ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিতাস কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

তিতাস কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত জ্বালানি খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাসের দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অবিলম্বে হিসাব বিবরণ নিয়ে তা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল তিতাসের দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। ওই প্রতিবেদনে একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন চাকরি করে কর্মকর্তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে দুদক দাবি করে দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন কর্মকর্তারা। তিতাসের বিষয়ে দুদকের প্রতিবেদন এবং তিতাসের কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সাত সফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তিতাসকে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাত দফা নির্দেশনা দেয়া সম্পর্কে বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, যেসব বিষয়ে দুর্নীতির উদ্ভব হয় সেগুলোতেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিও দূর করতে চায় সেবা সংস্থা থেকে। ওই সূত্রটি বলে, যেসব সেবা সাধারণভাবেই পাওয়ার কথা সেখানে চড়ামূল্য দিয়ে গ্রাহককে সেবা নিতে হচ্ছে। যার পুরোটাই ঘুষ। এতদিন ধরে এসব চলে আসলেও প্রতিকার করা হয়নি। এমনকি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ট্রুথ কমিশনে গিয়ে তিতাতের ৯৬ কর্মকর্তা নিজেদের দুর্নীতি স্বীকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সাত দফা নির্দেশনার প্রথমটিতে বলা হচ্ছে গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় মনে করছে তিতাস যদি গ্রাহকের আঙ্গিনায় মিটার স্থাপন করে তাহলে গ্যাস ব্যবহারের আগেই বিল আদায় হয়ে যাবে। এতে দুর্নীতির পরিমাণ কমবে। আর মিটার ধরে গ্যাস ব্যবহারের সঠিক হিসাব করলে কি পরিমাণ চুরি হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধান শেষে দুদক বলছে আবাসিক খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৮ সিএফটি গ্যাস ব্যবহারের প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যবহার তা থেকে ৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৭০৩ ঘনমিটার কম হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২৯৩ কোটি টাকা। আবাসিকের বিপুল গ্যাস শিল্পে অবৈধ সংযোগ দিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। শুধু এই গ্যাসই নয় বিতরণ কোম্পানিটি এত বেশি পরিমাণ অবৈধ সংযোগ দিয়েছে যে মোট বিতরণ করা গ্যাসের ৬ ভাগ তারা সিস্টেম লস দেখাচ্ছে। অর্থাৎ এই গ্যাসও অবৈধভাবে বেচে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ সাশ্রয় হওয়া বিপুল পরিমাণ গ্যাসকে দুর্নীতির বড় উৎস হিসেবে দেখছে মন্ত্রণালয়। যে গ্যাসের আসলে কোন হিসাব নেই কারও কাছে। তিতাস বলছে এটি সিস্টেম লস। মন্ত্রণালয় অন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে ট্রুথ কমিশনে যেসব কর্মকর্তারা গিয়েছিল তাদের তালিকা অবিলম্বে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে জানাতে হবে এদের কে কোন অবস্থাতে রয়েছেন। একই সঙ্গে ডিজিএম এবং জিম থেকে সকল কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব নিতে হবে, তিতাসের কোথায় কোথায় মিটার বুস্টার লাগবে তার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে, বিতরণ কোম্পানির কাজের অগ্রগতি নিয়ে কেপিআই করা, প্রতিমাসের অগ্রগতি নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা করা এবং বকেয়া বিল আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈঠকে তিতাস বিষয়ে দেয়া দুদকের প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সব ধরনের অনিয়ম নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এসব অনিয়ম দূর করার নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে বলা হয় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কারা এসব অবৈধ সংযোগের পিছনে রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দুদক তার প্রতিবেদনে বলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দিনে লাইন কেটে দিয়ে রাতের আঁধারে আবার লাগিয়ে দিচ্ছে তিতাসই। ফলে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নামে এক ধরনের আইওয়াশ করা হচ্ছে। অবশ্য দুদক বলছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও এবং জেলা পর্যায়ে ডিসিদের নেতৃত্বে কমিটি রয়েছে। তবে এই কমিটির উপরও অদৃশ্য হস্তক্ষেপ করা হয়। এই অদৃশ্য হস্তক্ষেপের কারণে অবৈধ সংযোগ যেমন দেয়া হয় সেইভাবে কাটাও যায় না। গ্রাহক যাতে সঠিক চাপে পাওয়া গ্যাসের বিল দিতে পারে এজন্য ইলেক্ট্রিক ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার লাগানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অনুসরণ করার জন্য তিতাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুদক বলছে, তিতাস তাদের অবৈধ বাণিজ্যের সম্প্রসারণের জন্য ইভিসি মিটার লাগায় না। এতে বৈধ গ্রাহক বেশি বিল দিয়ে থাকে। বিল আদায়ই নয় আর্থিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করতে জ্বালানি বিভাগের ওই বৈঠকে নির্দেশ দেয়া হয়। দুদক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল কোম্পানির বিলের টাকা মাদার একাউন্টে না পাঠিয়ে ব্যাংক মাস শেষে স্থানীয় হিসেবেই রেখে দেয়। মাদার একাউন্টে পাঠালে ৮ ভাগ হারে সুদ দিতে হয়। যেখানে স্থানীয় একাউন্টে পাঠালে সুদ দিতে হয় সাড়ে তিন ভাগ হারে। এতে আর্থিক ক্ষতি হলেও ব্যক্তিগত কারও কারও লাভের জন্য তিতাসের পদস্থরা চুপ থাকছেন।
×