ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূলে নির্মিত হবে ৩৪০ ছোট্ট ব্রিজ ॥ ১৯৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 তৃণমূলে নির্মিত হবে ৩৪০ ছোট্ট ব্রিজ ॥ ১৯৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প

ওয়াজেদ হীরা ॥ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ নজর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট ছোট সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারী অর্থায়নে নির্মিত এসব সেতুর আকার এক শ’ মিটারের বেশি হবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই উদ্যোগ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৮৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে ৩৪০ সেতু নির্মাণ করা হবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট সেতু ভেঙ্গে পড়েছে। অনেক স্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। এর প্রেক্ষিতে সারাদেশ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাহিদাপত্র পাঠায়। ফলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এবং গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নত করতে এক শ’ মিটারের নিচে সেতুগুলো নির্মাণ করতে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ এক শ’ মিটার সেতু নির্মাণ শিরোনামে প্রকল্প নেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সারাদেশের ৮ বিভাগের ৬১ জেলার ২৫৭ উপজেলায় এসব সেতু নির্মাণ করা হবে। চলতি বছর মার্চ থেকে ’২৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অনেক এলাকায় শুধু ব্রিজের কারণে গ্রামের সঙ্গে উপজেলার সংযোগ নেই। আবার অনেক পুরান স্থানে ব্রিজ সংস্কার করা হচ্ছে না। ছোট ছোট সেতু ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক নাজুক। এতে তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য অন্যত্র বিক্রি করা সম্ভব হয়না। সেই সঙ্গে যোগাযোগ সেবা ভাল না হওয়ায় অনেক সেবা থেকেই বঞ্চিত থাকছে এলাকার মানুষ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনটা অনেক ভাল হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করা, কৃষি-অকৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশব্যাপী পণ্য বাজারজাতকরণ সহজতর হবে ও পরিবহন ব্যয় কমবে। দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য কমবে। এই প্রেক্ষিতে আট বিভাগের ৬১ জেলার ২৫৭ উপজেলায় ৩৪০ সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে, সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা সড়কে সেতু নির্মাণ হবে ৫১, যার পরিমাণ হবে ৩ হাজার ৮১৬ মিটার। ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ নির্মাণ হবে ৬৯, পরিমাণ হবে ৪ হাজার ৪৬৭। গ্রাম সড়কে ব্রিজ নির্মাণ হবে ২২০, পরিমাণ হবে ১১ হাজার ৮০৩ মিটার। সেতুর এ্যাপ্রোচ ও এ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন করা হবে এক শ’ কিলোমিটার। প্রকল্পের উদ্দেশে বলা হয়েছে, উপজেলা ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গ্রোথ সেন্টার, হাট বাজার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি-অকৃষি উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ নবেম্বর পিইসির সভায় প্রকল্পটির জন্য মোট ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। বিভিন্ন কাইটেরিয়া পূরণ না হওয়ায় বান্দরবান, লক্ষ্মীপুর ও মাগুরা জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি। সুপারিশে আরও বলা হয়, প্রকল্পটি ’১৮ সালের জুলাই থেকে ২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ’১৯ সালের মার্চ থেকে ’২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে প্রকল্পটি প্রহণ করা হয়েছে এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির নতুন অনুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়নি। প্রকল্পটি যেসব উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে ঢাকার ধামরাই, নবাবগঞ্জ, সাভার ও দোহার উপজেলা। গাজীপুরের সদর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর। মানিকগঞ্জের সদর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয় ও সিঙ্গাইর। মুন্সীগঞ্জের সদর, লৌহজং, গজারিয়া ও সিরাজদিখান। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ। নরসিংদীর সদর, পলাশ, রায়পুরা, শিবপুর ও মনোহরদী। টাঙ্গাইলের সদর, মধুপুর, ধনবাড়ী, মির্জাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, সখীপুর, বাসাইল ও গোপালপুর। কিশোরগঞ্জের সদর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, ইটনা, মিঠামইন, বাজিতপুর ও ভৈরব। ফরিদপুরের মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও সালথা। গোপালগঞ্জের সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর। মাদারীপুরের সদর, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর। রাজবাড়ীর সদর, বালিয়াকান্দি, কালুখালী, পাংশা ও গোয়ালন্দ। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট, জাজিরা ও নড়িয়া। এছাড়াও সিলেটের বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা, হবিগঞ্জের সদর, চুনারুঘাট, বাহুবলসহ, মৌলভীবাজারের সদর, জুড়ী, রাজনগরসহ অন্য উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
×