ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ইনিংসে আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১১ মার্চ ২০১৯

প্রথম ইনিংসে আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র

মিথুন আশরাফ ॥ তিনদিনেই কি তাহলে ম্যাচের ফল বের হয়ে যাবে? প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা আবার যে ব্যর্থতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে ফল মিলেও যেতে পারে। হ্যামিল্টন টেস্টে প্রথম ইনিংসে যে দশা হয়েছিল, ওয়েলিংটন টেস্টেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। এবারতো হ্যামিল্টন টেস্টের চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়েছে। ২১১ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এরপর নিউজিল্যান্ডও যে খুব ভাল কিছু করতে পেরেছে এমনটি নয়। বৃষ্টিতে তৃতীয়দিনের খেলা বন্ধ হওয়ার আগে আবু জায়েদ রাহীর গতির তোপে পড়ে ২ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা ৩৮ রান করতে পেরেছে। এখনও বাংলাদেশ থেকে ১৭৩ রানে পিছিয়ে আছে। এখন নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ওপরই সব নির্ভর করছে। যদি নিউজিল্যান্ড বড় স্কোর গড়তে পারে তাহলে দুইদিন অনায়াসেই শেষ হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে একটু ভাল করতে পারলেই ম্যাচ ড্র হবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডও যেভাবে প্রথম ইনিংসে বিপদে পড়েছে তা যদি বজায় থাকে, কিউইরা যদি অল্প রানে গুটিয়ে যায়, এরপর বাংলাদেশও যদি দ্রুতই অলআউট হয়ে যায় তাহলে বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। সেটি নিউজিল্যান্ডের বেলাতেও ঘটতে পারে। দুইদিন বৃষ্টিতে খেলাই হয়নি। বলই মাঠে গড়ায়নি। এমনকি টসও হয়নি। তৃতীয়দিনে গিয়ে টস হয়েছে। নিউজিল্যান্ড জিতেছে। আগে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়েও পাঠিয়েছে। বৃষ্টিহীন শেষ সেশন পর্যন্ত বলও মাঠে গড়িয়েছে। তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলাম মিলে আবারও বড় কিছু করার আশা দেখান। দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ৭৫ রানের জুটিও গড়েন। যখন দলের ৭৫ রান হয় তখনই সাদমান (২৭) আউট হয়ে যান। বরাবরের মতো এবারও জুটি এবং ব্যক্তিগত ইনিংস কোনটিই বড় করতে পারেননি। তবে তামিমের সঙ্গে আবারও ৫০ উর্ধ জুটি গড়েছেন। তাতে টানা তিন ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে গত ১৯ বছরের মধ্যে প্রথমবার টানা তিন ইনিংসে ৫০ উর্ধ রান করার কৃতিত্ব তামিম ও সাদমানের হয়ে গেছে। দুইজন মিলে প্রায় ২১ ওভার পর্যন্ত কি অসাধারণ ব্যাটিং করলেন। কিন্তু যেই সাদমান আউট হলেন শুরু হয়ে গেল সেই ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র। যেখানে ৭৫ রান পর্যন্ত কোন উইকেট পড়েনি সেখানে ১২৭ রান হতেই ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়। উইকেটের যে অবস্থা দেখা গেছে, সবুজ উইকেট; তাতে মনে হয়েছিল ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনারদের সামনে কুলিয়েই উঠতে পারবেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তামিম-সাদমান মিলে যেভাবে দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং করলেন, নিউজিল্যান্ড পেসারদের সুইং, বাউন্স, শর্ট বল আর গতির সামনে যেভাবে নিজেদের মেলে ধরেন তাতে মনে হয়েছিল প্রথম সেশন তারা দুইজনই শেষ করবেন। কিন্তু তা হয়নি। সাদমান আউট হতেই সব যেন এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। ওয়াগনার দেরিতে বল হাতে নিয়েই শুরু করে দেন তোপ। ওয়াগনারের শর্ট বলে মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুনতো কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাজঘরে ফিরতে বাধ্য হন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই অবশ্য তামিম হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। ৮১ বলে ৫০ রান করেন তামিম। তিনিই একমাত্র প্রথম ইনিংসে ভরসা হয়ে থাকেন। হ্যামিল্টন টেস্টে তার সেঞ্চুরিতেই প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান করা গিয়েছিল। এবার ওয়েলিংটন টেস্টেও তার ৭৪ রান না হলে ২০০ রানও হয়তো হতো না। দলের ১৩৪ রানের সময় যখন তামিম আউট হন এরপরতো একজন ব্যাটিংয়ে নামেন, কিছুক্ষণ উইকেটে অনেক চেষ্টায় টিকে থাকেন, কিছুক্ষণ পরই আবার আউট হয়ে যান। এভাবেই চলতে থাকে। মাঝপথে সৌম্য সরকার (২০) ও লিটন কুমার দাস (৩৩) একটু নিজেদের সামলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলকে কিংবা নিজের ইনিংসকে বহুদূর আর নেয়া যায়নি। ৭৫ রানে কোন উইকেট পড়েনি। সেখান থেকে আর ১৩৬ যোগ হতেই ১০ উইকেট খতম হয়ে যায়। ৬১ ওভারের বেশি খেলতেও পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। টানা তিন ইনিংসেই ৫০ উর্ধ রান করার কৃতিত্ব দেখানো তামিম একাই করেন ৭৪ রান। বাকি সব ব্যাটসম্যান মিলে ১৩৭ রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেন। তামিম ইকবালের খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। দুইদিন বৃষ্টিতে খেলা না হওয়াতে আরও ফিট হওয়ার সুযোগ পান। তামিম শেষ পর্যন্ত খেলেন। তবে মুশফিক খেলতে পারেননি। দুটি পরিবর্তন নিয়েও ওয়েলিংটন টেস্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের পরিবর্তে মুস্তাফিজুর রহমান এবং স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবর্তে তাইজুল ইসলাম একাদশে সুযোগ পান। কিন্তু মুস্তাফিজ ও তাইজুল বল করারই সুযোগ পাননি। কিভাবে পাবেন, নিউজিল্যান্ড যে ১১.৪ ওভার খেলার সুযোগ পেয়েছে, তাতেই যে রাহীর দ্যুতি দেখার মিলে গেছে। ৮ রানেই নিউজিল্যান্ডের ২ উইকেট শিকার করে নিয়েছেন রাহী। জিত র‌্যাভাল ও টম লাথামকে আউট করে দিয়েছেন। তবে এরপর আর কোন উইকেট মিলেনি। কেন উইলিয়ামসন (১০*) ও রস টেইলর (১৯*) মিলে ব্যাটিং করছেন। আজ ম্যাচের চতুর্থদিনে এ দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন। তৃতীয়দিনে গিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথমদিনের খেলা দেখার মিলেছে। এদিন আবার প্রায় ৭৩ ওভারের মতো খেলা হয়েছে। আধাঘণ্টা আগে খেলা শুরু হলেও ৯০ ওভারও খেলা হয়নি। ৯০ ওভার হতে আরও ১৭ ওভার বাকি ছিল। যদি এই ১৭ ওভার হতো তাহলে হয়তো নিউজিল্যান্ডের আরও উইকেট পড়তে পারতো। তখন দুই দলেরই অবস্থা সমান সমান হতে পারতো। কিন্তু এ মুহূর্তে টেস্টে নিউজিল্যান্ডই এগিয়ে আছে বলা চলে। তা সম্ভব হয়েছে আসলে প্রথম ইনিংসে আবার বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠায়।
×