ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত ৩ আহত ২

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে টেকনাফে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৭ এপ্রিল ২০১৯

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে টেকনাফে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও পুলিশের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নিহত ও দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। নিহতরা হলো- নুরুল আলম (২৩), জুবাইর (২০) ও হামিদ উল্লাহ (২০) এবং আহতরা হলো- এসআই স্বপন ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান। পরে ঘটনাস্থল থেকে চারটি দেশী অস্ত্র ও সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকে শনিবার অভিযান চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে স্থানীয় হাবিবের পাহাড়ে গেলে অন্য রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও পুলিশের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, ইয়াবা পাচার, সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে জড়িয়ে এ পর্যন্ত ৩০ ক্যাম্পে ২০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। টেকনাফ ও লেদা পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অবস্থান রয়েছে। এরা আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে পুনরায় পাহাড়ে চলে যায়। এসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিম ও তার সহযোগীদের অপতৎপরতার বিস্তৃতি ঘটছে। এই আবদুল হাকিম মিয়ানমারের একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে খ্যাত। জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সহিংস তৎপরতা বাড়ছে। এর ফলে ক্রমাগতভাবে জিম্মি হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। এর পাশাপাশি আশ্রয় শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রধানত দুটি গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুটি বিদ্রোহী গ্রুপের নামে এরা সহিংসতায় জড়িয়ে আছে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ৩০ আশ্রয় শিবিরে। সরকার মানবিক কারণে এদের আশ্রয় দিলেও এদের মধ্যে সন্ত্রাসী গ্রুপের কিছু সদস্য রয়েছে। যাদের হাতে রয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ইয়াবা পাচারসহ নানা অপকর্মে জড়িত। সীমান্ত সংলগ্ন এ দুটি এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন রয়েছে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), র‌্যাব, পুলিশ। এছাড়া যে কোন বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি রোধে সেনা সদস্যদের রাখা হয়েছে সতর্কাবস্থানে। বিভিন্ন সূত্রে বেরিয়ে এসেছে এ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সদস্যরা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তরে বিরোধিতায় রয়েছে। পাহাড় সংলগ্ন বিভিন্ন ক্যাম্পে এরা বিশেষ করে রাতে নানা অপকর্ম চালায়। ইতোপূর্বে এ ধরনের তৎপরতা চালিয়ে বর্তমানে দিনে এরা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এর ফলে ক্যাম্প অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এতে করে কিছু রোহিঙ্গা শিবির ছেড়ে পালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কিছু এনজিও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন সদস্যরা আশ্রয় শিবির পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখার প্রয়াসে লিপ্ত। এদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হতে না দেয়া এবং ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। সর্বশেষ শনিবার ভোরে পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে। এ ঘটনায় তিন সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, ইয়াবা ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা আশ্রিত। আশ্রয় শিবির ত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। এর ফলে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নিয়মিত ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় যেমন জড়িত। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমেও লিপ্ত। এছাড়া সাগর পথে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন দেশে পাচারের তৎপরতায়ও লিপ্ত। এসব রোহিঙ্গাদের যারা নিবন্ধিত তারা তাদের নিবন্ধন কার্ড দেখাতে পারলে ফের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় টেকনাফে পুলিশী অভিযানে এ পর্যন্ত বহু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে টেকনাফের বাহারছড়া পয়েন্ট থেকে ৩৯ নারী, ৫০ পুরুষ ও ২৬ শিশুকে উদ্ধার করেছে। এদের সাগর পথে মালয়েশিয়া প্রেরণের চেষ্টা চলছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ উদ্ধারকৃতদের দমদমিয়া, জাদিমোরা, শাল বাগান, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, আলীখালি, ঊনছিপ্রাং, শামলাপুর, পালংখালী ও থাইংখালী ক্যাম্পে প্রেরণ করেছে।
×