ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন-রিং লং পো-ওয়ে

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন-রিং লং পো-ওয়ে

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ তিন দিনের অবিরাম উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছিল পাহাড়ী জনপদ। দেশের পার্বত্য এলাকার সর্বত্র চলেছে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার ব্যাপক আনন্দ আয়োজন। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা ছিল বৈসাবি উৎসবে মাতোয়ারা। তিন দিনের এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন রবিবার শেষ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাখাইনদের ‘মৈত্রীময় জলকেলি’ উৎসব। তবে রাখাইনদের এই উৎসবের প্রধান আয়োজন চলছে পাহাড়ের বাইরে কক্সবাজার জেলায়। মৈত্রীময় জলকেলিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় রিং লং পো-ওয়ে বা সাংগ্রাই উৎসব। রবিবার শুরু হওয়া এই উৎসবের প্রাথমিক পর্ব আজ হলেও এর মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে আগামীকাল ১৭ এপ্রিল। এটি শেষ হবে ১৯ এপ্রিল। এরই আনন্দে এখন মেতে উঠেছে রাখাইন সম্প্রদায়। এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে জানান, রাখাইনদের ‘মৈত্রীময় জলকেলি’ উৎসব শেষ হবে আজ। রবি, সোম ও মঙ্গলবার তিনদিন রাখাইনদের ধর্ম-কর্ম শেষে (১৭-১৯ এপ্রিল) রাখাইন পল্লীগুলোর প্যান্ডেলে জলকেলিতে মেতে উঠবে কিশোর-কিশোরীরা। জলকেলি উৎসবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ২০টি প্যান্ডেল। রবিবার রাখাইন এলাকাভিত্তিক শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। শহর ও কক্সবাজার জেলাজুড়ে রাখাইন নববর্ষ পালনের বর্ণিল আয়োজন চলছে। আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ১৩৮০ রাখাইন বর্ষ বিদায় জানিয়ে সানন্দে বরণ করা হবে ১৩৮১ বর্ষকে। বর্ষবরণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর সাংগ্রাই পোয়ে (মৈত্রীময় জলকেলি) উৎসব ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালন করে থাকে। চলতি সনেও জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হবে রাখাইন সম্প্রদায়ের মূল সাংগ্রাই পোয়ে বা মৈত্রীময় জলকেলি উৎসব। পর্যটন শহরে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বার্মিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাখাইন শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রাটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় অগ্গমেধাস্থ মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন নগদ টাকা, চাল, চিনি, দুধ, কলা, নারিকেল, মোমবাতি, সাবান দেশলাইসহ হরেক রকম পণ্য। গ্রহণ করেন পঞ্চশীল। এসময় ধর্মীয় গুরু শিক্ষণীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। ১৪ এপ্রিল রবিবার রাখাইন এলাকাভিত্তিক শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। শোভাযাত্রা শেষে বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সবাই পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন। প্রতি বছরের মতো চলতি সনেও রাখাইন পল্লীগুলোতে কিশোর-কিশোরীরা জলকেলিতে মেতে উঠবে। ১৭-১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হবে মূল সাংগ্রাই পো-ওয়ে বা মৈত্রীময় জলকেলি উৎসব। নববর্ষে রাখাইন প্রবীণ ব্যক্তিরা উপবাসও করে থাকেন। রাখাইন ধর্ম মতে এ সময় প্রাণী হত্যা, মিথ্যা বলাসহ কমপক্ষে ৮টি দুষ্কর্ম থেকে দূরে থাকতে হয়। শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, সদর, হ্নীলা, চৌধুরীপাড়া, রামু, পানিরছড়া, হারবাং, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সপ্তাহজুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙরপাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, ক্যাংপাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরোপাড়ায় তৈরি করা হয়েছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। রাখাইন পল্লীতে এখন বর্ষবরণের আমেজ। প্রতিটি পল্লী ও বাড়ি সাজছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড় পরিধান করত। ইতোমধ্যে অনেকেই শেষ করেছেন কেনাকাটার পালা। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। রাখাইন শিক্ষার্থীরা জানান, আদিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিকভাবে সাংগ্রাই পো-ওয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেব আমরা। আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র। র‌্যালিটিতে মারমারা বর্ণিল সাজে অংশ নেন। তারা নেচে গেয়ে শহরকে উৎসবমুখর করে তুলেন। পরে সাংগ্রাই এর প্রধানতম আকর্ষণ মৈত্রীময় জলবর্ষণ শুরু হয়। একে অপরকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নতুন বছরকে বরণ করেন। জলকেলি নামে পরিচিত এই উৎসবে সব বয়সীরাই যোগ দেন। তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণই বেশি দেখা যায়। নেচে গেয়ে তারা উল্লাস করছেন। এছাড়াও সাংগ্রাই উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় চলছে খেলাধুলার আয়োজন।
×