ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে চলছে নানা অনিয়ম

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

যশোরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে চলছে নানা অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বিতরণ নিয়ে চলছে নানা প্রকার হয়রানি। এক বা দুই নয়, সাতটি ইস্যুতে নাজেহাল স্মার্ট কার্ড সংগ্রহকারী সাধারণ মানুষ। কার্ড বিতরণে মাঠ নিয়েও চলছে অর্থ বাণিজ্য। হারানো কার্ডে সার্ভিস চার্জে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে বাড়তি পয়সা। এমনই নানা অভিযোগ ভুক্তভোগীরা করলেও এগুলো সঠিক না বলে দাবি করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ৫ লাখ ১০ হাজার নাগরিকের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে। ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের কার্ড বিতরণ চলছে রূপদিয়া শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে। নরেন্দ্রপুরের কাজ চললেও বাকি আছে বসুন্দিয়া ইউনিয়ন। প্রতিটি ইউনিয়নের কার্ড বিতরণে একাধিক ভেন্যুতে কার্ড বিতরণ হয়েছে। চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। কার্ড বিতরণের সময় প্রতিটি ভেন্যু একটি চক্র মোটা অঙ্কের টাকায় কন্ট্রাক্ট নিয়ে কার্ড নিতে আসা সাধারণ মানুষকে স্ক্যান, কালার ফটোকপি, লেমিনেটিংসহ অন্যান্য কাজ ওই মাঠে উপস্থিত লোকদের কাছ থেকেই করানোর জন্য বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই না, মাঠে গিয়ে এনআইডি নম্বর বা নাম দিয়ে একটি টোকেন নিতে হচ্ছে সকলকে। যা পরবর্তীতে লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত বুথে গিয়ে দেখালে কার্ড দিয়ে দেয়া হয়। ওই টোকেনটি নিতেই এক শ’ টাকা জমা দিতে হচ্ছে মাঠে বসানো বিভিন্ন ডিভাইস পরিচালনাকারী লোকের কাছে। মজার বিষয় হলো কে বা কারা কার্ড বিতরণের আগেই স্থানীয়ভাবে মাঠ ইজারা নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। তাদের লোকই ভোটার তালিকা থেকে নাম বের করার জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে এক শ’ টাকা, ফটোকপি, লেমিনেটিংসহ অন্যান্য কাজে ৫০ থেকে এক শ’ টাকা পর্যন্ত একই সঙ্গে হারানো কার্ড ফেরত নিতে সরকারীভাবে ৩শ’ ৪৫ টাকা নির্ধারিত খরচ হলেও ভেন্যু থেকেই নেয়া হচ্ছে ৫শ’ ৬০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি লাইনে দাঁড়ানো নিয়েও রয়েছে অর্থবাণিজ্য। কেউ যদি লাইনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে না চান তাহলে টাকা দিলেই তার কার্ড ভেতর থেকে এনে নির্ধারিত গ্রাহকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে বা হয়। এদিকে, ওই চক্রই আবার ইজিবাইক, সাইকেল ও ভ্রাম্যমাণ দোকান কোথায় কত টাকার বিনিময়ে বসবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মেজবাহুল ইসলামের ছেলে মানিক উদ্দিন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি তার স্মার্ট কার্ডটি সংগ্রহের জন্য স্থানীয় শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে যান। এ সময় কার্ডটি সংগ্রহ করে বেরিয়ে আসার সময় ওই চক্রের সদস্য একই উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের আবুল খায়ের বিশ্বাসের ছেলে জাহিদ ৫০ টাকা দেয়ার জন্য বলে। মানিক উদ্দিন বলেন, সরকারী কার্ড নিতে তো কোন টাকা লাগার কথা না, তা হলে দিব কেন। এ কথা বললে তার কার্ডটি কেড়ে নিয়ে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ তার। লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় জাহিদসহ ওই চক্রটি স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মাঠটি দখলে নেয়া হয়েছে। শুধু মানিক না, নরেন্দ্রপুর গ্রামের সোলাইমান মোল্লার ছেলে টিপু সুলতান, গোলাম বিশ্বাসের ছেলে হাদিউর রহমান, রবিউল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা বানু, মিজানুর রহমানের স্ত্রী, মৃত মোস্তাক দফাদারের স্ত্রীসহ অনেকেই এ সমস্যার কথা বলেছেন। শুধু নরেন্দ্রপুরে নয় আরবপুর, হৈবতপুর, হাশিমপুরসহ সব ইউনিয়নেই এ ধরনের বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, স্মার্ট কার্ড বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি নিজে তদারকি করছেন। মাঠ কেনা নিয়ে অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও মন্তব্য করেন। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে হারানো কার্ড ফেরত প্রসঙ্গে জানান, ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) হারিয়ে গেলে নির্ধারিত ফি ৩শ’ ৪৫ টাকা নির্বাচন কমিশন বরাবর জমা দিয়ে থাকলে তার চালানকপি সংরক্ষণে রাখতে হবে। নির্ধারিত দিনে ওই ব্যক্তি নির্ধারিত স্পটে গিয়ে চালানের রশিদ জমা দিয়ে স্মার্টকার্ড গ্রহণ করতে পারবেন।
×