ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকে বৈশাখের রং গ্রামীণ রুচি, শিকড়ে ফেরার আকুলতা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১ এপ্রিল ২০১৯

পোশাকে বৈশাখের রং  গ্রামীণ রুচি, শিকড়ে  ফেরার আকুলতা

মোরসালিন মিজান ॥ বৈশাখ আসছে। বাঙালীর স্বরূপে ফেরার বৈশাখ। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দিকে এখন অত চোখ নেই। প্রকৃত মনোযোগ বাংলা বর্ষপঞ্জির দিকে। হ্যাঁ, আর মাত্র কয়েকটা দিন। এরপরই ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। বাংলা নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালী। আর এ প্রস্তুতির প্রধানতম অনুষঙ্গ পোশাক। ইতোমধ্যে কিছু বাজারে এসেছে। অল্প স্বল্প করে প্রদর্শিত হচ্ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে শোরুমগুলো ভরে উঠবে। পাওয়া যাবে নতুন প্রায় সব ডিজাইন। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। পহেলা বৈশাখে নারীরা প্রধানত শাড়ি পরেন। পুরুষেরা পাঞ্জাবি। বাঙালী ঐতিহ্যের এ দুটি পোশাকে দারুণ রঙিন হয়ে ওঠে রমনার বটমূল। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। তরুণীদের কেউ কেউ থ্রিপিস ফতুয়া পরেন। তরুণরা বিকল্প হিসেবে বেছে নেন টিশার্ট। শার্ট। সব মাথায় রেখে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। অসংখ্য ডিজাইন। যার যেমন পছন্দ বেছে নিতে পারবেন। গত কয়েকদিন ঢাকার মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখের পোশাকে এবারও প্রাধান্য পেয়েছে দেশীয় কাপড়। গরমের কারণে যতটা সম্ভব হাল্কা ও আরামদায়ক কাপড় বেছে নেয়া হয়েছে। রং যথারীতি সাদা ও লাল। মাত্র দু’টি রং। বহুবিধ ব্যবহার। কাপড়ের ওপরে স্ক্রিনপ্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ, এপ্লিকের কাজ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে পুঁতি জরি ইত্যাদিও। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে নিপুণ, কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, নগরদোলা, দেশাল, রং বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, বিবিয়ানা, সাদাকালো, অন্যমেলাসহ কিছু প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র আবেদন সৃষ্টি করতে পেরেছে। বৈশাখ সামনে রেখে বিশেষভাবে কাজ করেছেন তাদের ডিজাইনাররা। ফ্যাশন হাউসগুলোকে একসঙ্গে পাওয়া যায় বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে। ‘দেশী দশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মে সমবেত হয়েছেন উদ্যোক্তারা। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রমে বৈশাখের রং ধারণ করছে শোরুমগুলো। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে বৈশাখী পোশাক তুলে ধরার প্রয়াস। ভেতরটাও সুন্দর সাজানো। অন্যান্য রং একটু পেছনে ঠেলে দিয়ে সামনে রাখা হয়েছে সাদা ও লাল। বিবিয়ানার শোরুমের সামনে চমৎকার সব শাড়ি। জমিন সাদা। সাদার ওপর কড়া লাল রঙের ব্লক প্রিন্ট এত আকর্ষণ করে যে, চোখ সরতে চায় না। সাদার ওপর কালো ব্লকের কাজ একইরকম আকর্ষণ করে। রং বাংলাদেশের শোরুমে হাফ সিল্ক শাড়ি। সফট কটন। গরমে পরার জন্য খুব উপযোগী। পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঁথা স্টিচ। লাল সাদা ও নীল রঙের কম্বিনেশন লক্ষ্য করা যায় এখানে। আউটলেটের ইনচার্য গৌতম জানান, বৈশাখ সামনে রেখে ২০ থেকে ২৫ ডিজাউনের পাঞ্জাবি করেছেন তারা। এরই মাঝে কিছু ডিজাইন এসেছে। বাকিগুলো আজ চলে আসবে বলে জানান তিনি। দেশালের কাপড়ের ওপর স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক, এপ্লিকের কাজ। পাখি হাতি মাছ বাঘ ইত্যাদির মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। শোরুমের দায়িত্বে থাকা আশফাক জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এমন মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে তাদের বৈশাখের পোশাক শোরুমে তোলা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ থেকে মোটামুটি সব ডিজাইন পাওয়া যাবে। বৈশাখ উপলক্ষে অনেকে আবার ফ্যামিলি সিরিজ করেছেন। স্বামী স্ত্রী সন্তান সবার এক রং আর অভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। এটিও বেশ জনপ্রিয় এখন। বিভিন্ন দোকানে সাত থেকে আটটি করে ফ্যামিলি সিরিজ পাওয়া গেল। আলাদা করে দৃষ্টি কাড়ে ফ্যাশন হাউস সাদাকালো’র পোশাক। এখানে সাদা শাড়ির গায়ে জামদানীর মোটিফ। বাচ্চা মেয়েদের জন্য দারুণ সব জামা তৈরি করা হয়েছে। হাতের অংশের কাটিং গ্রামীণ ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। দেশীয় পোশাকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট। এখানে আরও আগে থেকে দেখা যাচ্ছে বৈশাখের পোশাক। কেনাকাটাও মোটামুটি শুরু হয়েছে। নামকরা ব্র্যান্ড নিত্য উপহারে গিয়ে দেখা যায়, অনেকগুলো নতুন শাড়ি তোলা হয়েছে। কোনটির জমিনে বাংলাদেশ। কোনটির আঁচলে গ্রামীণ গল্পগাঁথা। বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পভাষায় তুলে ধরা হয়েছে বৈশাখকে। কাপড়-ই- বাংলা’র শোরুমে মেয়েদের থ্রিপিস। ফতুয়া। বেশ রঙিন। দূর থেকে চোখে পড়ে। কাটিংয়েও কিছু ভিন্নতা আছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বিথুন জানান, বৈশাখের পোশাক ধীরে ধীরে আসছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে সব চলে আসবে। এদিকে ক্রেতারাও পছন্দের পোশাক খুঁজতে শুরু করেছেন। মগবাজারে আড়ংয়ের শোরুমে কথা হচ্ছিল সুনন্দা ও সুচন্দার সঙ্গে। দুই বোন আগে ভাগে বৈশাখের কেনাকাটা করতে চলে এসেছিলেন। কেন? জানতে চাইলে সুনন্দার চটজলদি উত্তর : আগে না এলে ভাল ডিজাইনের জামাগুলো বিক্রি হয়ে যায়। আর সুচন্দা বলছিলেন, সবচেয়ে সুন্দর জামা কিনতে হলে আগে ভাগেই আসতে হয়!
×