নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৩১ মার্চ ॥ মাদারীপুরে এক সৎমায়ের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সেতু আক্তার (১৩)। সৎমায়ের গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় দগদগে ঘা অবস্থায় রবিবার তাকে উদ্ধার করেছে মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন। খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার সৎমা সাবিনা ও সৎভাই সাব্বিরকে আটক করেছে। এ মর্মস্পর্শী ও অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্তাপাড়া গ্রামের রিয়াজ শিকদারের প্রথম স্ত্রী রেহানা বেগম ৩ ছেলেমেয়ে রেখে প্রায় ৯ বছর আগে মা মারা যায়। প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকতেই রিয়াজ শিকদার সাবিনা নামের এক মহিলাকে বিয়ে করে। এই বিয়ের পরেই সেতু ও তার ভাই-বোনের ওপর স্টিমরোলার চালাতে থাকে তার সৎমা সাবিনা। সৎমা সাবিনা কারণে অকারণে প্রতিদিন বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতন চালাতে থাকে তাদের ওপর। বাবা রিয়াজ শিকদার এসবের খেয়াল রাখত না। সে ঘুম থেকে উঠে সকালে পান্থাপাড়া বাজারে ভাঙ্গারীর দোকানে চলে যেত আর বাড়ি ফিরে আসত অনেক রাতে।
গত ২৪ মার্চ রাতে সামান্য কারণে ছোট্ট এই শিশুটির ঘাড়, কনুই, হাতসহ ১৩টি স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে দগ্ধ করে সৎমা সাবিনা। শিশু সেতু তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে। এমনকি তার বাবাকেও জানায়নি। শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে গত এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে।
কিন্তু বিধিবাম! চোখ এড়ায়নি এলাকাবাসীর। শিশুটির সারা শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা দেখে আঁতকে ওঠে প্রতিবেশীরা। প্রতিবাদ জানায় এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। এ খবর পেয়ে এলাকার মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন রবিবার সকালে সেতুকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা বাজারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরই মধ্যে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ গিয়ে শিশু সেতুর সৎমা সাবিনা বেগম ও সৎভাই সাব্বিরকে আটক করে। ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী নির্যাতিত সেতু বলে, প্রায় ৯ বছর আগে আমার মা রেহানা বেগম মারা যায়। মা জীবিত থাকতেই বাবা পুনরায় সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। এরপরেই আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়া। সৎভাই সাব্বির ও সৎনানির প্ররোচনায় সৎমা সাবিনা গরম খুন্তি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়।
আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তাদের কোন মায়া হয়নি। এ সময় সৎভাই আমার হাত চেপে ধরে। আমাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়নি। আমি কারো কাছে অভিযোগ করলে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। এ ভয়ে কাউকেই জানাইনি।