ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১০ মার্চ ২০১৯

২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন

দেখতে দেখতে স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮টি বছর অতিক্রম করছে দেশ। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে এই দিবসটি এখনও উপেক্ষিত। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া ও বিরোধী দলীয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর যোগসাজশে পাক সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সার্চলাইট অপারেশনের নামে এদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালী দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক দেশটির অভ্যুদয় ঘটে। পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই দীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালীকে হত্যা ও চার লাখের বেশি মা-বোন ধর্ষণের শিকার হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসার পর- যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ আছে এমন প্রায় ৩৬ হাজার রাজাকার, আলবদর, আলশামসের বিচারের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী, নির্দেশ দাতা ও সরাসরি হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে যুক্ত চূড়ান্তভাবে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য মনোনীত করেন। সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের অপরাধের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ১৯৫ সেনাকে নিজ দেশে নিয়ে বিচার করবে এই মুচলেকা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা বিচার করেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর বেশিরভাগই গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, সম্পদের হিস্যাসহ বিভিন্ন দাবি তোলে। সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগে শুরু থেকেই বিচলিত ছিল পাকিস্তান। এর পাশাপাশি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গ্যারি জে ব্র্যাসের লেখা গ্রন্থ ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম–নিক্সন, কিসিঙ্গার এ্যান্ড এ্যা ফরগটেন জেনোসাইড’ পাকিস্তানী গণহত্যার তথ্য বিশ্বের সামনে নতুন করে তুলে আনে। আর এতেই পাকিস্তানের গাত্রদাহ শুরু হয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তিও তাদের এদেশীয় লেবাসধারীরা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানী শাসক, সেনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ এবং এদেশীয় জামায়াত-শিবির এখনও মনে করে বাংলাদেশ সৃষ্টি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফসল বা জামায়াতের ভাষায় গণ্ডগোলের ফসল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯৭১ এ সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল তার দ্বিতীয় নজির নেই। জাতির গর্ভ করা ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে এখনও কেউ কেউ যখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন দুঃখ হয়। তখন পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধীরা তা লুফে নিয়ে মাঠে নামবে এটাই স্বাভাবিক। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর তত্ত্বাবধানে ওই দেশটির লেখক জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ‘ক্রিয়েশন অফ বাংলাদেশ’ মিথস এক্সপ্লডেড শিরোনামে একটি বই লিখিয়েছে, যে বইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে– পঁচিশে মার্চের গণহত্যার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী। তারাই নিরীহ নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। বইটির নিচে ওই সময়ের বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পত্রিকায় ’৭১-এর গণহত্যার যেসব ছবি মুদ্রিত হয়েছিল, সেসব ছবি বইটিতে সঙ্কলিত হয়েছে এবং প্রতিটি ছবির নিচে লেখা হয়েছে এসব হত্যাকাণ্ড মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট। বইটিতে আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের এসব মিথ্যাচার দেখে যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালী বিক্ষুব্ধ হবে- এটাই স্বাভাবিক। মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচার যতই করুক না কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৭১ সালের গণহত্যার তথ্য প্রমাণের অভাব নেই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে সে সময়ে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশনের খবরগুলোর আর্কাইভ। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা হেরাল্ড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে, ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাক বাহিনী। ভারতের ইন্ডিয়ান টাইমসের রিপোর্টে আছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। মার্কিন সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ভারতে শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানী সৈনিকদের বিরুব্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। টাইমস ম্যাগাজিনের ড্যান কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানী ক্যাপ্টেনের বরাত দিয়ে লিখেছেন– we can kill any one for anything . We are accountable to no one. বিশ্বখ্যাত এই পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল– It is the most incredible calculated thing since the days of the Nayis in Poland . আন্তর্জাতিক মহলের মতে ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী তিন মিলিয়ন বা ত্রিশ লাখ বাঙালীকে হত্যা করা হয়েছে। এই সংখ্যার সমর্থন রয়েছে Encyciopedia Americana and National Geographic Magayine-এ। এসব রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাজি বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। এই গণহত্যা সম্পর্কে পাকিস্তানী জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে লিখেছেন– Paint the green of East Pakistan red অর্থাৎ বাংলার সবুজ মাঠকে লাল করে দিবেন। একজন মার্কিন গবেষক Rudolph Joseph Rummel তার রচিত Statistics of Democide (১৯৯৮) গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন “Statistics of Pakistan Democide .Estimates Caculation and sources” শীর্ষক নিবন্ধটি। এই নিবন্ধে Rummel তার আবিষ্কৃত গণহত্যা পরিসংখ্যান পদ্ধতি অনুসারে দেখিয়েছেন যে- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ ৩ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন। ১৯৭১ সালের UNHRC (ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিশন) রিপোর্ট অনুযায়ী মানবসভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ৬০০০ থেকে ১২০০০ মানুষ তখন খুন হয়েছিল বাংলাদেশে। