেই অর্জনকে ব্যাহত করতে চায়। ধর্মের নামে বিভাজন ছড়িয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে তারা। মানুষে মানুষে মৈত্রীর বদলে তারা সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে জিঘাংসা। এই অশুভ শক্তিকে রুখে দিয়ে গড়তে হবে বৈষম্যহীন সেই কাক্সিক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্র। আলোচনা শেষে শুরু হয় সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা। গানে গানে ব্যক্ত হয় শ্রমিকের প্রতি ভালবাসা। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘হাতুড়িতে পিটাও লোহা, মাকুতে দাও টান’ শীর্ষক সঙ্গীত। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ গো’। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘বুক বেঁধে লড়তে হবে, ভাঙতে হবে দুখ শিকল’। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘আজাদী হয়নি আজও তো’। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক শিল্পীকেন্দ্র, সমস্বর ও ভিন্নধারার শিল্পীরা। তাদের পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘গাঁয়ের চাষী, নায়ের মাঝি, দেশের মাটি ডাক দিয়েছে, ‘কারখানাতে ক্ষেতখামারে, শহর নগর আর পাহাড়ে’, ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়’, ‘বিশ্বে জেগেছে নওজোয়ান’, ও ‘আমাদের ন্যায় অধিকার যত’। আমরা তিনজন নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। লোক নাট্যদলের নতুন প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে এসেছে ‘আমরা তিনজন’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। বুদ্ধদেব বসুর গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। মায়াময়ী এক নারীর প্রতি তিন বন্ধুর প্রবল প্রেম এবং বিয়োগান্তক আখ্যান ‘আমরা তিনজন’। ১৯২৭ সালের ঢাকার পুরানা পল্টনকে ঘিরে এ গল্পটি রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে তিন বন্ধু বিকাশ, অসিত এবং হিতাংশু। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা একসঙ্গে থাকে। এক সময় তিন বন্ধুই একসঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। মেয়েটির নাম অন্তরা, বাড়ির সবাই তাকে ‘তরু’ বলে ডাকে। এই মেয়েটিকে ঘিরেই সারাক্ষণ তিন বন্ধুর নানারকম জল্পনা-কল্পনা আবর্তিত হতে থাকে। মূলত বর্তমান সময়ে বসে বিকাশ ১৯২৭ সালের গল্পটা স্মৃতিচারণ করেন। তিন বন্ধুর আড্ডার একপর্যায়ে বিকাশ বলে, মেয়েটি দেখতে অনেকটা মোনালিসার মতো। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হলেও তাদের কাছে মেয়েটির নাম হয়ে যায় ‘মোনালিসা’। এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নাটকটি।
×