ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমের ফাঁদে ফেলে হোমিও ডাক্তারকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০১৯

প্রেমের ফাঁদে ফেলে হোমিও ডাক্তারকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোগী সেজে চিকিৎসকের চেম্বারে যাতায়াত করতেন কথিত সুন্দরী। এরপর প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক হোমিও চিকিৎসককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। এমনই এক অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরা হচ্ছে ফয়েজ উদ্দিন (৩২), আলমগীর (১৮), বিল্লাল (৩৮), আব্দুল হালিম (৫২), ফয়সাল (১৮) ও আব্দুস সালাম (৫৫)। র‌্যাব অপহৃত চিকিৎসক মোনায়েমুল বাশারকে (৪০) উদ্ধার করে। তবে এখন পর্যন্ত কথিত সেই ‘সুন্দরী’ নারীকে আটক করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় কাওরানবাজারে নিজস্ব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির এসব কথা জানান। তিনি জানান, রোগী সেজে ওই চিকিৎসকের চেম্বারে যাতায়াত করতেন কথিত ‘সুন্দরী’ ওই নারী। চিকিৎসকের সঙ্গে তার ফোনালাপও হতো। নিয়মিত কথোপকথনে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। পরে কথিত সুন্দরী ডাক্তারকে এক আদিবাসী মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর চিকিৎসক ওই সুন্দরী নারীর ফাঁদে পা বাড়ায়। বুধবার বেলা এগারোটার দিকে ওই সুন্দরীর সঙ্গে যাওয়ার জন্য পা বাড়ান ওই ডাক্তার। কিন্তু পথিমধ্যে মিরপুর থেকে ডাঃ মোনায়েমুল বাশারকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাকে মধুপুরে ভাওয়াল বনের নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। চোখ-মুখ বেঁধে বনের ভেতর আটকে হত্যার ভয় দেখিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মোবাইল ফোনে ডাঃ বাশারের পরিবারকে তার চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। র‌্যাব অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা বলে, চিকিৎসকের স্ত্রী ও শ্যালকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে অপহরণকারী চক্র বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকা নেয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে ওই চিকিৎসককে একটি কক্ষে আটকে রাখে। মুক্তিপণের দাবিতে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। র‌্যাব অধিনায়ক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে টাঙ্গাইল থেকে ডাঃ বাশারকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণ চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই অপহরণ চক্র বিভিন্ন পন্থায় মাঝারি ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকুরেদের টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরে নারীর মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরণ করে। অপহরণের পর সুন্দরীদের প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন জঙ্গলে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। অপহরণ চক্রটি পাঁচ লাখ, দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করলেও ৩০ কিংবা ৫০ হাজার টাকা পেলেই অপহৃতকে ছেড়ে দেয়। তারা সব সময় মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে অপহরণ করে। চক্রটি আদিবাসী সুন্দরী নারী প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কৌশলে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডলার বিক্রির কথা বলেও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। চক্রটি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টেশন থেকে যাত্রীদের জোর করে মাইক্রো বা প্রাইভেটে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবেশে চলন্ত গাড়িতে হাত-পা বেঁধে অজ্ঞান করে ভাওয়াল বনে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত। তবে চক্রটি এ পর্যন্ত কাউকে হত্যা করেনি। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ওই সুন্দরী আদিবাসী নারী, বিকাশের এজেন্টসহ ৩-৪ সদস্যকে আটকের চেষ্টা চলছে। র‌্যাব অধিনায়ক জানান, আমি সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করব, অহেতুক কারও সঙ্গে ফোন সখ্য না গড়তে, সুন্দরী নারীর সঙ্গে প্রেম কিংবা ডলার ভাঙ্গানোর ফাঁদে পা না দিতে। তিনি জানান, সম্প্রতি আদিবাসী সুন্দরী নারীরা রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলছে।
×