ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট বাজেটের ২৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে

প্রকাশিত: ১১:০২, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট বাজেটের ২৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেটের ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ঘোষিত বাজেটের মোট আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আয়, কর রাজস্ব আদায়, সরকারী ব্যয় সবই বেড়েছে, কমেছে মূল্যস্ফীতিও। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (ষান্মাষিক) প্রথমার্ধের বাজেটের বাস্তবায়ন চিত্র তুলে ধরেন। বাজেট ২০১৮-১৯ : দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসংক্রান্ত প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, বর্তমান সরকার একটানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম অর্থবছর আমরা ব্যাপক প্রত্যাশা ও বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছি। বছরের প্রথমার্ধে অগ্রগতিতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের গতিপথ সঠিক ধারায় রয়েছে। বিবেচ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকসমূহের ইতিবাচক অবস্থা, বিশেষ করে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রফতানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বেসরকারী ঋণ প্রবাহের উর্ধগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা এবং মূল্যস্ফীতির নি¤œগতি নির্দেশ করে যে, উন্নয়নের মহাসড়কের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের অন্যতম কৌশল হবে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, বহুমুখীকরণের মাধ্যমে গুণগত ও মানসম্পন্ন রফতানি পণ্য উৎপাদন, বিদ্যমান বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার অন্বেষণ। আমি আশা করি আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক চালিকাশক্তিগুলোকে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কার্যকরী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সঠিক নির্দেশনায় অর্থনীতির প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত হবো। অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রতিবেদনে আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার যে ভিত রচনা করেছিলেন, তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে তা আজ বাস্তব রূপ লাভ করছে। বাংলাদেশ আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বিশ্ব মর্যাদার আসনে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়ন-বিস্ময়; আমাদের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, বাংলাদেশের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়া। এ লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে চলছে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ২১০০ সাল মেয়াদে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৮ তে এসে পূরণ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল শর্ত। তিনি বলেন, উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি বিদ্যুত খাতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ২১ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। তাছাড়া উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই কর্মসংস্থান সঞ্চালক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও অসমতা দূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধি, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিবিএসের সাময়িক হিসাব মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিজিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এ যাবৎ কালের রেকর্ড। জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি হতে যাচ্ছে, যা পূর্বের তিন অর্থবছরে ৭ শতাংশের অধিক ছিল। এছাড়া মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার।
×