ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চঞ্চল রাত, যাত্রাপালার স্মৃতি- ফিরিয়ে আনার শহুরে প্রয়াস

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

চঞ্চল রাত, যাত্রাপালার স্মৃতি- ফিরিয়ে আনার শহুরে প্রয়াস

মোরসালিন মিজান ॥ যাত্রাপালা এখন স্মৃতি। স্মৃতি বটে। কিছুতেই ভুলে যাওয়ার নয়। একটু পেছন ফিরে তাকালেই চঞ্চল সেই রাতের ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আলো ঝলমলে মঞ্চটা যেন দেখা যায়। মাটিতে চৌকি পুঁতে তৈরি করা মঞ্চ। তার উপরে উজ্জ্বল পোশাকের রাজা। তরবারি হাতে প্রধান সেনাপতি। উজির-নাজির। কথায় কথায় যুদ্ধ। প্রেম। বিচ্ছেদ। ঘটনার ঘনঘটা। আহা, আজ এক রকম হারাতে বসেছে। তবে গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুসঙ্গটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা যে একেবারেই হচ্ছে না, তা নয়। যাত্রা শিল্পীরা সংগঠকরা শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। ৬৪ জেলায় যাত্রাশিল্পীদের সংগঠিত করে, নতুনদের শিখিয়ে নিয়ে পালা তৈরি করার উদ্যোগ মোটামুটি বাস্তবায়ন করেছে একাডেমি। ধারাবাহিক কর্মকা-ের অংশ হিসেবে এবার আয়োজন করা হলো তিন দিনের যাত্রা উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে বুধবার উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। সূচনা পর্বে বিভিন্ন পালার শিল্পীরা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরিবেশনা নিয়ে সামনে আসেন। যাত্রার বিশেষ বাদ্যযন্ত্রগুলো তখন বেজে ওঠলে চমৎকার একটি আবহ তৈরি হয়। দর্শক খুবই কৌতুহল নিয়ে দেখেন। এরই এক পর্যায়ে শুরু হয় আলোচনা। এ সময় মঞ্চে ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এসেছিলেন আমন্ত্রিত হয়ে। আয়োজকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক বদরুল আনম ভূঁইয়া। তবে পালা দেখতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন দর্শক। যে মঞ্চে নাটক দেখেন তারা, সে মঞ্চে পালা দেখার সুযোগ বিশেষ কাজে লাগান। চার দেয়ালের ভেতরে হলেও, যাত্রার ফিলটা ছিল বলতে হবে। উৎসবের প্রথম দিন পরিবেশিত হয় যাত্রাপলা ‘এক যে ছিল মহারাণী।’ প্রযোজনা করে দেশ অপেরা। রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মিলন কান্তি দে। জয়যাত্রা নামের আরেকটি দল পরিবেশন করে ‘দ্বীপের নাম আন্ধার মানিক।’ পালাটি রচনা করেন মামুনুর রশীদ। নির্দেশা দেন হাবিব সারোয়ার। আয়োজকরা জানান, বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার একইভাবে যাত্রাপালা পরিবেশিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে প্রদর্শনী। তবে যাত্রা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির এই নবযাত্রা কতটুকু সফল হলো বা হবে তা দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন যাত্রাশিল্পীরা। অভিন্ন মত মিলন কান্তি দে’র। প্রতিকূল সময়ে রাজধানী শহরে যাত্রাপালাকে টেনে নিয়ে আসা ও ধারাটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় বড় ভূমিকা তার। প্রবীণ শিল্পী ও গবেষক জনকণ্ঠকে বলেন, যাত্রাশিল্পের পুনরুজ্জীবনে শিল্পকলা একাডেমি যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার যোগ্য। যাত্রা নিয়ে আমাদের অনেকেরই ইমোশন আছে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে, যাত্রাপালা নাটক নয়। যাত্রার স্বকীয়তা ধরে রাখতে হবে। যাত্রাকে যাত্রা বলে মনে হতে হবে। যাত্রা শিল্পের উন্নয়নে গ্রহণ করা পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা ধরে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।
×