ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ার রোসানেফট এলএনজি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

রাশিয়ার রোসানেফট এলএনজি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে

রশিদ মামুন ॥ রাশিয়ার বিখ্যাত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি রোসানেফট বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যুত, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রোসানেফট বলছে, তারা বাংলাদেশের কাছে এলএনজি বিক্রি করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে তারা দ্রুত আলোচনাও শুরু করতে ইচ্ছুক। এর আগে বাংলাদেশ কাতার এবং ওমানের সঙ্গে জিটুজি (সরকারী পর্যায়ে) এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করেছে। এছাড়া ২৪ কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশে এলএনজি কেনা হচ্ছে। শুরুতে এলএনজির প্রাপ্তি নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল এখন তা অনেকটা দূর হয়ে গেছে। রোসানেফট তাদের প্রস্তাবে বলছে, সিঙ্গাপুরে তারা নতুন যে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে তার মাধ্যমে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করতে আগ্রহী তারা। জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এলএনজির নিয়মিত সরবরাহ পাওয়া কঠিন বিষয়। এজন্য অভিজ্ঞ বিভিন্ন কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কাতার এবং ওমানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। রোসানেফটও রাশিয়ার জাতীয় কোম্পানি। ফলে তাদের সঙ্গে চুক্তি হলেও জিটুজি ভিত্তিতে এলএনজি সরবরাহ পাওয়া যাবে। গত বছর থেকে বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে। এখন প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। গত শনিবার দেশে আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল এসে পৌঁছেছে। এটিও প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করতে পারবে। টার্মিনালটি পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ করা শুরু করলে দেশে আর গ্যাস সঙ্কট থাকবে না। সরকার চিন্তা করছে, আপাতত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ বৃদ্ধি করলে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকবে গ্যাসের পরিস্থিতি। এরপর দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প থাকবে না। সরকার মনে করছে, গভীর সমুদ্রে এখন সীমিত পরিসরে কাজ চলছে। এসব ব্লকে গ্যাস পাওয়া গেলেও সঙ্কট সামাল দেয়া যাবে। এলএনজি টার্মিনাল শুধু এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে প্রতি ইউনিটে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকে। এর বাইরে এলএনজি সংস্থানের দায়িত্ব তাদের নয়। এখন দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটির মালিক মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি; অন্যটির মালিকানা দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি এবং জাপানের মিতসুবিশির হাতে। দেশে এখন প্রতিদিনের গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলিয়ে সরবরাহ তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। কিন্তু চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনালটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করলে সঙ্কট অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। রোসানেফট বলছে, রাশিয়ার সর্বোচ্চ গ্যাস উৎপাদনকারীদের মধ্যে একটি তারা। তাদের উৎপাদন বছরে সাত দশমিক তিন ভাগ হারে বাড়ছে। তারা রেকর্ড ৬৭ দশমিক ১ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদন করছে। কোম্পানিটি গ্যাসের সঙ্গে তেল উৎপাদন এবং পরিশোধন করে থাকে। এছাড়া তারা উৎপাদিত গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি দরে এলএনজি আমদানি করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে বিশে^র বড় বড় কোম্পানি এলে দাম কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চেষ্টা করা হচ্ছে এলএনজি সরবরাহে বিভিন্ন বড় কোম্পানিকে যুক্ত করতে। এতে করে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে আর এর মাধ্যমে আরও কম দামে এলএনজি সরবরাহ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
×