ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রবিবার সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো- উৎসবমুখর পরিবেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রবিবার চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে বর্ষবরণ। বঙ্গাব্দের প্রথমদিন পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে দিকে দিকে ছিল বর্ণিল আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্বেলিত হয় নগরী। বাঙালীর প্রাণের উৎসবে পরিলক্ষিত হয় সাধারণ মানুষের বাঁধভাঙ্গা স্রোত। বিভিন্নস্থানে আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসবে সঙ্গীত, নৃত্য, বাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জনতার ঢল নামে। স্লোগান ওঠে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, সর্বস্তরের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার। চট্টগ্রামে বরাবরের মতো এবারও আকর্ষণ ছিল ডিসি হিল ও সিআরবি শিরীষতলা। এ দুটি আয়োজনে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাপক উপস্থিতি ছিল সাধারণের। মঞ্চে দিনভর ছিল সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, ঢোল বাদনসহ নানা আয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মঞ্চে তাদের পরিবেশনা তুলে ধরে। আগাগোড়াই ছিল বাঙালী সংস্কৃতির উপস্থাপন। বর্ষবরণে বর্ণিল হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার শিল্পকলা একাডেমি, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে উৎসব আমেজে নববর্ষ উদযাপিত হয়। নগরীর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বটতলা, হাটখোলাসহ বিভিন্ন স্পটে ছোটবড় অনেক বৈশাখী মেলার আয়োজন ছিল। এ সকল আয়োজনেও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল বয়সী মানুষ যোগ দেন। ডিসি হিলে আগের দিন বিকেলে বিদায় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে হয় বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান। পরদিন রবিবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় ভোর ৬টায়। বৈশাখের আবাহন, উচ্চাঙ্গ, একক ও দলীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য এবং সম্মাননা প্রদানসহ নানা আয়োজনে ডিসি হিল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সিআরবি শিরীষতলার অনুষ্ঠানে পুরোদিনই ছিল সংস্কৃতিপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে এখানকার আয়োজনও শুরু হয় বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সিআরবির বাড়তি আকর্ষণ সাহাবউদ্দিনের বলীখেলা। বিকেলে বলীখেলার যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হন চকরিয়ার বাদশা ও কুমিল্লার শাহজাহান বলী। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা নেভাল-২তে সকালে শুরু হয় বৈশাখের অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল শোভাযাত্রা, নৃত্য, জাদু প্রদর্শন, বাংলা গান ইত্যাদি। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), সাদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর, বোধন, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচী ছিল। পুলিশ প্রশাসনের আয়োজন ছিল ব্যতিক্রমী। ডিসি হিল ও সিআরবির বর্ষবরণ উৎসবস্থলে আগতদের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয় মিনারেল ওয়াটারের বোতল এবং হাতপাখা। সিএমপি কোতোয়ালি থানায় আয়োজন বেশ প্রশংসিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচীর মধ্যে ছিল দিনব্যাপী বৈশাখী ও লোকজ মেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চবি মহিলা সংসদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রম্য বিতর্ক, পুতুলনাচ, হা-ডু-ডু, বউচি খেলা, লাঠিখেলা, নাটক, চিশতী বাউলের পরিবেশনায় বাউল সংগীত এবং আমন্ত্রিত ব্যান্ড দল ‘মাকসুদ ও ঢাকা’র পরিবেশনা। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট ‘স্মরণ’ চত্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে শহীদ আবদুর রব হল মাঠে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মূল আয়োজন। খুলনা মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী গান, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা উৎসব, মেলা, লাঠিখেলাসহ নানা কর্মসূচী আযোজনের মধ্য দিয়ে রবিবার খুলনায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে নানা বয়সের মানুষের ঢল নামে। সকালে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর চত্বরের বকুলতলায় বৈশাখী গানের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। পরে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। শোভাযাত্রায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহসহ সরকারী-বেসরকারী দফতরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সকাল সাড়ে সাতটায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা উৎসব। রাজশাহী বর্ণিল আয়োজনে রাজশাহীর সর্বত্র উদ্যাপন করা হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। রবিবার সকাল থেকেই দিনভর বৈশাখের বর্ণিল সাজে মেতে ওঠে রাজশাহী। