ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবলে বিজয়ী-বিজিতদের অনুভূতি

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ৫ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবলে বিজয়ী-বিজিতদের অনুভূতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবারের বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের উভয় বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নতুন স্কুল। প্রথমেই আসা যাক বালিকা বিভাগে। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ময়মনসিংহের পাঁচরুখী স্কুল। দলের কোচ মকবুল হোসেন বলেন, ‘দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পেরেছি বলে ভাল লাগছে। এর আগে কলসিন্দুরকে আমি তিনবার জিতিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে বেইমানি করার পর মফিজ কোচ সেজে গেছে। পরে আমি ওই স্কুল ছেড়ে এটা ধরেছি। গতবার রানার্সআপ হয়েছি, এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। হাইস্কুল এবং প্রাইমারীতে কলসিন্দুর আমাদের কাছে হেরেছে।’ মকবুল জানানÑ প্রায় ৪-৫ মাস ধরে একটানা অনুশীলন করেছে তার স্কুল দল। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সবমিলিয়ে ১৭টি ম্যাচ খেলেছে পাঁচরুখী স্কুল। ‘দলটা গড়তে অনেক কষ্ট করেছি। ঘর থেকে মেয়েদের বের করাটা অনেক কঠিন ছিল। তিন মাস তো একটা মেয়েকে আসতেই দেয়নি। তার মামাকে গিয়ে রাজি করানো হয়েছে। অনেকটা জোরজবরদস্তি করে এনেছি। আজকে দেখলাম ওই মেয়ের ফিটনেসই সবচেয়ে ভাল ছিল।’ কলসিন্দুর স্কুলের মারজিয়া, মারিয়া মান্দা, সানজিদা, তহুরা, শামসুন্নাহার সিনিয়র ও জুনিয়র, সাজেদা সবাই মকুবলের হাতে তৈরি। পাঁচরুখী স্কুলের গোলরক্ষক ও অধিনায়ক প্রমি আক্তার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তার ভাষ্য, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে খুবই আনন্দিত। আগামীতে জাতীয় দলে খেলতে চাই। শামসুন্নাহার, মারিয়া মান্দা আপুদের মতো বড় খেলোয়াড় হতে চাই।’ রানার্সআপ রংপুরের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের টেপুরগাড়ী বিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোচ আলীম আল সাঈদ খোকন ফাইনালের আগে প্রেসবক্সে এসে গর্বভরে জানিয়ে গিয়েছিলেন, ‘এই স্কুলকে আমি ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন করাই। লিখে দিনÑ এবারও আমরা চ্যাম্পিয়ন হব, কমপক্ষে ৫-০ গোলে জিতব। এই আসরে একমাত্র সেমিফাইনাল বাদে আমরা সব ম্যাচ খেলেছি হাফ টাইম পর্যন্ত। কেননা ওই খেলাগুলোতে আমরা এত বেশি গোল করি যে প্রতিপক্ষ দলগুলো দ্বিতীয়ার্ধে আর খেলতেই রাজি হয়নি।’ এর আগে ২০১২ সালে রংপুরের পালিচড়া স্কুলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন আলীম। ওই দলে খেলা মৌসুমী, রতœা, স্বপ্না আজ জাতীয় দলে খেলে। এছাড়া ২০১১ সালে ওই স্কুলই তার অধীনে রানার্সআপ হয়েছিল। এছাড়া বালক বিভাগে ২০১৫ আসরে রানার্সআপ করিয়েছিলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মরিচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। বালক বিভাগের চ্যাম্পিয়ন দল সিলেট বিভাগের জৈন্তাপুরের হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। দলের কোচ শরীফউদ্দিন বলেন, ‘হরিপুর স্কুল এই আসরে ২০১১ সালে তৃতীয় হয়েছিল। আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের একতা, আত্মবিশ্বাস এবং স্কুলের শিক্ষকদের ঐকান্তিক সাহায্য-প্রচেষ্টা। ‘আমরা এই আসরকে ঘিরে ছয় মাস অনুশীলন করেছি।’ হরিপুর স্কুলের সালমান আহমেদ ফাইনালের জয়সূচক গোলদাতা। তার ভাষ্য, ‘আমরা এই আসরে সবমিলিয়ে ১৩টা ম্যাচ খেলেছি। আশা করতে পারিনি এত বড় টুর্নামেন্টে খেলব। ভবিষ্যতে অনেক বড় ফুটবলার হতে চাই। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে চাই।’ রানার্সআপ রংপুর বিভাগের নীলফামারীর দক্ষিণ কানিয়ালখাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোচ জিতেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘২০১১ সালে জাতীয় পর্যায়ে এই স্কুলের কাছেই হেরেছিলাম। আজ আবারও হারলাম। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা ১৫ দিন ক্যাম্প করেছি। আর্থিক সমস্যার কারণে ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় আসার আগে প্রাায় দেড় মাস আবাসিক ক্যাম্প করে। আমরা যে আগে ম্যাচগুলো খেলেছি, তার ৫০ ভাগও আজ খেলতে পারেনি ছেলেরা। একটা মানসিক কষ্টে ছিল বিকেলে যখন মহড়া দেই, তখন রাত ১২টার মধ্যে যাই, খেলোয়াড়রা বিশ্রাম কম পেয়েছে। দলের অধিনায়ক আমিন ইসলামের অভিমত, ‘খেলায় তো হারজিত আছে। হেরেছি বলে আমাদের মন খারাপ নেই। শেখ হাসিনার কাছ থেকে কিছু নিতে পেরেছি বলে ভাল লাগছে। আমি ক্লাস থ্রি থেকে ফুটবল খেলি।’
×