ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ দিবস পালন

নিয়ন্ত্রণ নয়, এবার ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

নিয়ন্ত্রণ নয়, এবার ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী

নিখিল মানখিন ॥ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ নয়, এবার চিরতরে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচীতে নেমেছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণে ম্যালেরিয়াজনিত স্থানীয় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে এখনও দেশের প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এলেও তিন পার্বত্য জেলা এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯১ শতাংশই সীমান্তবর্তী পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায়। তবে এ তিন জেলার মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক এগিয়ে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা। ২০১৬ সালের পর ওই জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে। গত ১১ বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৪ হাজার থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৮ সালে ১০ হাজারে নেমেছে। আর এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৭ সালের ২২৮ জন থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৮ সালে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহেও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সফলতা আসতে হবে। ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৫২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে এবং সাত জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসকে সামনে রেখে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডাঃ শহীদ মিলন ভবনে আয়োজিত মিডিয়া ওরিয়েন্টশনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ ২৫ এপ্রিল পালিত হবে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। আর দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থাসমূহ এই ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগী নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজেস ও ওয়াশ কর্মসূচীর পরিচালক ড. মোঃ আকরামুল ইসলাম, অধ্যাপক বেনজীর আহমদ, ডাঃ এ মান্নান বাঙ্গালী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মায়া সাপাল, প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ মোঃ মশিকুর রহমান বিটু। জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ এম এম আক্তারুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতি বছর দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ এই ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রামে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় জনগোষ্ঠীর মাঝে এ পর্যন্ত এক কোটি ৬০ লাখ দীর্ঘস্থায়ী কীটনাশকযুক্ত মশারী বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় এ পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শতকরা ৮৮ ভাগ এবং মৃত্যুর হার প্রায় ৯৫ ভাগ কমাতে সক্ষম হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা একটি কঠিন কাজ। তবে ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে তা অসম্ভবও নয়। ডোবা, গর্ত, নর্দমা ইত্যাদি যেখানে মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার ঘটায় সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়। এটি আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ। অর্থাৎ সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ম্যালেরিয়া নির্মূল করা যাবে না। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ একা সফল হলেই চলবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারেও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফলতা আসতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতায় দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ এখনো নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের বিষয়টি এখন আঞ্চলিক পর্যায়ে চলে গেছে। আঞ্চলিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে নির্মূল কার্যক্রম প্রত্যাশা করা যাবে না। পার্শ্ববর্তী/ সীমান্তবর্তী দেশসমূহে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচল/ পারাপারকারীর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের প্রবণতা রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় দুর্বল যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেরিতে চিকিৎসা গ্রহণের ঘটনাও ঘটে থাকে। পার্বত্য এলাকায় উপসর্গবিহীন ম্যালেরিয়ার আবির্ভাবও দেখা যাচ্ছে এবং বিভিন্ন গোত্রভেদে ভাষাগত জটিলতা রয়েছে। মশার প্রজাতি (ম্যালেরিয়া, বাহক) ও আচরণ পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনও বিশেষ করে অত্যধিক গরম এবং থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ইত্যাদিও ম্যালেরিয়ার প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা। দুবছর ধরে রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু নেই ॥ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে থাকলেও তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সফলতা দেখছে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী। এ তিন জেলার মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক এগিয়ে রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। গত ১০ বছর আগেও এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৯৯ জন। অথচ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৪ জনে। পাশাপাশি কমেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এছাড়া ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগী কমেছে ৬৪ শতাংশ।
×