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সকাল থেকে নানা আয়োজনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বর্ষবরণের আয়োজনে পালকিতে বাঙালী বর-বধূর দেখা মিলেছে। রাজশাহীর সর্বত্র বর্ণিল আয়োজনে দিনটি হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। রাজশাহী জেলা প্রশাসন, রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় সকালে। বিভিন্ন স্থানে বসে নানা ধরনের দেশীয় পণ্যের মেলা। বরিশাল ঢাকের বাদ্য, মুক্তিযোদ্ধা আর গুণীজনদের সম্মাননা ও পৃথক চারটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে বরিশাল নগরীতে বর্ষবরণ উদ্যাপিত হয়েছে। রবিবার সূর্য উদয়ের পর থেকে জেলা প্রশাসন, চারুকলা বরিশাল, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে বর্ষবরণের উৎসব উদ্যাপন করেছে। জেলা প্রশাসনের অয়োজনে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর চারুকলা বরিশাল, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের আয়োজনে আবহমান বাংলার নানা প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। সাতক্ষীরা রবিবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভা যাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে মিলিত হয়। এ সময় বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়। বৈশাখী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সিভিল সার্জন ডাঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। যশোর বর্ণিল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে প্রথম প্রহরের বর্ষবরণ উৎসবে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিলন মেলায় পরিণত হয় গোটা শহর। জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা আর পৌরপার্কে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসবে প্রথম প্রহরে মাতোয়ারা যশোরবাসী। সকালে কালেক্টরেট চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আওয়াল, পুলিশ সুপার মইনুল হকের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা যশোরের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পঞ্চগড় সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতন মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এতে সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন আহম্মেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত স¤্রাট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেয়। মাগুরা সকাল আটটায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয় । র‌্যালিটি নোমানী ময়দান প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নোমানী ময়দানে গিয়ে শেষ হয় । র‌্যালিতে এমপি ড. বিরেন শিকদার, জেলা প্রশাসক আলী আকবর, পুলিশ সুপার খান মোঃ রেজেয়ানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন। গরুর গাড়িসহ র‌্যালিতে বাদ্যযন্ত্র সহকারে সাধারণ মানুষ অংশ নেন । বগুড়া সম্প্রীতির নিবিড় বন্ধনে বগুড়ায় নববর্ষের অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে হৃদয়ের উৎসবে পরিণত হয়। বগুড়া নগরীর কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে প্রতিটি সড়কেই বৈশাখের আল্পনা আলাদা আঙ্গিক এনে দেয়। বিশেষ করে এবারের উৎসবে প্রজন্মের শিশুদের অংশগ্রহণ উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সোয়া আটটায় ‘আবাহন এসো হে বৈশাখ’ শিরোনামে মঙ্গল শোভাযাত্রা নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালী ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। বগুড়ায় দুই স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। নীলফামারী অনন্ত আকাশে মস্তক (মাথা) তোলার প্রত্যয় নিয়ে হারিয়ে যাওয়া সব অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৬ সনের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীলফামারী যেন সজ্জিত হয় নতুন রূপে রঙিন হয়ে উঠে। রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ মেতে উঠে বাঙালীপনায়। ঢাক, ঢোল, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, মাটির থালা বাসন শোভা পেয়েছে দিনটির নানা অনুষ্ঠানে। রং উল্লাস আর নেচে গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলাবাসী বরণ করছে নতুন বাংলা বছরকে। জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, জেলা আওয়ামী লীগ পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাত খাওয়ার আসর বসিয়ে বাঙালী ঐতিহ্য তুলে ধরেছে। শেরপুর ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা, রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি, এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ এ সুরকে ধারণ করে বাংলা নববর্ষ বরণে শেরপুরে পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা কালেক্টরেট অঙ্গন থেকে ওই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (উপ-সচিব) সহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পালকি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি এবং বাংলার বাঘসহ বিভিন্ন মুখোশ পড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু-কিশোর বাদ্য-বাজনাসহ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুতুল নাচ, লাঠিখেলাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লোকনাথ দীঘির টেঙ্কের পাড় থেকে বর্ণ্যাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনসহ জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালিত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রম আয়োজনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বর্ষবরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের নিকট অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনার বিকশিত রূপ প্রস্ফুটিত করতে জেলা প্রশাসন মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ ও বাংলার নানা রকম মুড়ি মুড়কি আর মিষ্টি বিতরণের পাশাপাশি অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে শাড়ি লুঙ্গি বিতরণ করে। কুড়িগ্রাম বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে কুড়িগ্রামে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়েছে। নববর্ষ উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার ফেস্টুন মুখোশ ও বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। নববর্ষ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন চত্বরে বৈশাখী মেলা, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ পান্তা ভাত ও দই-চিড়ার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও প্রচ্ছদ কুড়িগ্রাম পৃথক একটি মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ সন্ধ্যায় পৌর মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঝিনাইদহ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবিবার সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠ থেকে এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি খালেদা খানম, জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান, পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের লোকজন অংশ নেয়। পেঁচা, বাঘের মুখোশ, গরুর গাড়ি, পালকিসহ গ্রাম বাংলার ঐহিত্য নিয়ে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। এছাড়াও দিনভর পান্তা পরিবেশন, লাঠিখেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয়। নারায়ণগঞ্জ বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নগরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর চাষাঢ়া চত্বর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দীন হায়দার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম রেজা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার সারাওয়াত মেহজাবীন, সহকারী কমিশনার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, সহকারী কমিশনার মোঃ উজ্জল হোসেন প্রমুখ। নওগাঁ এদিন সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জিলা স্কুল মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে ফেস্টুন উড়িয়ে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন নওগাঁ সদর আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। পরে সেখান থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্য গরুর গাড়ি, ঘোড়াগাড়ি ও পালকি নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেডি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম, নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আব্দুল বারী, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রওশন আরা খানম, সিভিল সার্জন ডাঃ মোমিনুল হকসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য পরিবেশিত হয়। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবিবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা উদ্যাপিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের পুরাতন কালেক্টরেট চত্বরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হয় রাখিবন্ধন ও দেশজ খাবার পরিবেশন। সকাল নয়টায় বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। একই সময়ে মিতালী সংঘও বর্ণিল আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এছাড়া সকাল ১০টায় উদীচী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশজ খাবার পরিবেশন ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বিকেলে মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার উদ্যোগে মগড়া নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিলেট বাঙালীর সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ পালনে সর্বত্র ছিল সাজ সাজ রব। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারী বেসরকারী অফিস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সকাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নৃত্য, আবৃত্তি, দিনব্যাপী থাকবে বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, সরকারী শিশু পরিবার (বালক) ও সরকারী শিশু পরিবার (বালিকা), শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সিলেট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়, গ্রীন ডিসএ্যাবল্ড ফাউন্ডেশন (জিডিএফ), শ্রুতি সিলেট, ব্লু-বার্ড স্কুল এ্যান্ড কলেজ, গীতবিতান বাংলাদেশ, ছন্দনৃত্যালয়, দ্বৈতস্বর, নৃত্যশৈলী, গ্রীনডিজেবল ফাউন্ডেশন, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, আবৃত্তি বিভাগ শ্রুতি সিলেট, নগরনাট, দীপ্তর্শি, অন্বেষা শিল্পী গোষ্ঠী, মুক্তাক্ষর, নাট্যম সঙ্গীত বিদ্যালয়, সুরের ভুবন, অনির্বাণ শিল্পী গোষ্ঠী, কৃষ্ণচূড়া-সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দীপ শিখা প্রি ক্যাডেট এ্যান্ড হাইস্কুল পৃথকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুন্সীগঞ্জ নানা আয়োজনে মুন্সীগঞ্জে নববর্ষ ১৪২৬ বরণ করা হচ্ছে। রবিবার সকাল সাড়ে সাতটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শহরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট মাঠে শেষ হয়। এরপরই সাড়ে ৮টায় বৈশাখী গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে কালেক্টরেট মঞ্চ। এদিকে বিকেল ৩টায় টেনিস কমপ্লেক্স মাঠে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাঠে কাবাডি প্রতিযোগিতা এবং বিকেলে কালেক্টরেট মাঠের মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে মুন্সীগঞ্জ সাহিত্য-সংস্কৃতি গোষ্ঠী ও অন্বেষণ বিক্রমপুর। আর সন্ধ্যায় ছিল লোকজ নৃত্য, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নাটক। মৌলভীবাজার সকাল আটটায় মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার র‌্যালিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ নানা বয়সী মানুষ রং- বেরঙের পোশাক পরে যোগদেন। পরে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
×