ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বেগের বিষয়

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১২ এপ্রিল ২০১৯

উদ্বেগের বিষয়

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজ দেশ এবং একই সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যা সঙ্কট নিয়ে যে কতটা উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তা উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর একটি নিবন্ধে। ২৬ মার্চ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। এ বিষয়ে কারও মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ সংশয় থাকলে তাঁকে তিনি বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে এও বলেছেন, সেই অতিথিকে নিয়ে তিনি হেঁটে হেঁটে বাংলাদেশ ঘুরে কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন নীরবে লাখো মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং জীবনধারণকে কিরূপ দুঃসহ ও দুর্বিষহ করে তুলছে, তা দেখাবেন। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর এই সুচিন্তিত ও সুলিখিত নিবন্ধের পাশাপাশি দৈনিক জনকণ্ঠের ১০ এপ্রিল সংখ্যায় ছাপা হয়েছে প্রধান প্রতিবেদন ‘চৈত্র মাসে বর্ষাকাল’। এটিও প্রকৃতপক্ষে জলবায়ু তথা প্রকৃতির বৈরী আচরণেরই বহির্প্রকাশ বৈকি। আবহমান কালের নিয়মে চৈত্রমাসে বাংলার প্রকৃতিতে প্রবাহিত হয় প্রবল গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ, লু হাওয়া। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির, খরা ও অনাবৃষ্টি। সেই চৈত্র মাসে এবার দেখা দিচ্ছে একের পর এক কালবৈশাখী, ঝড়-ঝঞ্ঝা। প্রবল বৃষ্টিপাত, প্রায় বর্ষার মতো, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত। ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়া বদলাচ্ছে তার চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি, যাতে অভ্যস্ত নন বাংলার মানুষ ও কৃষক। ফলে কৃষি কাজ ও জনজীবনে এর অনিবার্য প্রভাব পড়ছে। সে অবস্থায় বিরূপ প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে-বর্তে থাকার জন্য নিজেদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করে নেয়ার সময় এখনই। প্রধানমন্ত্রীর লিখিত নিবন্ধে সে কথারই প্রতিফলন ঘটেছে। আগামীতে দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ তীব্র খরার পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এ্যাটমোসফরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থা দুটির মতে, উষ্ণম-লীয় সমুদ্র¯্র্েরাত এল নিনোর প্রভাবে এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তাপমাত্রা বাড়বে, যা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা হবে খরাকবলিত। ফলে পানির অভাবে কৃষি জমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। ফলে ধান উৎপাদন হবে ব্যাহত। দেখা দেবে সুপেয় পানির অভাব। বাংলাদেশ অবশ্য এ বিষয়ে সজাগ ও সচেতন। প্রধানমন্ত্রী গত বছর ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা নির্ধারণের লক্ষ্য এগিয়ে নিতে সরকারী-বেসরকারী অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই সম্মেলন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় বৈশ্বিক তহবিলের বর্তমান অবস্থা এবং তা বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে শেষ হয় এই সম্মেলন। তবে দুঃখজনক হলো, এক্ষেত্রে খুবই কম সাড়া পাওয়া গেছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশও কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে অবলম্বন করছে ধীরগতি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জোরপূর্বক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এতে যোগ করেছে বাড়তি ঝুঁকি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অনেক পাহাড়-টিলা-বনাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্রায় সাফ ও সমতলে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামে গত কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের ৪৫০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। উল্লেখ্য, নগর ও স্থানীয় সরকারের একটি বৈশ্বিক জোটের সঙ্গে মিলে সর্ববৃহৎ এই ঋণদাতা সংস্থাটি সাগর পৃষ্ঠের বাড়ন্ত উচ্চতা থেকে সুরক্ষায় ১৫০টি উন্নয়নশীল শহরের যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা দেবে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামও। এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর। সে অবস্থায় জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যয়ে লুটপাট তথা নয়-ছয় কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।
×