ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখী বজ্রঝড়ের পর এবার ভ্যাপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

কালবৈশাখী বজ্রঝড়ের পর এবার ভ্যাপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়ের পর এবার ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গত কয়েকদিনে কোন বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বেলা ১২টার পর ঘর থেকেই বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে পহেলা বৈশাখ থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তারা জানায় দুএকদিনের মধ্যে সারাদেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এপ্রিলজুড়ে এই অবস্থা থাকতে পারে। ইতোমধ্যেই রাঙ্গামাটিসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে গত সোমবার থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এই দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রী পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সকাল থেকেই প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ। দুপুরে রোদের তীব্রতায় বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এই সময়ে যানবাহনে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে লোহার ও স্টিলের হাতলদ- গরম হয়ে পড়ার কারণে। গরমে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে দরদরিয়ে। ঘরের ভেতরের অবস্থাও এক ধরনের। চিকিৎসাবিদরা জানান, এই গরমে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগজীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাইরের প্রচ- রোদ এড়িয়ে চলার পারামর্শও দিয়েছেন। রোদে ছাতা ব্যবহারের পাশাপাশি কোনওয়ালা টুপি ব্যবহার করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বাসি পচা এবং তেলের খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার কথাও বলেন। আবহাওয়াবিদ মোঃ আবুল কালাম মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, গত সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। ফলে গরমের অনুভূতিও বেড়ে যাবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন এই সময়ের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাত হলেও গরমের অনুভূতিই বেশি থাকবে। বৃষ্টির পর বাতাসে জলীয় কণার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারণে মানবদেহে ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি বাড়ছে। তিনি বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে দেশের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বজ্রঝড় বয়ে গেছে। গত দুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গিয়ে তামাপত্রা বাড়তে শুরু করেছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাতাসে ভেসে বেড়ানো জলীয় কণা ও আদ্রতার পরিমাপ বাড়ছে। জলীয় কণা গরম হয়ে ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বাড়িয়ে তোলছে। তিনি জানান, জলীয় কণার কারণেই যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে গরমের অনুভূতি বাড়ছে দ্বিগুণের বেশি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এপ্রিলের শেষের দিকে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। তবে তা নি¤œচাপে পরিণত হবে কি না তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। গত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত একনাগাড়ে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত সোমবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত থাকায় এপ্রিলের প্রথমার্ধে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে তা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি এলাকায় বুধবার তাপমাত্রা বেড়ে ৩৭.৭ ডিগ্রীতে উঠেছে। এছাড়াও ফেনীতে ৩৬.১, মাইজদীকোটে ৩৫.৭, চাঁদপুরে ৩৫.২, চট্টগ্রামে ৩৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তারা জানায় রাঙ্গামাটি ও ফেনী এলাকায় মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রীতে পৌঁছতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপমাত্র ৩৬ এর ওপরে উঠে গেলে সেটাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে গেলে সেটাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পার হলেই সেটাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৫.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনার অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে। ওইদিন রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাপমাত্রা বাড়ার পরিমাণ কিছুটা কম। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগের দিনের চেয়ে ঢাকায় তাপমাত্রা বেশি না বাড়লেও গরমে অনুভূতি বেড়েছে অনেক। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শুক্রবারের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যেতে পারে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, ২০ এপ্রিলের মধ্যে সারাদেশে বয়ে যেতে পারে তাপপ্রবাহ। চলতি মাসের শেষ দিকে ফের কালবৈশাখীর দাপট থাকবে। সাগরে নিম্নচাপেরও শঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, চৈত্রের শেষে কালবৈশাখীর দাপটের সঙ্গে বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি ছিল। এখন তাপমাত্রা বাড়ছে। আরও কয়েকদিন তা অব্যাহত থাকবে। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি বাড়ছে জনজীবনে। এদিকে এপ্রিলে দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে সাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ। তারা জানায়, প্রতি বছর এপ্রিল শুরু হলে কালবৈশাখী আর বজ্রঝড়ের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক। গত তিন বছরের আবহাওয়ার রেকর্ড বলছে এই সময়ে ঝড়ো হাওয়া আর বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। গতবছর এপ্রিল মাসজুড়ে ছিল কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাতের দাপট। মাসের শেষে দুদিনেই বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মারা যান অন্তত ৩৩ জন। ২০১৭ সাল জুড়েই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক মাত্রায় বজ্রপাত, অতি ভারি বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধসের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় দেশ। এদিকে বৈশাখ শুরু হতে গরমের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা কিছু পদ্ধতি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে রোদে দুপুর ১২টার পর থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাইরে বের না হওয়া ভাল। বের হলে মাথায় ছাতা বা বিশেষ ধরনের টুপি ব্যবহার করা। কৃষক মাঠে কাজ করার সময় মাথাল ব্যবহার করতে পারেন। গরমের সময় ঘামে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। পানি শূন্যতা রোদে এই সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে। গরমে জিন্স ব্যবহার না করে নরম বা সুতির পোশাক ব্যবহার করতে হবে। এই ধরনের কাপড় পরিধান করলে অতিরিক্ত ঘাম হয় না। শরীর ঠা-া রাখতে সাহায্য করে। গরমে সময় কালো বা গাঢ় রঙের কাপড় ব্যবহার না করে হাল্কা রংয়ের কাপড় পরতে হবে। কারণ হাল্কা কাপড়ে তাপ শোষণ করে কম। খাবারের মেন্যু থেকে তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে। শাকসবজি ফলমূল বেশি পরিমাণ খেতে হবে। পুরনো বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। ঘরের ভেতরে গরম কমাতে ফ্যানের নিচে বালতি ভরে পানি রাখলে ঘরকে ঠাণ্ডা করে তুলবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে।
×