ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচ ড্র করল আবাহনী

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচ ড্র করল আবাহনী

রুমেল খান ॥ জেতা ম্যাচ কিভাবে ড্র করতে হয় সেটার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। নির্দিষ্ট করে বললে তাদের রাইটব্যাক রায়হান হাসানের অমার্জনীয় ভুলের কারণে নিশ্চিতভাবে জয়ের মুখ দেখতে পারেনি ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ বাহিনী। নইলে বুধবার এএফসি কাপের ‘ই’ গ্রুপের খেলায় নিজেদের মাটিতে ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত এক জয় কুড়িয়ে নিতে পারত তারা। কিন্তু সেটা আর হয়নি। বরং ২-২ গোলে ড্র করে আক্ষেপের অনলে পুড়েছে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়নরা। যদিও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথমার্ধে ২-১ গোলে পাঞ্জাবই এগিয়েছিল। খেলা দেখতে আসা দর্শকরা মন্তব্য করেন, ‘জেতা ম্যাচ এভাবে ড্র করল আবাহনী!’ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এটা আবাহনীর প্রথম ড্র। আগের এক জয়ে (নেপালের মানাং মার্শিয়াংদিকে হারায় ১-০ গোলে) মোট ৪ পয়েন্ট তাদের। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে মিনার্ভার পয়েন্ট ২। আগের ম্যাচেও ড্র করেছিল তারা (স্বদেশী চেন্নাইনি এফসির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র)। আবাহনীর পরের ম্যাচ আগামী ৩০ এপ্রিল। প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি। খেলা হবে ভারতের আহমেদাবাদে। খেলায় দুটি পরিসংখ্যানে এগিয়ে ছিল আবাহনী। যেমন কর্নারে (৬-৩) এবং গোলমুখে শট (২৩-১৯)। শন অন টার্গেটে অবশ্য দু’দলই সমান (৬-৬)। বল নিয়ন্ত্রণে অবশ্য সামান্য এগিয়ে পাঞ্জাবই (৫৫%-৪৫%)। খেলার শুরুতে দু’দলের ফর্মেশনই ছিল একটু অদ্ভুত ... আবাহনী : ৪-২-৩-১, পাঞ্জাব : ৪-১-৪-১। দু’দলই তাদের রক্ষণদুর্গ সামাল দেয়ার কাজেই মনোযোগী ছিল বেশি। তারপর সুযোগ পেলেই ওপরে মাত্র একজন স্ট্রাইকার রেখে ঝটিকা আক্রমণ। আবাহনীর আক্রমণ শুরু হয় প্রথম মিনিটেই। বিপক্ষ দলের বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের কৌণিক শট নেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। কিন্তু বল অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। দ্বিতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পাঞ্জাবের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার মাহমুদ আল আমনার শট ফিস্ট করে এ যাত্রা দলকে রক্ষা করেন আবাহনীর অধিনায়ক-গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। ১৩ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে পাঞ্জাবের স্যামুয়েলের শট আবাহনীর পোস্ট ছুঁয়ে গেলেও বিপদ ঘটেনি। ১৬ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে স্যামুয়েলের বাড়িয়ে দেয়া বলে দৌড়ে এসে ডান পায়ের বাঁকানো শটে আবাহনীর জালে পাঠান পাঞ্জাবের অধিনায়ক আমনা (১-০)। এর দু’মিনিট পরই সুযোগ এসেছিল স্বাগতিকদের। ডানপ্রান্ত থেকে ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনের ফ্রি কিক ব্যাকহেড করেন আফগান ফরোয়ার্ড মাসিহ্ সাইঘইন। কিন্তু বল অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। ২০ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে বল নিয়ে ছোট করে বাড়িয়ে দেন হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ফিলস বেলফোর্ট, আলতো ছোঁয়ায় পাঞ্জাবের জাল কাঁপান জীবন (১-১)। জীবনের গোলে যেন ‘জীবন’ পায় আবাহনী। ৩৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সানডে বাঁ পায়ের যে শটটি নেন তা বারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪৩ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে রায়হান হাসান নিজেদের বক্সে সতীর্থ বেলফোর্টকে বল পাস দিতে যান। কিন্তু বলের গতি কম হওয়াতে সেটা পেয়ে যান প্রতিপক্ষের বদলি খেলোয়াড় শ্রেয়াস। বাঁপ্রান্ত থেকে তীব্র বুলেটগতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড (২-১)। আবারও পিছিয়ে পড়ে আকাশী-নীলরা। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলে আবাহনী। তিন মিনিটের মধ্যেই সফলও হয় তারা। ৪৮ মিনিটে ডানপ্রান্তে ওয়ালী ফয়সালের ফ্রি কিক বিপক্ষ দলের পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলে পোস্টের খুব কাছ থেকে বাঁ পায়ের শটে ফিনিশ করেন সানডে চিজোবা (২-২)। ৮০ মিনিটে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জীবনের উদ্দেশে পাঠান সানডে। কিন্তু জীবন ঠিকভাবে শটটি নিতে ব্যর্থ হওয়াতে সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয় আবাহনীর। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি তাদের পক্ষে। তাই হোম ম্যাচে ড্র করে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক দলটি। ম্যাচ শেষে হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি আবাহনীর পর্তুগীজ কোচ লেমোস, ‘ঘরের মাঠে ম্যাচটি আমাদের জেতা উচিত ছিল। সুযোগগুলো নষ্ট না হলে অন্যরকম হতে পারত। পরের রাউন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও আমরা আশাবাদী। আর সবচেয়ে ভাল দিক হলো পিছিয়ে পড়ার পরও আমরা দু’বারই সমতা এনেছি।’ পাঞ্জাবের কোচ শচীন তানাজি বলেন, ‘আমরা এসেছিলাম তিন পয়েন্ট পেতে। তবে ড্র হওয়াতেও অখুশি নই। আশাকরি নিজেদের মাঠে আমরা আবাহনীকে ঠিকই হারিয়ে তিন পয়েন্ট লাভ করতে পারব।’
×