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ গড়। ১৯৭২ সালের ২৪ জানয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বেঙ্গলিজ ল্যান্ড অ্যা ভাসট সিমেটারি’ (বাঙালীর ভূখণ্ড এক বিশাল সমাধিক্ষেত্র) মার্কিন সাংবাদিক সিডনি এইড শানবারগ যুদ্ধের পর পর বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিডনি শানবারগ দেখতে পান, বাংলাদেশের প্রতিটি শহর, প্রতিটি থানায় রয়েছে বধ্যভূমি, যেখানে পাকিস্তানী সেনারা যুদ্ধের ৯ মাসের প্রতিদিন বাঙালীদের হত্যা করেছে। পাকিস্তানী সেনারা এভাবে লাখ লাখ বাঙালীকে হত্যা করেছে। হামুদুর কমিশন রিপোর্ট- বাঙালী গণহত্যার দলিল। ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের ১০ দিন পর ২৬ ডিসেম্বর পাক সরকারের নির্দেশে প্রধান বিচারপতি-হামুদুর রহমানকে প্রধান ও অন্য দুই বিচার পতিকে নিয়ে ব্যাপক ক্ষমতাশালী এক কমিশন গঠিত হয়েছিল। কমিশন যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি মিলিয়ে দুই শত পঁচাশি জনের সাক্ষ্য এবং তথ্য প্রমাণ নির্দেশিকা যাচাই-বাছাই শেষে ১৯৭৪ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। যদিও কমিশন ভিকটিম বা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষ্য গ্রহণ না করলেও ৬০টি অধ্যায় ও তিন লাখ শব্দ সংখ্যার এই কমিশনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছে। এসব অপূর্ণতা সত্ত্বেও হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি চারিত্রিক দুর্বলতাগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অভিযানের শুরু থেকেই বাংলাদেশে পোড়ামাটি নীতি নেয়; যেখানে তারা মানুষ চায়নি, মাটি চেয়েছে। এই কথটি শুধু রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে লেখা ছিল না, ছিল পাকিস্তানের অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তার অন্তরে। জেনারেল নিয়াজির আগে খাদিম হোসেন রাজা ছিলেন ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডিং অফিসার। তিনি আ স্ত্রেনজার ইন মাই ওউন কান্ট্রি পাকিস্তান (১৯৬৯-১৯৭১) বইয়ে উত্তরসূরির বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, যাতে নিয়াজি বলেছেন , ‘এই হারামজাদা জাতি জানে না আমি কে? আমি তাদের জাত বদলে দেব।’ তিনি বাঙালীকে বোঝাতে পারেননি, বাঙালীই প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করিয়ে তাকে ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে। কমিশনের রিপোর্টে রাও ফরমান আলী, জে. টিক্কা খানকে দায় মুক্তি দিয়ে শুধু গুরুতর অভিযোগে জে. নিয়াজি, মুহাম্মদ জামসেদ, এম রহিম খান, জি এম বারিক সিদ্দিকি, মুহাম্মদ হায়াতসহ সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে সামরিক আইনে বিচারের সুপারিশসহ বাকিদের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। এবার দেখা যাক, জাতিসংঘ সনদ কি বলে? জাতিসংঘে গণহত্যা বিষয়ক সনদে অপরাধের যে বিবরণ রয়েছে, তার সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার পুরোপুরি মিল রয়েছে। গণহত্যা প্রতিরোধ ও শান্তি বিষয়ক ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সনদের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জেনোসাইড বলতে বোঝাবে কোন জাতি বা জাতিসত্তা, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের অংশবিশেষকে বা পুরোপুরি ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত নিম্নবর্ণিত কাজের যে কোন একটি– ক. জাতি বা গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা , খ. জাতি বা গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর মানসিক বা শারীরিক ক্ষতিসাধন, গ. উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে জাতি বা গোষ্ঠীর ওপর এমন এক জীবনযাত্রা আরোপ যা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে গোষ্ঠীর ধ্বংস ডেকে আনবে, ঘ. জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মপ্রথা নিরোধের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া, ঙ. জাতি বা গোষ্ঠীকে জোর করে অন্য জাতি বা গোষ্ঠীতে রূপান্তর। জাতিসংঘ প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বরে গণহত্যা প্রতিরোধ ও গণহত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশ মনে করে, এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি খুবই দরকার। পাকিস্তান সরকার ও তাদের এদেশীয় লেবাসধারীদের অনেকে সাম্প্রতিক ১৯৭১ সালের সংঘটিত গণহত্যার কথা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করার চেষ্টায় এই স্বীকৃতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানী শাসক ও কতিপয় রাজনৈতিক দল, তাদের এদেশীয় দোসরদের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে বিবৃতি দেয় এবং পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ করে। পাকিস্তান এখানেই থেমে থাকেনি, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক হস্তক্ষেপের পাশাপাশি জঙ্গী মদদও দিয়ে যাচ্ছে। তাই পাকিস্তানের এই ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার রুখে দিয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা বাংলাদেশের জন্য একটু কঠিন কাজ হতে পারে। কেননা, ১৯৭১ সালে সব রাষ্ট্রের অবস্থান বর্তমানের মতো ছিল না। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল। আজ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে জাতিসংঘ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা ও মুসলিম বিশ্ব তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের পাশে ছিল না। আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গা বিতারণ ও হাজার অধিক রোহিঙ্গা নিধনে জাতিসংঘসহ সব রাষ্ট্র গণহত্যার স্বীকৃতি দিচ্ছে। অথচ, ১৯৭১ সালে রোহিঙ্গাদের চেয়ে ১০গুণ বাঙালী বিতারণ ও ৩০০০ গুণ বাঙালী নিধনে তারা ছিল নীরব। কাজেই তাদের স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে গণহত্যা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার পাশাপাশি জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা জাতিসংঘ ও জেনেভায় যোগাযোগ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল দেশ বাংলাদেশর পাশে ছিল সেই রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি সবার আগে আদায় করতে হবে। এটা হবে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। তারপর বাকি দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ, নিউইয়র্ক প্রবাসী
×