ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ বছর অতিবাহিত

ফটিকছড়িতে সেচ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কবে?

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২ এপ্রিল ২০১৯

ফটিকছড়িতে সেচ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, ১ এপ্রিল ॥ উপজেলায় কোটি টাকায় নির্মিত রোসাংগিরি-নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্প ১৮ বছরেও কাজে আসছে না কৃষকদের। ৩ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে সেচ প্রকল্পের মাত্র আধা কি.মি. অসম্পন্ন কাজের জন্য হাজার হাজার কৃষক তাদের কয়েক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার ও তৎকালীন রোসাংগিরি ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল আলমের প্রচেষ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি টাকার কাজ করা হয়। উক্ত প্রকল্প কৃত্রিম খালের দুই পাশ ও নিচে পাকাকরণের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কি.মি. কাজ সম্পন্ন হয়। বাকি আধা কি.মি. কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দীর্ঘ ১৮ বছরেও চালু হয়নি প্রকল্পটি। এই সেচ প্রকল্পে সরকারী খাল করার আগে কৃষকরা নিজেরা পাম্প মেশিনের মাধ্যমে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে ড্রেনের মাধ্যমে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করত। পরবর্তীতে সরকারীভাবে আরও অধিক জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু, গত ১৮ বছরেও এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। সে কারণে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের কয়েক শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় ৩ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে প্রকল্পটি হালদা নদী থেকে ২৪টি পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলে খালের মাধ্যমে প্রবাহিত করে মরা ধুরুং নামক খালে এ অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত করে রোসাংগিরি ইউনিয়ন ছাড়াও নানুপুর ইউনিয়ন, নিশ্চিন্তাপুর, সমিতিরহাট ইউনিয়ন সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তিন পর্যায়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার কাজ করার পর বাকি আধা কিলোমিটার কাজ শেষ না করায় এই সেচ প্রকল্পটি চালু করা যায়নি। এ প্রকল্পের জন্য যে পাম্প হাউসটি নির্মাণ করা হয় তাও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় ক্রমশ ঃ ভেঙ্গে পড়ছে। বর্তমানে পাম্প হাউসটি অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য লোহার বসানো ২৪টি পাইপ বর্তমানে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ইট খুলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় কৃষক মোহরম আলী, ফিরোজ মিয়া, নেছার আহমদ, ফয়েজ মিয়া, এমরান, ইদ্রিচ, কাসেম আলীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে কাজ সম্পূর্ণ না করায় সরকারী পাম্প হাউসটি চালু করা হচ্ছে না। তারা অতি দ্রুত কাজ শেষ করে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা করার জন্য পাউবোর প্রতি জোর দাবি জানান। স্থানীয় মেম্বার সেলিম জানান, ২০০১ সালে প্রথম পর্যায়ের বাঁশখালির সাবের কন্ট্রাক্টর, তারপর সাতকানিয়ার সরোয়ার চেয়ারম্যান, ২০০২ সালে ফটিকছড়ির গিয়াস উদ্দিন কাজ করেন। পাম্প হাউসের কাজ করেন কুমিল্লার আলম কন্ট্রাক্টর। সেচ প্রকল্পটির কাজ অসমাপ্ত থাকায় বিগত ১৮ বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আগে যে জমিতে স্থানীয়ভাবে চাষাবাদ হতো এই প্রকল্পের কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে, রোসাংগিরি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেব আল সালেহীন বলেন, আগে কৃষকরা নিজেরা পাম্প বসিয়ে চাষাবাদ করত। সরকারের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় আরও অধিক পরিমাণ জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য। সে লক্ষ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যানেলটি করা হয়। কিন্তু, শেষ পর্যায়ের কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকার শত শত কৃষক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে প্রকল্পটির কাজ শেষ করে চালু করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম পৌর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলী আফাজ চৌধুরী জানান, বর্তমানে সেচ প্রকল্পটির আধা কিলোমিটার কাজ শেষ না করায় সেচ প্রকল্পটি চালু করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাজ শেষ করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
×